শাপলা: এক রক্তাক্ত আমানত
-------------------
মুহাম্মাদ গোলাম রব্বানী ইসলামাবাদী
শিক্ষক, লেখক ও কলামিস্ট
(অনুসন্ধান)
২০১৮ সালের ৪ঠা নভেম্বর, রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মিলিত কওমী মাদরাসার সমন্বয়ে গঠিত হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়াহ কর্তৃক আয়োজিত আলোচিত 'শোকরানা মাহফিল'-এ সরকার-প্রধান শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জয়নাল আবেদীনের দেয়া একটি বক্তব্যকে ঘিরে পুরো কওমী-জগৎ উত্তপ্ত। উক্ত সমাবেশে সামরিক সচিব 'অপ্রাসঙ্গিক' স্বীকার করে দাবি করেন : ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা-চত্বরের ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। সেদিন হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও দাবি করেন, কথিত নিহতদের সরকারিভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা জীবিত এবং মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন। এর আগেও সরকার শাপলা-হত্যাকাণ্ডের অসারতার পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে। তবে সেগুলো তারা বলেছেন নিজস্ব পরিমণ্ডলে। সময়ে-সময়ে সেসব বক্তব্যের প্রতিবাদও করা হয়েছে কওমী আলিম-সমাজ ও হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে। কিন্তু এবারের বিষয়টি ভিন্ন; ভিন্ন তার চরিত্রে এবং পরিবেশে। এবারের প্রসঙ্গটি এসেছে সম্পূর্ণ কওমী আলিম-সমাজের একটি অনুষ্ঠানে এবং তাঁদের একটি অংশের সরব উপস্থিতিতে।উল্লেখ্য, আলোচিত শোকরানা মাহফিলে কওমী আলিম-সমাজের বৃহত্তর অংশ অংশগ্রহণ না করলেও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা কওমী মহলের একেবারে অপরিচিত মুখ নন। আলোচিত মাহফিলটিকে ধর্মীয় বিবেচনা দিয়ে মূল্যায়ন করার চেয়ে কৌশলগত মূল্যায়নে বিবেচিত করাটা আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়। আয়োজকবৃন্দের মাঝেও মাহফিলটিকে ধর্মীয়ভাবে নেবার কোন লক্ষণ প্রস্ফুটিত হয়নি। মাহফিলের প্রস্তুতি, সংবর্ধনার পক্ষ-বিপক্ষ চিহ্নিতকরণ ইত্যাদির দৃষ্টিকোণে মনে হয়েছে, আয়োজকদের কাছে যেমন ছিলো মাহফিলটি কৌশলগত, তেমনি সরকারের কাছেও ছিলো রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক।
প্রথম থেকেই বলা হচ্ছিলো, মাহফিলটি হবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মন্তব্যমুক্ত। কেননা, দাবি করা হয়, মাহফিলটি কওমী শিক্ষা বোর্ড হাইয়াতুল উলিয়া'র—হেফাজতের নয়। কিন্তু মঞ্চে হাযির ক'জন ব্যক্তির রাজনৈতিক বক্তৃতা, মাওলানা রুহুল আমীন সাহেবের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে 'কওমী-জননী' খেতাবের প্রস্তাব, মাওলানা হাসনাত আমিনীর পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসার কামনা এবং সর্বোপরি শাপলার হত্যাকাণ্ড নিয়ে সামরিক সচিবের বিতর্কিত মন্তব্য ইত্যাদি কথিত শোকরানা মাহফিলকে এক ব্যতিক্রমী পরিচয়ে পরিচিত করেছে। সন্দেহ নেই, এসব বক্তব্যে দেশব্যাপী কওমী ও সাধারণে বিতর্ক ও নিন্দার জন্ম দেয়। কওমী-জগতের বহুলাংশ এ ধরনের বক্তব্যকে কওমী স্বকীয়তা ও আত্মমর্যাদাবোধের উপর সরাসরি আক্রমণ বলে মনে করছে।
বিশেষত, সামরিক সচিবের শাপলার ট্র্যাজেডি নিয়ে দেয়া বিতর্কিত বক্তব্য শাপলাকে নতুন করে আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছে। তদুপরি, সামরিক সচিবের বক্তব্য-মন্তব্যের পরে মঞ্চে উপস্থিত কওমী আলিমদের কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য বা প্রতিবাদ না করায় দেশব্যাপী কওমী-অঙ্গনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সাধারণ মনে করছে, কওমী-জগৎ সরকারের ভাষ্যানুসারে শাপলা হত্যাকাণ্ডের অসারতাকে স্বীকার করে নিচ্ছে। বিশেষ করে, কওমী ছাত্র-সমাজ এ ধরনের তীর্যক মন্তব্যকে নীতিগত কারণে মেনে নিতে নারায বলে তৃণমূলে দৃষ্ট হচ্ছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মাহফিল-পরবর্তী আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীসহ হাতে গোনা কয়েকজন কওমী নেতৃবৃন্দ বাদে কেউই সামরিক সচিবের উক্ত বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি। এমন কি তখন পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমীরেরও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব জনাব জয়নুল আবেদীন সেদিন শাপলা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যা বলেন, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। অন্তত এখানে তিনি সরকার-প্রধানের উপস্থিতিতে একটি বার্তা দেশবাসী ও কওমী-জগতকে দিতে চেয়েছেন। তা হলো, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থানগত পরিবর্তন হলেও শাপলার বিষয়ে অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গির কোন পরিবর্তন হয়নি। সরকারের আগের অবস্থান তখনও বহাল। অর্থাৎ, শেখ হাসিনার ভাষায় 'সেদিন কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, ওরা রঙ মেখে শুয়েছিলো, পুলিশ দেখে উঠে দৌড় দেয়'—কথাগুলোই নিখাদ বাস্তবতা। উল্লেখ্য, সামরিক সচিবের মুখনিঃসৃত এ অবস্থানে কওমী-জগৎ অতোটা আহত হননি, যতোটা হয়েছেন উপস্থিত কওমী নেতৃবৃন্দের বিস্ময়কর নীরব-সম্মতিতে।
যা হোক, আমরা আজকে সামরিক সচিবের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করবো। বলাবাহুল্য, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা-চত্বরে সমাবেশ হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে। হত্যাকাণ্ড ঘটে ঐ দিন দিবাগত রাতে। ঘটনার দু'দিন পরে অর্থাৎ, ২০১৩ সালের ৯ মে বৃহস্পতিবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ শাপলার হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য প্রকাশ করে। বিবৃতিটি হেফাজতে ইসলামের নিজস্ব প্যাড ও সাইটে প্রকাশিত হয়। ‘বাস্তবেই কী ঘটেছিল ৫ই মে'র রাত্রে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে?’ শিরোনামে উক্ত ভাষ্যের শুরুতে বলা হয়:
“মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গত ৫ মে দিবাগত রাতের অন্ধকারে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে জড়ো হওয়া ধর্মপ্রাণ আলেম ও নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের (যার একটি বড় অংশ বয়োবৃদ্ধ ও মাদরাসার শিশুছাত্র) ওপর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ, র্যাব ও আধা-সামরিক বাহিনী বিজিবির ১০ হাজার সদস্যের চালানো নৃশংস হত্যাযজ্ঞকে বিশ্ববাসী গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করলেও বাংলাদেশ সরকার তা বেমালুম অস্বীকার করছে! ঘটনার পরদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন: শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতকর্মীদের ওয়াশআউট অভিযানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নিহত হওয়া তো দূরের কথা, কেউ আহতও হয়নি।” আরেকটু পরে বলা হচ্ছে:
“মূল কিলিং হয়েছে দুই পর্যায়ে। হেফাজতকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য অভিযান শুরুর পর মঞ্চ দখলের আগমুহূর্তে অর্থাৎ, যে ১০ মিনিটের কথা বলা হয়েছে, তখন খুব কাছ থেকে সরাসরি হেফাজতকর্মীদের গুলি করা হয়। এতে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ ঘটনার অবতারণা করে যৌথবাহিনী সফল হয়। সহকর্মীদের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য দেখে হেফাজতকর্মীরা ছোটাছুটি শুরু করেন। ১০ মিনিটেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সমাবেশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে বড় কিলিংগুলো হয় সোনালী ব্যাংক ভবনের সিঁড়ি ও বারান্দা, বাংলাদেশ ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ডিসিসিআই, আমিন মোহাম্মদ ভবন, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ভবন, ইউনুস সেন্টার, সারা টাওয়ার, ঢাকা ব্যাংকসহ ওই এলাকার বিভিন্ন বড় বড় দালানের সিঁড়ি ও বারান্দায়। এসব স্থানে পলায়নপর হেফাজতকর্মীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুলিশ মাইকে ইত্তেফাক ও হাটখোলা ধরে যাত্রাবাড়ীর দিকে পালিয়ে যেতে বলেছিল। সে নির্দেশ তারা মানেননি। ভয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন’ এই ছিল তাদের অপরাধ।....বঙ্গভবনের আশপাশ এলাকায় দৌড়ে গিয়ে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের অনেককে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ।”
ঘটনায় হতাহতদের সংখ্যা সম্পর্কে বলতে গিয়ে হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত ভাষ্যে বলা হয়েছে:
“মতিঝিলের আশপাশের হাসপাতালগুলোতে হতাহত বহু লোককে নেয়া হলেও পুলিশের হুমকিতে তারা নাম প্রকাশ করে বিস্তারিত বলতে অপারগতা জানিয়েছেন। সর্বোচ্চ তিন হাজার লোক নিহত ও নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছে আয়োজক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা লিখিত বিবৃতিতে এ সংখ্যা ২ হাজার বলেছিল। ৬ মে রাতেই সংশোধিত সংখ্যা ৩ হাজার বলে জানায়।”
এ তো গেলো হেফাজতে ইসলামের প্রাতিষ্ঠানিক ভাষ্যের কথা। এবার আসতে পারি নির্ভরযোগ্য কিছু আন্তর্জাতিক সূত্র ও সংবাদ-মাধ্যমের তথ্যে। তথ্যের জন্য উইকিপিডিয়া'র (Wikipedia) কথা এখন নেট-দুনিয়ায় সর্বজনজ্ঞাত। ২০১৩ সালে সংঘটিত শাপলা-হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংযোজন করা হয়েছে সেখানে। সেদিনের ঘটনায় হতাহত সম্পর্কে বলা হয়েছে:
According to government estimates, the number of casualties in this operation was 11, including a few law enforcement members, while the Daily Star reported 5 deaths. Opposition parties initially claimed that 2000- 3000 of protesters had been killed, while Hefazat claimed about 1000 deaths. Human Rights Watch disagreed with Hefazat's claims, but agrees that a massacre took place.
“(the security forces) shot live ammunition and rubber bullets into unarmed crowds, conducted sweeping arrests, and used other forms of excessive force during and after protests that began in february and continue... opened fire on crowds, often without warning..."
Some victims were bystanders, including a number of shopkeepers near the Baitul Mukarram, while most were hefazat supporters, including children, who were killed by a blow to the head or gunshot wounds. Doctors at the Dhaka Medical College Hospital confirmed that many of those dead had been shot in the head. One policeman was also attacked in reprisal. According to Human Rights Watch, eyewitnesses saw 25-30 bodies that were confirmed dead. This included British activist and journalist David Bergman, who saw 24 bodies. The Guardian reported 22 confirmed deaths, while an investigation conducted by Aljazeera revealed that 14 bodies of "bearded men" with gunshot wounds were buried, after the protests, at Dhaka's state-run cemetery. Human rights group Odhikar reported 61 deaths, but refused to reveal the names of the victims out of security concerns for their families. The UK Home Office estimates a total of no fewer than total of 50 deaths. Many individuals, including orphan children, were missing, which may have contributed to the discrepancies in casualties."
[সরকারী তথ্যমতে অভিযানে নিহতের সংখ্যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ১১। অবশ্য ডেইলি স্টারের রিপোর্টে বলা হয়েছে নিহতের সংখ্যা ৫। বিরোধীদলগুলো বলেছে, ২০০০-৩০০০ জন নিহত হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে: নিহতের সংখ্যা ১০০০। মানবাধিকার সংস্থাগুলো হেফাজতের এ দাবিতে একমত পোষণ করেনি, তবে স্বীকার করেছে যে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
মানবাধিকার সংস্থার দেয়া তথ্যানুসারে: "( নিরাপত্তা বাহিনী ) নিরস্ত্র জনতার উপর তাজা-গোলাবারুদ ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে, ব্যাপকহারে গ্রেফতার করেছে এবং ফেব্রুয়ারী থেকে চলমান এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধ অতিমাত্রায় শক্তিপ্রয়োগ করেছে। কোন প্রকার সতর্কীকরণ ছাড়াই তাদের উপর গুলি চালিয়েছে..."
হতাহতদের মধ্যে রয়েছে কিছু পথচারী, বাইতুল মোকাররমের নিকটবর্তী দোকানকর্মী। হতাহতদের অধিকাংশ হলো, হেফাজত-সমর্থক যাদের মধ্যে শিশুও ছিলো, মাথায় আঘাতে বা গুলিতে মারা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেছেন, নিহতদের অধিকাংশই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। একজন পুলিশও হামলায় মারা গেছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-র দেয়া তথ্যানুসারে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মোতাবেক ২৫-৩০ জন নিহত হয়েছে। বৃটিশ অধিকারকর্মী ডেভিড বার্গম্যান নিজে ২৪ টি মৃতদেহ দেখেছেন। বৃটেন থকে প্রকাশিত দ্য গার্ডিয়ান বলছে, মৃতের সংখ্যা ২২। সংবাদ সংস্থা আল জাযিরা বলছে তারা বিক্ষোভ-পরবর্তী ২৪ টি এমন মৃতদেহ কবর দিতে দেখেছে যাদের মুখে দাড়ি ছিলো, সেগুলো গুলিবিদ্ধ ছিলো। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার ৬১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। কিন্তু তাদের পরিবারের নিরাপত্তার খাতিরে নিহতদের পরিচিয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বৃটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করছে, ন্যূনতম ৫০ জন মারা গেছে। এতীম সিশুসহ অনেকেই উক্ত অভিযানের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে।]
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে—এমন একটি সংস্থা DESH RIGHTS। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে সংস্থাটি শাপলা-হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে। The Dhaka massacre 6 May 2013: A Briefing নামে ঐ পর্যবেক্ষণে (পৃ:২) তারা বলছে:
“Human rights groups have confirmed this incident to be a massacre, and with time qualitative and quantitative information surrounding the incident is emerging despite a concerted official disinformation campaign. An early report by The Economist puts numbers killed at 50 citing EU diplomats. However, video footage and pictures have emerged, which, in addition to eyewitness reports indicate that at least 500 may
have been killed. Video footage show scenes of chaos in which bodies are strewn around and protesters falling dead when police shoot liয়ve rounds. Verified films published on the Desh Rights website attests to this. We also published a survivor testimony of bodies being placed in dumptrucks by the authorities and removed from the scene.”
[মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে, ঘটনাটি একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। আর ঘটনা সংঘটনের সময়কাল ও হতাহতের সংখ্যা বিচারে ঘটনাস্থলের চারদিকের তথ্য থেকে সেটা বোঝাই যাচ্ছিলো’ যদিও প্রশাসনের তথ্য-গোপন করার চেষ্টা ছিলো। দ্য ইকোনোমিস্ট-র প্রাথমিক এক রিপোর্টে য়ুরোপিয়ান য়ুনিয়নের কূটনীতিকদের বরাতে নিহতের সংখ্যা ৫০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা হোক, বিভিন্ন ভিডিও-চিত্র আর ছবি দেখে যা অনুভব করা যায়, সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া বিবরণ যোগ করা হলে কমপক্ষে ৫০০ জন নিহত হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। গোলযোগের সময় গৃহিত ভিডিও-চিত্রগুলোতে দেখা যায়, চতুর্দিকে পুলিসের গুলিতে বিক্ষাভকারীদের দেহ লুটিয়ে পড়ছে। যাচা-বাছাইকৃত ভিডিও চিত্রগুলো দেশ রাইটসের নিজস্ব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা যেসব আহতদের জীবিতাবস্থায় সরিয়ে ফেলার জন্য ট্রাকে তোলা হয় তাদের জবানবন্দীও প্রকাশ করেছি।]
যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ-মাধ্যম Ceasefire magazine। তারা ২০১৪ সালের ৫ মে শাপলা-হত্যাকাণ্ডের ওপর একটি বিস্তৃত পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে। তাদের শিরোনাম ছিলো--Who said this would be investigated?’ Bangladesh and the May 2013 Massacre। অর্থাৎ, ' কে বলছে, এ ঘটনার তদন্ত করা হবে? বাংলাদেশ এবং ২০১৩ সালের মে'র হত্যাকাণ্ড।' পর্যবেক্ষণটিতে ceasefire magazine বলছে:
The day before, the protesters had marched from six points around the city, an estimated million strong, wearing national flags and asserting their rights to protest against religious defamation, discrimination and violence against their community amongst other matters. Many had been attacked by ruling party cadres and government forces, with firearms and more intimate bladed and blunt weapons, mounted on riot cars and motorcycles. Protesters seeking refuge in the national mosque were attacked by gunmen on motorcycles. The savagery on show was witnessed by the nature of the injuries inflicted, survivor testimonials and social media video footage. Several of the deceased had been brought to Shapla Chottor on stretchers, while the walking wounded and dying filled the hospitals that would accept them. According to a deaf-mute grave digger interviewed by Al Jazeera (before they lost interest) several bodies found themselves buried in a pauper’s graveyard. Later in the night, a passerby shared a heart-trembling eye-witness account of his patheticness in the face of police lines shooting at traditionally garbed protesters then pulling them out of the smoke and handing them to Awami League ruling party cadres to beat.
[ ৫ মে দিনের বেলায় বিক্ষোভকারীরা ঢাকা শহরের ছয়টি পয়েন্ট থেকে মিছিল নিয়ে জমায়েত হয়। তারা সংখ্যায় ছিলো লক্ষ পরিমাণ, জাতীয় পতাকায় মোড়ানো। তারা ধর্ম-অবমাননা, বৈষম্য আর তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের প্রতিবাদ ও আরও কিছু বিষয়ে দাবি জানাচ্ছিলো। তাদের অনেকেই সরকারদলীয় ক্যাডার, নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। আক্রমণকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি আর ভোঁতা-অস্ত্র নিয়ে মোটরবাইক আর দাঙ্গা-প্রতিরোধী গাড়িতে চড়ে আক্রমণ চালায়। হেফাজত-সমর্থকেরা জাতীয় মসজিদে আশ্রয় নিলে মোটর সাইকেল আরোহী বন্দুকধারীরা সেখানেও গুলি চালায়। সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও, ক্ষতচিহ্নের ধরন, আহতদের বর্ণনা সেদিনের বর্বরতার সাক্ষী হয়ে আছে। এর মধ্যে কয়েকজনের মৃতদেহ স্ট্রেচারে করে শাপলা-চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়, অন্যদিকে আহত ও মৃত্যু-পথযাত্রীতে হাসপাতাল ভর্তি হয়ে যায়। আল জাযিরা একজন কবর খননকারী থেকে জানতে পেরেছে, কিছু মৃতদেহকে বেওয়ারিশ হিসাবে মাটি দেওয়া হয়েছে। পরে, রাতের বেলায় একজন প্রত্যক্ষদর্শী পথিক এক ভীতিকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। নিজের চোখে দেখা হৃদয়কম্পিত সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন: পুলিশ লাইনের সামনে চিরাচরিত পোষাকপরা হেফাজত-সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এরপর তাদেরকে টেনে-হিঁচড়ে নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হাতে তুলে দেয়া হয়।]
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক এমন একটি এনজিও International Human Rights Defenders and Press Society (IHRDPS)। ২০১৩ সালের ৮ মে সংস্থাটি শাপলা-হত্যাকাণ্ডের ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টির শিরোনাম ছিলো Genocide by Bangladesh government toward Muslim community ( মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের গণহত্যা)। এটি বেশ কিছু দিন গুগলে থাকলেও পরে অজ্ঞাত-কারণে সরিয়ে ফেলা হয়। রিপোর্টটি মার্কিন সংবাদ-মাধ্যম CNN-এ প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়:
"5 May, 2013. A lot of people were on the street of capital to save Islam. But anti-Islamic govt. could not tolerate that. They move out of journalists from those places. Powered off the electricity. And then about at 3 am fired to the innocent and unarmed Muslims. A lot of people were died. Anti-Islamic govt. carried off dead bodies of many Muslims. The broadcast of Islamic TV channel of Bangladesh named ‘Islamic Television’ was closed. Another TV channel named ‘Diganto Television’ was also closed due to their support on behalf of Muslim community. Before sun rises, the street was washed, so that no proof of genocide remains there.
Some Conscious, Pious and patriot police gave us some secret news. As the govt. has carried off dead bodies from the spot to unknown place, the general public is not informed about the real number of dead persons. But those police have informed us that the number of dead persons is more than 2500. According to the voice of those police, this genocide was performed by four groups-Police, RAB, BGB and Professional Shooters. People were fully uninformed about Professional Shooters. They were on the roof of polyhedral buildings and used Sniper Rifle, which was used first time in Bangladesh.
At first, RAB, police and BGB started fire together. At the same time Professional Shooters shooted by following the head and chest. During the same time; tear shell, hot water and sound grenades were thrown toward the innocent and unarmed Muslims. Some workers of ‘Hefajot-e-Islam Bangladesh’ tried to resist it. But they did not able to do that due to fire from all sides in dark night.
A lot of Muslims died in spot, some became seriously injured and others were able to run away from the street. This genocide continued for about one and half hour. No person was arrested, because the govt. ordered to kill directly, informed by those police members.
These police members also informed us that the dead bodies of Hefajot-E-Islami workers’ was carried out by 9 trucks and was thrown in three rivers. By this time, a lot of dead bodies were obtained from the river ‘Turag’ by general public. ...... We also informed by those patriot police that there is a possibility of genocide in every Madrasah of Bangladesh.
These news ware informed us by three police members, who were in the spot of genocide on 5 May night. Including them some of police members were crying there secretly, but they had nothing to do."
[২০১৩ সালের ৫ মে বিপুল-সংখ্যক মানুষ ইসলাম রক্ষার দাবিতে রাজধানীতে সমবেত হয়। কিন্তু ইসলামবিরোধী সরকার সেটাকে সহ্য করতে পারেনি। ঘটনাস্থল থেকে প্রশাসন সাংবাদিকদেরকে বের করে দেয়। বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ হরে দেয়। এবং রাত তিনটার সময় নিরীহ-নিরস্ত্র মুসলিমদের উপর গুলি চালানো শুরু করে।এখানে একটা বড় সংখ্যায় মানুষ মারা যায়। ইসলামবিরোধী সরকার অনেক মুসলিমের মৃতদেহ সরিয়ে ফেলে। বাংলাদেশের একটি ইসলামী টিভি চ্যানেল 'ইসলামিক টিভি'র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়
ঘটনাস্থল থেকে। 'দিগন্ত টিভি' নামে আরেকটি বেসরকারী চ্যানেলের সম্প্রচার ও রিপোর্টিং বন্ধ করে দেয়া হয় হতাহতদের দৃশ্য প্রচারের কারণে। সূর্য ওঠার আগেই রাস্তাগুলোকে এমনভাবে ধুয়ে ফেলা হয় যেনো গণহত্যার চিহ্ন না থাকে।
কিছু সচেতন, ধার্মিক ও দেশপ্রেমী পুলিশ আমাদেরকে গোপন কিছু তথ্য দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, সরকার অজ্ঞাত-স্থানে লাশ সরিয়ে ফেলার কারণে জনসাধারণ নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে পারেনি। তবে সেসব পুলিশ-সদস্যরা জানায়, এ-দিন নিহতদের সংখ্যা ২৫০০ হাজারের বেশি হবে। তারা আরও জানায়, পুলিস, র্যাব, বিজিবি ও পেশাদার খুনি--এই চার দলের মাধ্যমে গণহত্যা সংঘটন করা হয়। মানুষ পেশাদার খুনিদের উপস্থিতি সম্পর্কে কোন ধারণাই পায়নি। পেশাদার খুনিরা অবস্থান নেয় বহুতল ভবনের ছাদে। তারা ব্যবহার করে স্নিপার রাইফেল--যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয়।
গণহত্যার শুরুতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি একসাথে গুলি চালাতে শুরু করে। সাথে-সাথে পেশাদার খুনিরা উপর থেকে হেফাজত সমর্থকদের মাথা ও বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এক-ই সময়ে এসব নিরস্ত্র মানুষের উপর টিয়ার সেল, গরম-পানি আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় কিছু হেফাজত-সমর্থক প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও রাতের আঁধারে চারদিক থেকে গুলি আসায় কিছু করা সম্ভব হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিরাট সংখ্যক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকারে পরিণত হয়, অনেকেই মারাত্মকভাবে আহত হয় আর বাকিরা দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
প্রায় দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত এই গণহত্যা চলে। গোপনতথ্য দেয়া ঐ পুলিশ সদস্যরা জানায়, অপারেশনে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কারণ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরাসরি হত্যা করার নির্দেশ ছিলো। ঐ পুলিশ সদস্যরা আরও জানায়, হেফাজতে ইসলামের নিহতদের মৃতদেহ নয়টি ট্রাকে করে তিনটি নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এরপর তুরাগ নদী থেকে জনসাধারণ বেশ কিছু ভাসমান লাশ উদ্ধার করে। এসব পুলিশ আমাদেরকে আশঙ্কার কথা জানায় যে, ভবিষ্যতে প্রতিটি মাদরাসা আক্রান্ত হতে পারে। তথ্যগুলো যে সব পুলিশ সরবরাহ করে’ তারা সেদিন রাতে ঘটনাস্থলে (৫ মে) ডিউটিরত ছিলো। তারা আরও জানায়, বেশ কিছু পুলিশ-সদস্য ঘটনার ভয়াবহতায় কেঁদে ওঠেন। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিলো না।]
Human Rights Watch (HRW) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বব্যাপী বহুল পরিচিত একটি মানবাধিকার সংস্থা। তারা ফী-বছর প্রত্যেক দেশের মানবাধিকার-পরিস্থিতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রতিবেদন তৈরি করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৩ সালের ১লা আগস্ট বাংলাদেশের উপর (ফেব্রু-মে) একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করে। রিপোর্টটির শিরোনাম হলো Blood on the Streets যার বাংলা অর্থ হলো--রাস্তায় রক্ত। সেখানে শাপলা-হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলা হচ্ছে:
"The worst violence took place near Dhaka's central mosque, Baitul Mokaram. Protesters set fire to shops, two office buildings, and a bus, and clashed with police. The security forces retaliated with tear gas, rubber bullets, and live fire. Video footage shows police officers using heavy sticks to beat apparently unarmed protesters lying on the street. Hundreds of people were taken to nearby hospitals. A 25-year-old Hefazat-e-Islam volunteer described the incident to Human Rights Watch:
We took shelter in the Baitul Mokarram mosque. The police called us to come out. When we did, they fired at us. Bullets hit my face, and when I fell down they came and shot me in my knee and abdomen and shoulder. They shot from barely 10 feet [3 meters] away. All were rubber bullets with lead balls. I was not armed, I did not have a stick. I was hit 19 times. I said to them, “Why are you shooting at me? I'm a volunteer.” Now I cannot see anything from my right eye, and after an operation I can see only a little bit from my left eye. Some of the victims were bystanders, like shopkeeper Raqibal Huq, who died of a gunshot wound to the head. Most were Hefazat supporters like 20-year-old Saidul Islam who was killed by a sharp blow to the head, and 20-year-old Sadam Hussein, whose corpse had gunshot wounds and large cuts to the back.
[সহিংস ঘটনাটি ঘটে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের কাছে। বিক্ষোভকারীরা দু'টি দোকান, দু'টি বিল্ডিং এবং একটি বাসে আগুন দেয়। সেখানে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর পাল্টা টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ও তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করে। ভিডিও-চিত্র থেকে দেখা যায়, পুলিশ মোটা লাঠি দিয়ে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদেরকে রাস্তায় ফেলে পেটাচ্ছে। প্রায় শ'খানিক আহতকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পঁচিশ বছর বয়সী একজন হেফাজত কর্মী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে সংঘর্ষের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন--" আমরা বায়তুল মোকাররমে আশ্রয় নিলাম। পুলিস আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে বললো। আমরা বেরিয়ে আসতেই তারা গুলি চালাতে শুরু করলো। আমার মাথায় বুলেট আঘাত করলো। আমি পড়ে গেলাম। পুলিস এসে আমার হাঁটুতে, তলপেটে, কাঁধে গুলি করলো। তারা মাত্র দশ ফুট দূর থেকে আমাকে গুলি করছিলো। এর সবই ছিলো রাবার বুলেট সাথে সীসার গুলি। আমি নিরস্ত্র ছিলাম; আমার কাছে কোন লাঠি ছিলো না; আমাকে উনিশবার গুলি করা হয়। আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম: তোমরা আমাকে গুলি করছো কেন? আমি তো স্বেচ্ছাসেবক। আমি এখন ডান-চোখে দেখতে পাই না। অপারেশনের পর বাম-চোখে সামান্য দেখতে পাই।”
আক্রান্তদের কেউকেউ ছিলেন পথচারী। তাদের মধ্যে রকিবুল হক একজন, যিনি মাথায় গুলির আঘাতে মারা যান। নিহতদের অধিকাংশ ছিলো হেফাজত-কর্মী। আক্রান্তদের বেশির ভাগই হেফাজত-কর্মী। এমনই একজন ২০ বছর বয়সী সাইদুল ইসলাম--যে মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা গেছে। সমবয়সী সাদ্দাম হোসেনের লাশ পড়েছিলো ক্ষতবিক্ষত অবস্থায়। তার ছিলো গুলির আঘাত আর পিঠে গভীর কাটাচিহ্ন।]
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'র ঐ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে:
"Journalists and protestors who witnessed the event told Human Rights Watch that on several occasions the security forces opened fire at close range even after unarmed protesters had surrendered. The security forces did not just fire rubber bullets, but also shotgun pellets. Many witnesses spoke of seeing corpses. As already noted, video footage shows police and RAB men beating what appear to be severely injured protesters.
One journalist remembers shaking 25-30 bodies and checking their pulses and is convinced some were dead. Another reporter saw RAB soldiers dragging four bodies near the offices of Biman Bangladesh airlines and loading them onto a truck. When he went to inquire about them, a soldier hit him with a stick on the side his head. The same journalist later checked the pulse of a boy who was lying on the steps of the Sonali Bank and was told by a police officer that the boy was dead. He remembers seeing a lot of bruising around his neck and chest."
[ প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান, বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীরা নিরস্ত্র অবস্থায় আত্মসমর্পণ করার পরও নিরাপত্তা-বাহিনী খুব কাছ থেকে গুলি চালায়। নিরাপত্তা-বাহিনী যে কেবল রাবার বুলেট ছুঁড়েছে তাই নয়, শর্ট গান দিয়েও গুলি চালায়। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী মৃতদেহ দেখেছেন। যেমনটি বলা হয়েছে, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে: পুলিস ও র্যাব সদস্যরা মারাত্মকভাবে আহতদেরকে যেখানে পেয়েছে বেধড়ক পিটিয়েছে।
একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, তিনি পড়ে থাকা ২৫ থেকে ৩০ জনের শিরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যাদের কয়েকজন তখন মৃত। একজন রিপোর্টার দেখেছেন, কিছু র্যাব সদস্য চারটি মৃতদেহকে টেনে-হিঁচড়ে ট্রাকে তুলছে। তিনি যখন তাদের কাছে মৃতদেহ সম্পর্কে জানতে চান একজন র্যাব সদস্য রিপোর্টারের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। পরবর্তীতে সেই রিপোর্টার সোনালী ব্যাঙ্কের সিঁড়িতে
পড়ে থাকা একটি বালকের পালস পরীক্ষা করার সময় একজন পুলিস কর্মকর্তা ছেলেটি মারা গেছে বলে দাবি করেন। ঐ রিপোর্টার বলেন, প্রচণ্ড মারের কারণে ছেলেটির ঘাড় ও বুকের হাঁড় ভেঙ্গে গেছে।]
'অধিকার'--বাংলাদেশের বহুল পরিচিত একটি মানবাধিকার সংস্থা। রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের অধিকার প্রশ্নে তারা নিজস্ব প্রতিবেদন ও পর্যবেক্ষণ দিয়ে থাকে। ১৯৯৪ সালে শুরু হওয়া সংস্থাটি জাতীয়ভাবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করে ২০১৩ সালের ১৩ ই মে শাপলা হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তৃত সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সে বছরের আগস্ট মাসে অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে উক্ত বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টের জন্য গ্রেফতারের কারণে। বলাবাহুল্য, অধিকার কর্তৃক প্রকাশিত 'হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর সমাবেশ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন' শীর্ষক আঠাশ পৃষ্ঠার রিপোর্টটি (বাংলা সংস্করণ, প্রকাশ: ১০ ই জুন, ২০১৩) শাপলা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য দলীল। উক্ত রিপোর্টির চুম্বকাংশ এখানে তুলে ধরছি:
“সন্ধ্যার পরও হেফাজতের নেতারা সমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন। তবে রাত আনুমানিক ৮.০০ টায় এশার নামাযের আগে এই বক্তৃতা থেমে যায়। এরপর রাত আনুমানিক ৮.৩০ টায় পুলিসের সঙ্গে হেফাজত কর্মীদের মতিঝিল থানা ও এর আশেপাশে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিস হেফাজত কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনামতে তখন পুলিসের গুলিতে ৭ জন হেফাজত কর্মী নিহত হন। হেফাজতের নেতারা তখন মাইকে পুলিসকে গুলি না করার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। রাত আনুমানিক ১১ টায় শাপলা চত্বরের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। রাতের গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেফাজতের কর্মীরা যে যেখানে ছিলেন সেখানেই রাস্তার মাঝে বসে পড়েন, অনেক হেফাজত কর্মী গায়ের পান্জাবি খুলে অথবা সঙ্গে থাকা ব্যাগ কিংবা জুতা কাপড়ে পেঁচিয়ে মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আবার অনেকেই সেখানে বসে জিকির করতে থাকেন।
এদিকে পুলিস, র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব), আর্মড পুলিস ব্যাটেলিয়ন ( এবিপিএন) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে সেখানে হামলার পরিকল্পনা করে। যৌথবাহিনীর সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে রামকৃষ্ণ মিশন (আর কে মিশন) রোডটি বাদ দিয়ে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে ১টি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতর থেকে বের হয়ে মূল মঞ্চের দিকে ১টি, এই মোট ৩টি দলে ভাগ হয়ে একযোগে শাপলা চত্বরে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই শুরু করে টিয়ারগ্যাস, গুলি, সাউন্ডগ্রেনেডসহ বিরতিহীন আক্রমণ (পৃ: ৩-৪)।"
৬ ই মে রাত আনুমানিক ১২.৩০ টায় মতিঝিলের প্রতিটি রাস্তার বৈদ্যুতিক সংযোগ করে দিয়ে চারদিক অন্ধকার করে দেয়া হয় এবং এই সময় সমাবেশ করার জন্য ব্যবহৃত মাইকের সংযোগও কেটে দেয়া হয়। যৌথবাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় রাত আনুমানিক ২.১৫ টায় হেফাজত কর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শাপলা চত্বর ও এর আশে পাশে থাকা নিরস্ত্র এবং ঘুমন্ত হেফাজত কর্মীদের উপর নির্বিচারে গরম পানি, টিয়ারস্যাল, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গুলি ছুঁড়তে থাকে। যৌথবাহিনী রাতের ঐ অপারেশনের তিনটি সাংকেতিক নাম দেয়। পুলিসের পক্ষ থেকে বলা হয় 'অপারেশন শাপলা', র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয় 'অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট' এবং বিজিবি'র পক্ষ থেকে বলা হয় 'অপারেশন ক্যাপচার শাপলা'(পৃ: ৫)।
"৬ মে রাতের ঘটনাটির বীভৎসরূপ যেন প্রকাশিত না হয়ে পড়ে, সেই কারণে সরকার ভোররাত আনুমানিক ২.৩০ টায় ইসলামিক টেলিভিশন এবং ভোররাত আনুমানিক ৪.৩০ টায় দিগন্ত টেলিভিশন নামের চ্যানেল দু'টি বন্ধ করে দেয়। এই চ্যানেল দু'টি মূলত বিরোধী দলীয় চ্যানেল হিসেবেই পরিচিত ছিল ও এই ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট করছিল। বর্তমানেও টিভি চ্যানল দু'টি বন্ধ রয়েছে" (পৃ: ৫)।"
অধিকার'র রিপোর্টে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফটো-সাংবাদিকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার উল্লেখ করা হয় এভাবে:
"তিনি ফকিরাপুল মোড়ে পৌঁছানোর একটু আগেই দেখতে পান কালো পোষাক পরা বেশ কিছু লোক ও ইংরেজিতে প্রেস লেখা জ্যাকেট পরা কয়েকজন সাংবাদিক দাঁড়িয়ে আছেন। সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে জানতে পারেন সেখানে দুই হাজারেরও বেশি পুলিস, র্যাব, এবিপিএন ও বিজিবি সদস্য রয়েছে। একজন জয়েন্ট কমিশনার পর্যায়ের অফিসার তাদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এই দলের সঙ্গে
একটি রায়ট কার ও ১ টি জল কামান ছিল। তখন তিনি বুঝতে পারেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় ধরনের কোন অপারেশন শুরু হবে, তাই তিনি অপারেশন দেখার জন্য সেখানে থেকে যান। তিনি দেখেন, অপারেশন দলের কমান্ডিং অফিসার তার দলকে উত্তেজিত করার জন্য বলছে, "আপনারা কি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন?" দলের প্রত্যেক সদস্য সমস্বরে বলে ওঠে, " ইয়েস স্যার"।.........রাত আনুমানিক ২.২০ টায় যৌথবাহিনীর রায়ট কারে মাইক থাকা সত্ত্বেও তারা হেফাজত কর্মীদের সরে যেতে না বলে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে শাপলা চত্বরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এতে রাস্তায় অবস্থানরত হেফাজত কর্মীরা টিকতে না পেরে পিছু হটতে শুরু করে।......রাত আনুমানিক ২.৪৫ টায় নটর ডেম কলেজ পার হয়ে টয়েনবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার অফিসের সামনে এসে যৌথবাহিনীর সদস্যরা হেফাজত কর্মীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং সরাসরি গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে শাপলা চত্বরের কাছে এসে দেখে চত্বর খালি হয়ে গেছে। কারণ, ইতিমধ্যেই দৈনিক বাংলা মোড় থেকে আরেকটি অপারেশন দল আগেই শাপলা চত্বরে এসে পৌঁছে হেফাজত কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। হেফাজত কর্মীরা তাদের জীবন রক্ষায় তখন মতিঝিলের বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়েন।
এমন সময় তিনি দেখেন একজন হেফাজত কর্মীকে পুলিস ধাওয়া করছে। ধাওয়া খেয়ে লোকটি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়েছেন। একজন পুলিস সদস্য তাকে গুলি করতে উদ্যত হওয়ায় আরেকজন পুলিস সদস্য তখন গুলি করতে বারণ করেন। কিন্তু গুলি করতে উদ্যত পুলিস সদস্য বারণ না শুনে লোকটির পেটে গুলি ছোঁড়ে। লোকটি পেটে হাত চেপে ধরে রক্তাক্ত অবস্থায় কোন একটি গলিতে ঢুকে পড়েন (পৃ: ১৩-১৪)।"
শাপলার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে অধিকার তাদের রিপোর্টের শেষের দিকে 'আমাদের বক্তব্য' নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসংহার যোগ করেছেন যা রিপোর্টকে অত্যন্ত অর্থবহ করে তুলেছে। সেখানে তারা বলেছেন:
"অধিকার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা কর্মীদের হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। অনেক মানুষের হতাহতের বিষয়ে জানা গেলেও এক শ্রেণীর 'শিক্ষিত' ব্যক্তিদের এই ব্যাপারে নীরবতায় অধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সরকারের মতিঝিলে অভিযান চালানোর আগে সে এলাকায় বৈদ্যুতিক সরবরাহ বন্ধ করা ও অভিযান চলাকালে বিরোধী দলীয় দুটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া এবং অন্যান্য মিডিয়াতে এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে সরকার হতাহতদের ও নৃশংসতার বিষয়টি গোপন করতে চাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে কোন স্বচ্ছতাই আশা করতে পারি না।
উপরোক্ত বাস্তবতা থাকা সত্ত্বেও সব ধরনের পক্ষপাতিত্ব ও অপপ্রচারকে পাশ কাটিয়ে বিষয়টির যথার্থ তথ্যানুসন্ধানের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা প্রয়োজন। সুপ্রীম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত কমিটি করা প্রয়োজন এবং সমাজকে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো তদন্তকালীন সময়ে দেখা প্রয়োজন, সেগুলো হলো-
১। মোট নিহত ও আহত মানুষের সংখ্যা এবং তাদের অবস্থান সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
২। কোথায় নিহতদের কবর দেয়া হয়েছে তা জানার অধিকার তাঁদের স্বজনদের রয়েছে। নিহতদের শেষকৃত্য করার অধিকারও তাঁদের স্বজনদের রয়েছে, যা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
৩। এই সমাবেশে অনেক শিশুরাও যোগ দিয়েছিল সরকার এটা জানা সত্ত্বেও কেন এই সমাবেশে ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে এবং কেন নির্বিচারে হত্যায় উম্মত্ত হয়েছে? এটা অত্যন্ত অসহনীয় যে, সরকার শিশুদের ব্যাপারে সংবেদনশীল নয়। যেসব ব্যক্তিরা গুম হয়েছেন কিংবা নিখোঁজ রয়েছেন তাঁদের বিষয়ে খোঁজ করা জরুরি (পৃ: ২৮)।"
অধিকার সর্বশেষে তাদের যে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণটি যুক্ত করেছে তা অবশ্যই শাপলার ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবে:
“This is the first incident of large-scale indiscriminate killing in Dhaka city, after 42 years of independence of Bangladesh in 1971, by the State agents. (১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৪২ বছর পরে এটাই হচ্ছে ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় আকারের বাছবিচারহীন হত্যাকাণ্ড যা রাষ্ট্রযন্ত্র সংঘটিত করে।)
এবার আমরা বিশ্বের তিন প্রভাবশালী সংবাদ-মাধ্যমের দিকে দৃষ্টি দেবো। দেখি, তাদের রিপোর্টে শাপলার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কী বলা হয়েছিলো। সংবাদ-মাধ্যম তিনটি হলো যথাক্রমে কাতারভিত্তিক 'আল জাযিরা', যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক 'দ্য ইকোনোমিস্টস' এবং বৃটেনের 'দ্য গার্ডিয়ান`। কাতারের Aljazeera শাপলা-হত্যাকাণ্ড নিয়ে দু'টো রিপোর্ট করে। একটি ২০১৩ সালে ৭ ই মে, অপরটি ২০১৩ সালের ১৪ ই মে। প্রথম রিপোর্টে তারা Protests paralyse Bangladesh capital (বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের রাজধানী অচল করে দিয়েছে) শিরোনামে বলছে, ঘটনার প্রথম দিনেই মারা গেছে ২৪ জন। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে:
"Tirana Hassan, an emergencies researcher with Human Rights Watch who has just returned from Bangladesh, said the findings of its investigation into protests since last year were very alarming.
"We've documented alarming patterns of protesters being killed by the use of live fire by Bangladeshi forces." she told Al Jazeera from Brussels.
"There are tens of thousands of people taking to the street, but what we documented was live fire being used -and the fatalities all had bullet entries into the head and chest.”
"That's very worrying because it's not just that the police are trying to control the crowds, they're firing live rounds of ammunition in a way that is bound to kill," she said."
[তিরানা হাসান—যিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-র সাথে সম্পৃক্ত একজন গবেষক, সদ্য বাংলাদেশ থেকে য়ুরোপে ফিরে বললেন, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেলো বছর থেকেই বিক্ষোভ ভীতিকর হয়ে ওঠে।
মিসেস হাসান ব্রাসেলস থেকে আল জাযিরাকে বলেন:, "আমরা বিক্ষোভকারীদের জন্য ভীতিকর দিকগুলোকে নথিভুক্ত করেছি যারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সরাসরি চালানো গুলিতে মারা গেছেন।"
"হাজার হাজার মানুষের জমায়েত ছিলো রাস্তায়। কিন্তু আমরা নথিভুক্ত করেছি যে, সেখানে সরাসরি গুলি চালানো হয় এবং নিহতদের সকলেই মাথা ও বুকে গুলিবিদ্ধ ছিলো।"
মিসেস তিরানা আরও বলেন, " সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, পুলিস জমায়েতকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে সরাসরি গুলি চালায়, ফলশ্রুতিতে মানুষের মৃত্যু ছাড়া কোন পথ খোলা ছিলো না।"]
দ্বিতীয় রিপোর্টে আল জাযিরার শিরোনাম ছিলো: Video suggests higher Bangladesh protest toll. অর্থাৎ, ভিডিও বলছে বাংলাদেশে নিহতের সংখ্যা উচ্চ। তারা লিখছে:
Al Jazeera has obtained video footage suggesting that the Bangladesh government has been providing inaccurate death tolls from recent violence. According to official figures, 11 people had died during fighting between police and protesters from Hifazat-e-Islam, an Islamic group, on May 6, a day protesters refer to as the "Siege of Dhaka". Human Rights Watch, a US-based rights group, said that the exact number of deaths resulting from the protests are "unclear".
....... "Independent news sources put the figure at approximately 50 dead, with others succumbing to injuries later," HRW said in a statement on Saturday.
............ Abdul Jalil, a deaf and mute grave digger at Dhaka's state-run cemetery, communicated that he buried 14 bodies of bearded men with gunshot wounds after the protest, all at night.
[আল জাযিরা একটি ভিডিও হাতে পেয়েছে যা দেখে বলা যায়, বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যাকে লুকাতে চেষ্টা করছে। সরকারী ভাষ্যানুসারে, ৬ ই মে--অবরোধের পরদিন হেফাজতে ইসলাম ও পুলিসের সাথে সংঘর্ষে ১১ জন মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, শাপলার ঘটনার হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও অস্পষ্ট।
"......নিরপেক্ষ সূত্র থেকে পাওয়া খবরে বলা যায়, মৃতের সংখ্যা ৫০-র কাছাকাছি।"—যেমনটি হি.রা.ও জানাচ্ছে।
"........আব্দুল জলীল নামে একজন মুক-বধির কবর খননকারী (ইশারায়) জানায়, সরকারের পরিচালনাধীন একটি কবরাস্থানে তিনি বিক্ষোভের রাতে মুখে দাড়িযুক্ত ১১ টি মৃতদেহ মাটি দিয়েছেন যারা বন্দুকের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন।"]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকা The Economists ২০১৩ সালের ৭ ই মে শাপলা-হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের খবরের শিরোনাম ছিলো, Violance on the streets অর্থাৎ, সড়কে সহিংসতা। প্রতিবেদনটিতে তারা লিখছে:
It took place in the commercial district of Dhaka, Bangladesh’s capital. At least 37 were killed and hundreds more injured in clashes between security forces and members of an extreme Islamic group, Hefajat-e-Islam.
.........Details of precisely what happened on May 6th remain unclear. Graphic pictures and video footage of the violence show bloodied bodies strewn on the streets of Dhaka’s Motijheel commercial district. The government closed two pro-Islamic television stations that had been broadcasting live images of the attacks. That leaves only one pro-opposition television channel (BanglaVision) functioning.
[ ঘটনা ঘটে রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকায়। নিহতের সংখ্যা ন্যূনতম ৩৭ জন এবং নিরাপত্তা-বাহিনীর সাথে চরমপন্থী দল হেফাজতে ইসলামের সংঘর্ষে আহত শতাধিক।
......৬ ই মে আসলে কী ঘটেছিলো তা সবিস্তারে স্পষ্ট নয়। সহিংসতায় তোলা ছবি, ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে আছে। সরকার দু'টো ইসলামপন্থী টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয় যারা আক্রমণের খবর ও ছবি সরাসরি সম্প্রচার করছিলো। সে-সময় বিরোধী সমর্থক টিভি চ্যানেল কেবল বাংলা ভিশন সচল ছিলো।"]
বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা The Guardian.। ২০১৩ সালের ৬ ই মে সংবাদপত্রটি 'Bangladesh protest violence leaves more than 30 people dead' ( বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ তিরিশ জনের বেশি লোকের প্রাণহানি) নামে শাপলা হত্যাকাণ্ডের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়:
"At 2.30am local time on Monday, about 5,000 law enforcement personnel, including members of the police and paramilitary troops, proceeded towards the gathering of at least 70,000 Hefazat activists.
In the darkness, with power to the area cut, police reportedly charged into the gathering, lobbing tear gas and stun grenades and firing into the crowd.
Earlier, they had ordered the Hefazat activists to leave using megaphones. At least 22 people died in the clashes, most of them supporters of Hefazat, according to police and hospital sources. Doctors at Dhaka Medical College Hospital said many of those dead had been shot in the head."
[সোমবার, স্থানীয় সময় ভোররাত ২.৩০ টা। পুলিস, প্যারামিলিটারি বাহিনীসহ ৫০০০ নিরাপত্তা-বাহিনী কমপক্ষে ৭০,০০০ হেফাজত কর্মীর সমাবেশের দিকে অগ্রসর হয়। চারদিকে অন্ধকার, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে নিরাপত্তা-বাহিনী টিয়ারগ্যাস, গ্র্যানেড ব্যবহার করে ও গুলি চালিয়ে করে সমাবেশ আক্রমণ করে। আগে তারা হেফাজত কর্মীদেরকে মাইক বন্ধ রাখতে বলে। হামলায় কমপক্ষে ২২ জন মারা গেছে। তাদের অধিকাংশই হেফাজত সমর্থক। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, নিহতদের বেশির ভাগই মাথায় গুলিবিদ্ধ ছিলো।]
এবার আমরা দেখবো, দেশীয় সংবাদ-মাধ্যমের রিপোর্ট। শাপলা হত্যাকাণ্ড নিয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার রিপোর্ট এখানে প্রণিধানযোগ্য। ২০১৩ সালের ৭ ই মে পত্রিকাটি 'যুদ্ধ বিধ্বস্ত রূপে মতিঝিল-পল্টন' শীর্ষক একটি সরেজমিন রিপোর্ট ছাপে। রিপোর্টটি তৈরি করেন দুই প্রতিবেদক নুরুজ্জামান ও উৎপল রায়। ৫ ই মে'র রাত থেকে ৬ ই মে'র দিনের আলো পর্যন্ত মতিঝিল ও আশেপাশের হাল-হাকীকত তুলে ধরা হয় রিপোর্টে। রিপোর্টে বলা হয়,
"রাস্তায় দুই পাশে ছাই আর ধ্বংসাবশেষ। রাস্তায় ইট পাথর ছড়ানো -ছিটানো। বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙ্গা। ডিভাইডারগুলো ভেঙ্গেচুরে একাকার। দোকান, গাড়ি, আসবাব পুড়ে পুড়ে আছে রাস্তায়। রক্ত, কাদামাখা হাজার হাজার জুতার স্তুপ। রক্তমাখা টুপি, পান্জাবি পড়ে আছে এখানে-সেখানে। দু'দিন আগেও রাস্তাজুড়ে সেখানে ছিল সবুজ গাছের সারি। টবসহ তুলে ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তায়। ৫ ই মে'র সহিংসতা ও রাতের যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর এ চিত্র ছিল রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন এলাকার। এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোন এলাকার দৃশ্য। সকাল থেকে দিনভর সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা পুরো এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করলেও পুরো স্বাভাবিক হয়নি।
সকালে দেখা যায় পিচ ঢালা পথে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য গুলির খোসা। সঙ্গে ঝোপ ছোপ রক্তের দাগ। সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তা সরিয়ে ফেলেন। সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ট্রাকযোগে বিভিন্ন ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হয়। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা জানান, রূপালী ব্যাংক ভবনের সামনের রাস্তায় ছোপ ছোপ রত্তের দাগ ছিল। অনেক জায়গায় রক্তাক্ত মাংসের টুকরা পড়ে ছিল। এ ছাড়া হাজার হাজার স্যান্ডেল, ব্যাগ, পান্জাবি, গেন্জি ও পানির বোতল সরিয়ে ফেলেছেন তারা। এর মধ্যে যত্রতত্র অবস্থায় ছিল অসংখ্য গুলি ও টিয়ার শেলের খোসা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মুহুর্মুহু গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। একই সময়ে নানা বয়সী মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসে। এর ঘণ্টাখানেক পর সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছিল মতিঝিল এলাকা। সূত্রমতে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান ও মুহুর্মুহু গুলিতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।"
মজার ব্যাপার হলো, শাপলার হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ-সম্মেলন করে বলা হয়: কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। যেমন, ২০১৩ সালের ৬ ই মে'র সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়:
"গতকাল রাতে (৫ ই মে) হেফাজতের শত শত লাশ গুম হয়েছে’—বিএনপির নেতা এম কে আনোয়ারের এমন দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কোনো প্রাণহানি না ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে হেফাজতের কর্মীদের মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে বের করে দিয়েছে। সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’
আজ বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হানিফ এ দাবি করেন। দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।...... আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘মতিঝিলে একটি সফল অভিযান পরিচালনার জন্য র্যাব, পুলিশ ও বিজিবিকে অভিনন্দন জানাই। কোনো হতাহতের ঘটনা ছাড়াই হেফাজতকে ঢাকা থেকে বের করে দেওয়ায় রাজধানীবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’ ............ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা হেফাজতের ওপর কোনো হামলা করেনি দাবি করে হানিফ বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা করলে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিহত করে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী হেফাজতের ওপর হামলা করেনি’ (দৈনিক প্রথম আলো)। শাপলা-হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের এ অবস্থান এখনও বহাল আছে। সরকার-প্রধান শেখ হাসিনাও হত্যাকাণ্ড পরবর্তীকালে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে 'কোন হতাহত হয়নি' বলে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। বরঞ্চ তিনি আরও ক'কদম বাড়িয়ে "হেফাজত কর্মীরা গায়ে রঙ মেখে শুয়েছিলো, পুলিশ দেখে দৌড় দেয়" মর্মে উপহাসসূলভ বক্তব্য দিয়ে জাতিকে অবাক করে দেন।
এবার আমরা দেখবো, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক অবস্থান। ৭ ই মে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি কেন্দ্রীয় বক্তব্য আসে জাতীয় কয়েকটি দৈনিকে। বক্তব্যের শিরোনাম ছিলো—‘ হাজার নেতা-কর্মীর শাহাদাত॥ আহত ১০ সহস্রাধিক, নিখোঁজ অসংখ্য'। হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা জাফরুল্লাহ খান কর্তৃক প্রেরিত উক্ত বিবৃতিতে বলা হয়:
"পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি’র সমন্বয়ে যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যুগপৎ হামলায় রাজধানীর মতিঝিলস্থ শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে রোববার গভীর রাতে ঘুমন্ত আলেম-ওলামাদের ওপর নির্বিচারে গুলী, বোমা, গ্রেনেড, টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার আলেম-ওলামা ও হেফাজত নেতা-কর্মীদের হত্যা এবং শহীদদের লাশ গুমের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ ও শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ"(দৈনিক সংগ্রাম)। উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলামের এ অবস্থানও এখনও বহাল আছে, কোন পরিবর্তন হয়নি বক্তব্য প্রত্যাহার করে।
২০১৩ সালের ৭ ই মে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আরও একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়। সম্ভবত, সেটি চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো হয়। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মাওলানা মাইনুদ্দীন রূহী কর্তৃক প্রেরিত উক্ত বিবৃতির শিরোনাম ছিলো--'শাপলা চত্বরের ঘটনা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা ॥ সারা দেশে তাওহীদি জনতাকে রাজপথে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ'। বিবৃতিটিতে বলা হয়:
"হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ডাকে রোববার ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে সরকারের পেটোয়াবাহিনী, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শাহবাগী নাস্তিকরা সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা সংঘটিত করেছে। বিভিন্নস্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের কোনও সম্পর্ক নেই। সরকার নজিরবিহীনভাবে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে পুলিশ, বিজিবি র্যাব ছাড়াও প্রচুর সংখ্যক বিদেশী-সশস্ত্র ও লোক দিয়ে আচমকা সমাবেশস্থলে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা সেই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞে কমপক্ষে দুই সহস্রাধিক নেতাকর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। আহতের সংখ্যা আড়াই হাজারের মতো। অনেক লাশ গুম করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ময়লা বহনের গাড়িতে করে বিপুলসংখ্যক লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মীর এখনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। সংগত কারণে আহত ও নিহতের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে জানানো সম্ভব হচ্ছে না"(দৈনিক সংগ্রাম)।
উল্লেখ্য, ঘটনা পরবর্তীকালে অভিন্ন ভাষায় হেফাজতে ইসলামের পক্ষে আরও যেসব নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দৈনিকে বিবৃতি দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন: ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম-আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মুফতী তৈয়্যেব, মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম, প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, মাওলানা শফিক উদ্দিন, মাওলানা মহি উদ্দিন ইকরাম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা রিয়াজতুল্লাহ, মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আলতাফ হোসাইন প্রমুখ।
সম্মানিত পাঠক, আমরা এখন আলোচনার গোধূলিতে এসে পৌঁছেছি। আলোচনার দীর্ঘ পরিক্রমায় আমরা দেখে এসেছি শাপলা-হত্যাকাণ্ডের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তথ্যসূত্রের বিবরণ; সরেজমিন-প্রতিবেদন। আশা করি, এসব তথ্য-উপাত্ত সুপ্রিয় পাঠকবর্গকে যেমন সন্দেহমুক্ত করবে, তেমনি তাঁদের বিশ্বাসের অনুকূলে দলীল হিসাবে বেঁচে থাকবে। যাক, সংবর্ধনা সভায় সরকারের সামরিক সচিবের বক্তব্যের সত্যতাও আমরা খুব কাছ থেকে দেখে এলাম। ২০১৩ সালের ৫ ই মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা-চত্বরে রাতের
আঁধারে একটি পূর্বনির্ধারিত হত্যাকাণ্ডের বাস্তবতাকে অস্বীকৃতির যে ভয়াবহ ও বেদনাত্মক নকশা আমরা তখন থেকেই দেখে আসছি তা আজও যে সরকারের অনু-পরমাণুতে প্রবাহিত—সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর চেয়ে ঢের ভয়াবহ লেগেছে সচিবের বক্তব্য-পরবর্তী সংবর্ধনা-মঞ্চে উপস্থিত কওমী-জগতের একটি পরিচিত অংশের নীরব সম্মতির দৃশ্য দেখে—যা বহির্জগতে এমন বার্তা দেয় যে, শাপলার-চেতনার প্রশ্নে কওমীদের ঐ অংশটিও সরকারের গভীর পরিকল্পনার সাথে অভিন্নমত পোষণ করেন।
এখানে আমরা একটি মৌলিক-প্রশ্নের সমাধানে ব্রতী হতে চাই। প্রশ্নটি হলো, শাপলা-ট্র্যাজেডিকে কেন ওরা কওমীদের মন থেকে মুছে দিতে চায়? প্রশ্নটি উপলব্ধি করছি শাপলা-ট্র্যাজেডি'র পর থেকে। এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমরা কওমীদের জানতে হবে শাপলাতে আমরা এসেছিলাম কেন? বলাবাহুল্য, পার্থিব কোন উদ্দেশ্য বা রাজনৈতিক ফায়দার জন্য হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে কওমী-জগৎ ঢাকা অবরোধে যায়নি। সবাই জানেন, ঐ সময়টাতে অনলাইনে একশ্রেণীর নাস্তিক ও ইসলাম-বিদ্বেষী ব্লগার ইসলাম, কুরআন, মহানবী সা. ইত্যাদি নিয়ে কুরুচিপূর্ণ অপবাদ দিতে থাকে; মন্তব্য করতে থাকে। এ বিষয়ে কওমী-জগৎ বারবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঐ নাস্তিকগোষ্ঠীর পেছনে সরকারের মদদ ও আশ্রয় জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নাস্তিক ব্লগার পাপিষ্ঠ রাজিব খুন হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ' আখ্যা দেয়ার মধ্য সরকারের চরিত্র ফুটে ওঠে [আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ব্লগার রাজীব দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। রাজীব চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর রক্ত দিয়ে উজ্জীবিত করে গেছেন তরুণ প্রজন্মকে (প্রথম আলো ১৬.০২.১৩)]।
শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারী যখন পাপিষ্ঠ রাজিব খুন হয় সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সেদিন বিকালে রাজিবের বাসায় গিয়ে সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে বলেন—“এই যে তরুণ সমাজ তারা মনে হল একাত্তরের পর আবার সমগ্র বাঙালী জাতির চেতনায় এতটা উন্মেষ ঘটাতে পেরেছে। আর সেই চেতনা যখন তারা এমন জাগ্রত করলো সে সময় প্রথম শহীদ সে। এবং এটা সবাই ধরেই নিতে পারে কারা করছে। তবে এটুকু কথা দিতে পারি এদের ছাড়বো না” (প্রথম আলো)। তাহলে, জাতি কী বুঝলো? জাতি বুঝলো, যারা মহান আল্লাহ তায়ালা, কুরআন, মহানবী সা. ইত্যাদি স্পর্শকাতর বিষয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলবে তারাই একাত্তরের চেতনার ধারক আর যাঁরা এদের বিরোধিতা করবেন তারাই দেশের শত্রু।
এমতাবস্থায় ২০১৩ সালের ৬ ই এপ্রিল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম-সমাজের ধর্মীয় ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে, জাতীয় সংহতি রক্ষার প্রয়াসে এবং বিভক্তি থেকে দেশক্ষার তাগিদে আল্লামা আহমদ শফী দা.বা.-র আহ্বানে ও নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকামুখী লংমার্চের ডাক দেয়। দেশের একমাত্র সুসংগঠিত সামাজিক শক্তি কওমী-জগতের আহ্বানে সেদিন ঢাকা অভিমুখী সকল সড়কে সর্বস্তরের জনমানসে যে অভূতপূর্ব প্রেরণার সৃষ্টি হয় তা স্বচক্ষে দেখার দূর্লভ অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিলো। রাস্তার দু'পাশের বাসাবাড়ি থেকে পর্দানশীন মহিলারা পর্যন্ত বেরিয়ে লংমার্চের মুসাফিরদের মুখে দু'ফোঁটা শরবত তুলে দিতে যে আকুতি বিছিয়ে দেয় তা যুগের পর যুগ ইতিহাসের পাতাকে কেবল অশ্রুসিক্তই করবে না বরঞ্চ এই জনপদের হৃদয়ে-হৃদয়ে ইসলাম আর ইসলামের মহানবী সা.-র প্রতি নিঃসৃত অনন্ত ভালবাসার মিনার হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সেদিন যে চেতনা এই জনপদের আকাশ-বাতাস প্রত্যক্ষ করেছিলো তার মূল-প্রেরণাদাতা ছিলো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। একথা অনস্বীকার্য। এই চেতনা—হাজারের বছরের চেতনা, যা আরবের হেরার আলোর অনস্বীকার্য ও অনিবার্য উত্তরাধিকার। সন্দেহ নেই, এ উত্তরাধিকারের পথ ধরে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে কওমী-জগৎ ঢাকা-অবরোধে যোগ দেয় ২০১৩ সালের ৫ ই মে'র মর্মান্তিক দিনে। জড়ো হয়েছিলো শাপলা-চত্বরে সেই আসমানী চেতনা হেফাজতের লক্ষ্য নিয়ে ১৩ দফা দাবির ব্যানারে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হেফাজতে ইসলামের এই চেতনা ঐতিহ্যবর্জিত ছিলো না, স্বল্পকালের কোন বিশ্বাস বা আচারনির্ভর সংস্কৃতিও ছিলো না। উপমহাদেশে এই চেতনার প্রথম উম্মেষ ঘটে ১৫ শ শতকে মুজাদ্দিদে আলফে সানী আল ইমাম শেখ আহমাদ আল ফারূকী আস্ সারহিন্দি রহ. (১৫৬৪-১৬২৪)-র পরাক্রমশালী মোগল সম্রাট আকবরের 'দ্বীন-ই-ইলাহী'র বিরুদ্ধে ইসলামের শাশ্বত-ইনকিলাবের মধ্য দিয়ে। এরপর এই সংগ্রামী চেতনার দ্বিতীয় উম্মেষ ঘটে ১৭ শতকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলা শহীদ রহ-র ইংরেজ-বিরোধী অভিযানে। যদিও পলাশীর আম্রকাননে বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজের দৃশ্যমান পরাজয় ঘটে কিন্তু চেতনা থাকে অপরাজেয়। সেই চেতনার তৃতীয় উম্মেষ ঘটে ১৮ শতকে যখন ভারতে শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ.(১৭০৩-১৮২৩)
ইংরেজ শাসিত ভারতকে 'দারুল হারব' বা শত্রু-কবলিত দেশ ফতোয়া দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের ঘোষণা দেন এবং সেই ফাতওয়ার উপর ভিত্তি করে মহীশুরের সিংহখ্যাত ফতেহ আলী সুলতান টিপু শহীদ রহ. ইংরেজ-বিরোধী সশস্ত্র জিহাদে নেতৃত্ব দিয়ে ১৮৯৯ সালের ৪ ঠা মে মহীশুরের যুদ্ধে শহীদ হন নিজের বিশ্বস্ত মীর সাদিকের বিশ্বাসঘাতকতায়। এরপর আসে ১৮৩১ সালের ৬ ই মে সংঘটিত 'বালাকোটের জিহাদে'। এদিন সেই হেরার চেতনার চতুর্থ উম্মেষ ঘটে যখন বালাকোটের প্রান্তরে সায়্যিদ আহমাদ শহীদ রহ. (১৭৮৬-১৮৩১)-র নেতৃত্বে ইসমাঈল শহীদ রহ.সহ ৩০০ মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন। অবশেষে ১৮৫৭ সালের মহাবিপ্লব খ্যাত মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুসলিম সমাজের নেতৃত্বে ইতিহাসে জায়গা করে নেয় সেই সংগ্রামী চেতনার পঞ্চম উম্মেষ। ১৮৫৭ সালের চেতনার পথ ধরেই ১৮৬৬ সালে ভারতের সাহারানপুর জেলার বস্তি দেওবন্দে 'দারুল উলূম দেওবন্দ' প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ঘটে সেই মহান চেতনার ষষ্ঠ উম্মেষ। বৃটিশ-শাসিত ভারতে হাজী শরীয়তুল্লাহর 'ফরায়েজী আন্দোলন' এবং তিতুমিরের ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রাম উপরোক্ত সংগ্রামী চেতনারই ধারক ও বাহক হয়ে ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল পাতায় জ্বলজ্বল করে চলেছে। এবং এই ধারাবাহিক চেতনার অনিবার্য পরিণতি শাপলার চেতনা—শাপলার আত্মদান।
যুগেযুগে উক্ত চেতনা শিকার হয়েছে বহুমুখী ষড়যন্ত্রের। সেটাকে থামাবার, নির্মূলের চেষ্টা হয়েছে বিভিন্নভাবে। শাপলার চেতনার ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। শাপলার চেতনা নতুন কিছু নয়—হেরার চেতনা, কওমী চেতনা। এ চেতনা অন্যায়কে মেনে না নেবার চেতনা, অসুন্দর আর অন্ধকারের সাথে আপোষ না করার চেতনা। এ চেতনা জুলম আর অধর্মের বিরুদ্ধে বিরতিহীন সংগ্রামের চেতনা। বৃটিশ আমলে লেখা ইংরেজ লেখকদের বইগুলো পড়লে বোঝা যায় বেনিয়াগোষ্ঠীর সব শক্তি আর ক্ষমতা প্রয়োগ করেও এ চেতনাকে থামানো যায়নি, নির্মূল করা যায়নি। ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের লেখা 'আওয়ার ইন্ডিয়ান মুসলমানস' সে কথার অনবদ্য এক দলীল।
বাংলাদেশেও সেক্যুলার আর নাস্তিক্যবাদীগোষ্ঠী এই চেতনাকে মুছে দিতে চেষ্টা করেছে বারবার, নির্মূল করতে চেয়েছে রাষ্ট্রীয় বল-প্রয়োগে। কারণ, শাপলাকে মুছে দিতে পারলে কওমী আর কওমী থাকবে না। দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা যাবে। নতুন জন্ম দেয়া দালালশ্রেণীর মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে শাপলার চেতনা বিনাশের। কিন্তু প্রতিবারই তারা ব্যর্থ হয়েছে নির্লজ্জভাবে, পরাজিত হয়েছে আদর্শের ময়দানে। তারা তাদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে বেকসুর মানুষ হত্যার মাধ্যমে, অন্যায় রক্তপাতের মাধ্যমে। কিন্তু যে চেতনায় আমরা হেরার আলোকে আলিঙ্গন করতে শিখেছি--সেই চেতনার কেশাগ্রও ওরা স্পর্শ করতে পারেনি। যুগেযুগে সেই চেতনার ধারক-বাহক হয়ে জন্ম নিয়েছে মুজাহিদ আলিম-সমাজ, যাঁরা সকল লোভ-লালসার হাতছানিকে পাযে দলে হেরার চেতনাকে রক্ষা করে গেছেন এবং যাচ্ছেন এখনও।
সামরিক সচিবের সেদিনের বক্তব্য সেই চেতনা-শত্রুদের ঐতিহাসিক ধারাবাহিক পরিণতি বৈ কিছু নয়। মঞ্চে বসে যাঁরা সেই অপচেষ্টাকে নীরবে বিনা প্রতিবাদে যেতে দিয়েছেন তাঁরা ইতিহাসের সৌভাগ্যের মালা পরতে পারেননি, দুর্ভাগ্যের পাতাতেই নাম লিখিয়েছেন। ইতিহাস একদিন সেই বিচার অবশ্যই করবে।
পরিশেষে, মনে রাখতে হবে শাপলা একটি চেতনার নাম; এক রক্তাক্ত আমানতের নাম। হাজার স্বীকৃতির পোষাকে সেই চেতনাকে আড়াল করা যাবে না। কওমী-জগতকে এই আমানত-রক্ষা করে যেতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। আসুক আরও হাজার রক্তাক্ত শাপলা। তবুও এ চেতনাকে আমরা কোনদিন ভুলবো না। মনে রাখতে হবে, শাপলার চেতনাকে হারালে কওমী-জগৎ অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।
২০১৮ সাল Mail: gr.islamabadi@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন