ইরাক যুদ্ধের আগে যে নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল
Article information- Author,মুন্নী আক্তার
- Role,বিবিসি নিউজ বাংলা, ঢাকা
হাজার হাজার সেনা পাঠিয়ে ইরাক ১৯৯০ সালের অগাস্টে কুয়েত দখল করে নেয়ার পর বাগদাদের উপর নেমে এসেছিল ব্যাপক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরাকে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। দীর্ঘসময় ধরে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার ব্যাপক সমালোচনাও রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
ইরাকের উপর নিষেধাজ্ঞা এসেছিল মূলত দেশটির শাসক সাদ্দাম হোসেনকে চাপে ফেলার জন্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই নিষেধাজ্ঞা ইরাক সরকারকে যতটা না কাবু করেছে, তার চেয়েও অনেক বেশি ভুগতে হয়েছে সাধারণ জনগণকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, "গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির ধোয়া তুলে যে অভিযান যুক্তরাষ্ট্র চালিয়েছিল, তার আসলে কোন ভিত্তি ছিল না, যা পরে প্রমাণিত হয়েছে।"
তাঁর মতে, সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের যে উদ্দেশ্য ছিল তা পূরণ হয়নি, বরং সাধারণ মানুষ এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।
নতুন সমস্যা তৈরি করে দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখে বলে মত তার।
তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুরোপুরিই রাজনৈতিক।”
আরো পড়ুন:
- Author,মুন্নী আক্তার
- Role,বিবিসি নিউজ বাংলা, ঢাকা
হাজার হাজার সেনা পাঠিয়ে ইরাক ১৯৯০ সালের অগাস্টে কুয়েত দখল করে নেয়ার পর বাগদাদের উপর নেমে এসেছিল ব্যাপক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরাকে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। দীর্ঘসময় ধরে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার ব্যাপক সমালোচনাও রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
ইরাকের উপর নিষেধাজ্ঞা এসেছিল মূলত দেশটির শাসক সাদ্দাম হোসেনকে চাপে ফেলার জন্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই নিষেধাজ্ঞা ইরাক সরকারকে যতটা না কাবু করেছে, তার চেয়েও অনেক বেশি ভুগতে হয়েছে সাধারণ জনগণকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, "গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির ধোয়া তুলে যে অভিযান যুক্তরাষ্ট্র চালিয়েছিল, তার আসলে কোন ভিত্তি ছিল না, যা পরে প্রমাণিত হয়েছে।"
তাঁর মতে, সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের যে উদ্দেশ্য ছিল তা পূরণ হয়নি, বরং সাধারণ মানুষ এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।
নতুন সমস্যা তৈরি করে দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখে বলে মত তার।
তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুরোপুরিই রাজনৈতিক।”
কী নিষেধাজ্ঞা ছিল?
জাতিসংঘ ১৯৯০ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, যা চলেছে ২০০৩ সাল পর্যন্ত।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন শুরু হওয়ার কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এর স্থায়ী সদস্যদের ভিটো দেয়ার ক্ষমতা কিছুটা অকার্যকর হয়ে পড়ে। আর এ সুযোগেই ১৯৯০ সালের ৬ই অগাস্ট ইরাকের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
ইরাকের সাথে সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে শুধু ওষুধের ওপর এই নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময়ও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সম্ভব হতো না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলে, তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মিলে আমদানি-রপ্তানি অব্যাহত রাখতো।
জাতিসংঘের কূটনীতিক মাত্তি আহতিসারি ইরাকের তৎকালীন পরিস্থিতিকে “প্রায় মহাবিপর্যয়ের” সাথে তুলনা করেছিলেন। বলেছিলেন যে, ইরাক আসলে "শিল্পযুগ-পূর্ববর্তী" সময়ে ফিরে গেছে।
মিডল-ইস্ট রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন প্রজেক্ট-মেরিপ নামে একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থায় ২০২০ সালে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল জাস্টিস কর্মসূচির অধ্যাপক জয় গর্ডন। ইরাকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি “ইনভিজিবল ওয়ার: দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এন্ড দ্য ইরাক স্যাংশন্স” নামে একটি বই লিখেছেন।
মিজ গর্ডন লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ভয়াবহতা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছিল। এই দুটি দেশ মিলে ১৯৯৬ সালে যে 'নো-ফ্লাই জোন' ঘোষণা করেছিল তার আওতায় ছিল ইরাকের প্রায় ৪০ শতাংশ ভূখণ্ড। ১৯৯৮ সালে অপারেশন ডেজার্ট ফক্স পরিচালনা করেছিলে এই দুটি দেশ, যাতে ইরাকের শতাধিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়, ব্যবহার করা হয় এক হাজারেরও বেশি বোমা এবং ক্রুজ মিসাইল।
২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের পর একই বছরের মে মাসে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। তবে তখনও অস্ত্র এবং তেল বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক ভোটের মাধ্যমে তেল বিক্রির মুনাফা ইরাকের সরকারি তহবিলে দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়।
জাতিসংঘ ১৯৯০ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, যা চলেছে ২০০৩ সাল পর্যন্ত।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন শুরু হওয়ার কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এর স্থায়ী সদস্যদের ভিটো দেয়ার ক্ষমতা কিছুটা অকার্যকর হয়ে পড়ে। আর এ সুযোগেই ১৯৯০ সালের ৬ই অগাস্ট ইরাকের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
ইরাকের সাথে সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে শুধু ওষুধের ওপর এই নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময়ও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সম্ভব হতো না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলে, তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মিলে আমদানি-রপ্তানি অব্যাহত রাখতো।
জাতিসংঘের কূটনীতিক মাত্তি আহতিসারি ইরাকের তৎকালীন পরিস্থিতিকে “প্রায় মহাবিপর্যয়ের” সাথে তুলনা করেছিলেন। বলেছিলেন যে, ইরাক আসলে "শিল্পযুগ-পূর্ববর্তী" সময়ে ফিরে গেছে।
মিডল-ইস্ট রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন প্রজেক্ট-মেরিপ নামে একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থায় ২০২০ সালে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল জাস্টিস কর্মসূচির অধ্যাপক জয় গর্ডন। ইরাকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি “ইনভিজিবল ওয়ার: দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এন্ড দ্য ইরাক স্যাংশন্স” নামে একটি বই লিখেছেন।
মিজ গর্ডন লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ভয়াবহতা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছিল। এই দুটি দেশ মিলে ১৯৯৬ সালে যে 'নো-ফ্লাই জোন' ঘোষণা করেছিল তার আওতায় ছিল ইরাকের প্রায় ৪০ শতাংশ ভূখণ্ড। ১৯৯৮ সালে অপারেশন ডেজার্ট ফক্স পরিচালনা করেছিলে এই দুটি দেশ, যাতে ইরাকের শতাধিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়, ব্যবহার করা হয় এক হাজারেরও বেশি বোমা এবং ক্রুজ মিসাইল।
২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের পর একই বছরের মে মাসে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। তবে তখনও অস্ত্র এবং তেল বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক ভোটের মাধ্যমে তেল বিক্রির মুনাফা ইরাকের সরকারি তহবিলে দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়।
“দ্বৈত ব্যবহার”
অধ্যাপক জয় গর্ডন তার লেখায় বলেন, ১৯৯০ এর দশকে ইরাকে মানবিক সহায়তা পণ্য প্রবেশ করতে না দেয়ায় মূল ভূমিকা রেখেছে দুটি দেশ-যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন।
কোটি কোটি ডলার মূল্যের জরুরি পণ্য যেমন খাদ্য উৎপাদন, পানি পরিশোধন, রাস্তা সংস্কার, বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং টেলিযোগাযোগর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের প্রবেশ ইরাকে স্থগিত রাখা হয়েছে টানা কয়েক মাস, এমনকি বছর ধরে।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি ছিল- এসব পণ্যের “দ্বৈত ব্যবহার” রয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য বেসামরিক এবং সামরিক-দুইভাবেই ব্যবহার করা যায়।যেমন বিদ্যুৎ, রাস্তা, টেলিফোন, নির্মাণ সরঞ্জাম, যানবাহন ইত্যাদি।
এ কারণে ইরাকের সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা না করেই এসব পণ্য সরবরাহ স্থগিত করা হতো। উদাহরণ হিসেবে অধ্যাপক জয় গর্ডন বলেন, ওষুধ প্রবেশে অনুমোদন ছিল। কিন্তু ওষুধকে ঠান্ডা ও কার্যক্ষম রাখতে যে রেফ্রিজারেটর ও ট্রাক দরকার তা দেয়া হতো না।
পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট খুলে দেয়া হয়েছিল ব্যাপক হারে কলেরা ও টাইফয়েড ছড়িয়ে পড়ার পর। কিন্তু এটিকে সচল রাখতে যে জেনারেটর দরকার তা দেয়া হয়নি। কারণ এটির “দ্বৈত ব্যবহার” ছিল।
একই কারণে প্রায় সব ধরনের কম্পিউটার সরঞ্জামাদিও দেয়া হতো না, যদিও হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এগুলো জরুরি ছিল। সেচ এবং পানির লবণাক্ততা দূরীকরণের যন্ত্রপাতি দিতে দেরী করা হতো যার কারণে ভুগেছে ইরাকের কৃষিখাত।
“দ্বৈত ব্যবহারের” ধোঁয়া তুলে সার, কীটনাশক প্রায়ই বিলম্বিত করা হতো চাষের মৌসুম চলে না যাওয়া পর্যন্ত। স্থগিত করা হতো ডেইরি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং ভেড়া ও ছাগল পালনের টিকাও।
অধ্যাপক জয় গর্ডন তার লেখায় বলেন, ১৯৯০ এর দশকে ইরাকে মানবিক সহায়তা পণ্য প্রবেশ করতে না দেয়ায় মূল ভূমিকা রেখেছে দুটি দেশ-যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন।
কোটি কোটি ডলার মূল্যের জরুরি পণ্য যেমন খাদ্য উৎপাদন, পানি পরিশোধন, রাস্তা সংস্কার, বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং টেলিযোগাযোগর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের প্রবেশ ইরাকে স্থগিত রাখা হয়েছে টানা কয়েক মাস, এমনকি বছর ধরে।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি ছিল- এসব পণ্যের “দ্বৈত ব্যবহার” রয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য বেসামরিক এবং সামরিক-দুইভাবেই ব্যবহার করা যায়।যেমন বিদ্যুৎ, রাস্তা, টেলিফোন, নির্মাণ সরঞ্জাম, যানবাহন ইত্যাদি।
এ কারণে ইরাকের সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা না করেই এসব পণ্য সরবরাহ স্থগিত করা হতো। উদাহরণ হিসেবে অধ্যাপক জয় গর্ডন বলেন, ওষুধ প্রবেশে অনুমোদন ছিল। কিন্তু ওষুধকে ঠান্ডা ও কার্যক্ষম রাখতে যে রেফ্রিজারেটর ও ট্রাক দরকার তা দেয়া হতো না।
পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট খুলে দেয়া হয়েছিল ব্যাপক হারে কলেরা ও টাইফয়েড ছড়িয়ে পড়ার পর। কিন্তু এটিকে সচল রাখতে যে জেনারেটর দরকার তা দেয়া হয়নি। কারণ এটির “দ্বৈত ব্যবহার” ছিল।
একই কারণে প্রায় সব ধরনের কম্পিউটার সরঞ্জামাদিও দেয়া হতো না, যদিও হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এগুলো জরুরি ছিল। সেচ এবং পানির লবণাক্ততা দূরীকরণের যন্ত্রপাতি দিতে দেরী করা হতো যার কারণে ভুগেছে ইরাকের কৃষিখাত।
“দ্বৈত ব্যবহারের” ধোঁয়া তুলে সার, কীটনাশক প্রায়ই বিলম্বিত করা হতো চাষের মৌসুম চলে না যাওয়া পর্যন্ত। স্থগিত করা হতো ডেইরি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং ভেড়া ও ছাগল পালনের টিকাও।
ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট
আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের অস্বাভাবিক চুক্তিতে গোপনীয়তা
গেরি শিহ, অনন্ত গুপ্ত
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
মানবজমিন
ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জে এক আবেদন অনুযায়ী, গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি থেকে হ্রাসকৃত মূল্যে বিদ্যুৎ চাইছেন বাংলাদেশি কর্মকর্তা। বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার। এর মধ্যদিয়ে ভারতের বিলিয়নিয়ার গৌতম আদানির বিপুল পরিমাণ ‘স্ক্রুটিনি’র লক্ষণ বেরিয়ে এলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে একথা লিখেছেন সাংবাদিক গেরি শিহ এবং অনন্ত গুপ্ত। এতে বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়ার কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে ৩রা ফেব্রুয়ারি। তা মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে স্টক এক্সচেঞ্জ। এতে আদানি পাওয়ার ভারতের নিয়ন্ত্রকদের বলেছে যে, লোভনীয় বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে ডিসকাউন্ট বিবেচনা করতে আমাদের কাছে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু তা বছরের পর বছর রয়েছে গোপনীয়তায় আবৃত। পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) চুক্তি ১৬৩ পৃষ্ঠার। গোপন এই চুক্তি ডিসেম্বরে হাতে পেয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট এবং তারা এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
এই গোপন চুক্তির অধীনে দরিদ্র ও ঋণের ভারে জর্জরিত বাংলাদেশ আদানি প্রতিষ্ঠিত কয়লাচালিত নতুন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের জন্য উচ্চ মূল্য পরিশোধ করবে। গৌতম আদানি হলেন- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘদিনের মিত্র। তাদের কাছ থেকে যে মূল্যে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে তা অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। উপরন্তু এতে যেসব শর্ত রয়েছে তাতে অস্বাভাবিক শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে আছে কয়লার মূল্য বেঁধে না দেয়া। এর অর্থ হলো- বাংলাদেশ উচ্চ মূল্য চার্জ করতে পারেন আদানি। তিনি নিজস্ব শিপিং নেটওয়ার্ক এবং কয়লা হ্যান্ডেলিং বিষয়ক পোর্টের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করবেন বলেই মনে হচ্ছে।
২০১৫ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর আদানি এবং বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ)। সফরে ভারতীয় নেতৃত্ব বাংলাদেশ সরকারের কাছে বাংলাদেশে ভারতীয় ব্যবসাকে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আদানির সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি কর্মকর্তারা। স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, তারা এর শর্ত নিয়ে নতুন করে সমঝোতা প্রত্যাশা করেন। কিন্তু এ সপ্তাহে ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতে লেখা চিঠিতে আদানি পাওয়ার বলেছে, বিদ্যুৎ কেনা বিষয়ে এই চুক্তি নতুন করে আলোচনা করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন আদানির মুখপাত্র বর্ষা চাইনানি। এমনকি অনুরোধ করলেও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ওদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদানির সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্কাগতিতে। ভারত সহ আন্তর্জাতিক ব্যবসা সার্কেলে তিনি সবার নজরে এসেছেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহে তার সাতটি কোম্পানি পাবলিক ট্রেড করে মারাত্মক লোকসান খেয়েছে। বাজারে হারিয়েছে কমপক্ষে ১০০০০ কোটি ডলার। এটা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ রিসার্স প্রকাশিত ২৪শে জানুয়ারির এক রিপোর্টের পর। এতে তার ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন আদানির শীর্ষ নির্বাহীরা। তারা বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমালোচনা ভারতের ওপরও আঘাত হেনেছে।
গত বছর ওয়াশিংটন পোস্ট একটি তদন্ত করে। তাতে দেখা যায়, আদানি পাওয়ার বিষয়ক প্রকল্প ব্যাপকভাবে আয়কর নীতি ভঙ্গ করেছে। আইন পরিবর্তন করা হয়েছে মোদি সরকারের অধীনে। এর ফলে এই বিলিয়নিয়ারের প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার সেভ করতে সক্ষম হয়েছে।
(অনলাইন দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন