মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

নেতৃত্ব-সঙ্কটে কওমী জগৎ এবং প্রতিকার

ভাবনা-৪৯

কওমী মাদরাসার বিশাল বলয় নিয়ে কওমী-জগৎ মূলত কওমী মাদরাসার আলিম-উলামা ও ছাত্ররা এ জগতের মূল-বাসিন্দা স্বীকৃতমতে, বাংলাদেশে কওমী মাদরাসার যাত্রা ১৯০১ সালে হাটহাজারী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সেই থেকে এ দেশের মাটিতে সুগভীর শেকড় গেড়েছে কওমী জগৎ দারুল উলূম হাটহাজারীর স্বপ্নদ্রষ্টা ও মূল পরিকল্পনাকারী শাইখুল কুল মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ রহ. এবং তিন সহযোগী সুফী আজীজুর রহমান রহ., মাওলানা আব্দুল হামীদ মাদারশাহী রহ. ও মাওলানা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী রহ.’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় নববী-নকশার যে ইসলামী শিক্ষার গোড়াপত্তন ঘটে, তাই আজ কালজয়ী কওমী মাদরাসা-শিক্ষাব্যবস্থা হিসাবে স্বীকৃত ও পরিচিত কালে-কালে এসব কওমী মাদরাসা থেকে এমনসব ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব জন্ম নিয়েছেন, যাঁরা কেবল ধর্মীয় বলয়ে নয়, জাতীয় পর্যায়েও ঈর্ষণীয় অবদান রেখে গেছেন এঁদের মধ্যে মাওলানা আতাহার আলী সিলেটী রহ., মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ., মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুযুর রহ., মাওলানা সিদ্দীক আহমদ রহ., মাওলানা হাজী ইউনুস সাহেব রহ., মাওলানা আহমদ শফী রহ., মাওলানা হারুন ইসলামাবাদী রহ., মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. প্রমুখ আলিম নেতৃত্ব  তাঁদের গড়ে ওঠার কাহিনী হয়তো আমাদের সামনে নেই, আছে বিশাল অবদানের সামান্য কিছু স্মৃতি বলতে দুঃখ হয়, আমাদের এখানে ইতিহাস থাকে অজানা, স্মৃতি থাকে অচেনা আর মূল্যায়ন হয় অদেখা কতো বড়বড় মানুষ এ মাটিতে জন্মেছেন, কেউ তাঁদের খবর রাখেনি পরপ্রজন্ম চেনে না আপন পূর্বসূরীদের ফলে, যে বুক সাহসে আকাশে ওড়ার কথা ছিলো, হীমন্যতায় সে বুক আছড়ে পড়ে মাটিতে আজ আমরা নিথর-নিরব-নির্বল

কেন কওমীদের মধ্যে নেতৃত্ব গড়ে ওঠার হার প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি? অবহেলায় কি এ ফল? না কি নেতৃত্ব গড়ার দুর্বলতার বিষফল? বলতে দ্বিধা নেই, ইদানীং আমাদের যাঁরা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে বড় হতে পেরেছেন; পরিচয়ে পরিচিত হতে পেরেছেনতাঁরা জানি না কি এক অজানা কারণে আত্মকেন্দ্রিকতায় ডুবে গেছেন অলক্ষে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত তাঁরা নিজে বড় হবার চেয়ে অপরকে বড় করে তোলার মধ্যে সৃষ্টিসুখের উল্লাস যে কতো মধুরসে কথা আমরা বুঝি না আমাদের কেউকেউ আছেন, কওমীর ডালভাত খেয়ে; কওমীর পাটিতে শুয়ে বড় হয়ে আজ কওমীকেই ভুলে গেছেন ক্যারিয়ারগড়তে তারা এখন য়ুরোপ-আমেরিকায় সুখের নীড় গড়েছেন তাদের যদি সবিনয়ে প্রশ্ন করা হয়: কওমী মাদরাসায় যাঁদের সাহায্যের টাকায় খেয়েপড়ে আজ কওমকে পেছনে ফেলে বিদেশের মাটিতে সুখের নীড় গড়ে তুলেছেন, তাঁদের জন্য এই কি প্রতিদান? আপনার বস্তার চাল খেয়ে কেউ যদি অপরের মাটি কাটতে যায়, তাকে কি বলবেন? ইংরেজরা যখন আমাদের শাসন-শোষণ করে, আমাদের সম্পদ লুট করে বৃটিশ-নগরী গড়ে তোলে,তাদের আমরা বলিলুটেরা আর যারা আমাদের ডালভাত খেয়ে আমাদের মেধা চুরি করে বাইরে ক্যারিয়ার গড়ে তোলে, তাদের কি বলবো? জবাব পাঠকদের কাছে সান্ত্বনা পেতাম যদি দেখতাম, তাঁরা বাইরে গিয়ে এখানকার সন্তানদেরও ক্যারিয়ার গড়ায় সহযোগিতা করছেন কিন্তু হচ্ছে কি এসব? এ আত্মকেন্দ্রিকতার কি কোন কৈফিয়ত আছে? আমাদের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় একটি প্রবাদ আছে: ছাগলে বিয়ায় শিয়ালে খায় কওমীরাও বলতে পারেন: কওমীরা বিয়ায় বিদেশে খায় আমি বলছি না, আপনি সুযোগ পেলেও দেশে পচে মরুন তা হবে কেন? দেশের সন্তানদের জন্যও কিছু করুননিজে খান অন্যকেও খাওয়ানসেটাকে তো আত্মকেন্দ্রিকতা বলছি নাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে আপনি যান, সেখানে থাকুন কিন্তু আপনার মাতৃভূমিকে, আপনার কওমী প্রতিষ্ঠানটিকে ভুলে যাবেন নাপারলে কিছু মেধাবীকে নিয়ে গিয়ে গড়ে তুলুনসেখানে যা কিছু ভালো আছে, যেমন: পরিচালনাজ্ঞান, ব্যবস্থাপনাজ্ঞান, তাফসীর, হাদীস-গবেষণা, ফিকাহ-গবেষণা ইত্যাদি অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশে পাঠানকওমীদের অনেক উপকার হবেদেশে আপনার বিরাট পরিচয়, ভালোআর দশ জনকেও পরিচিত করিয়ে দিন, তাতে আপনি কিন্তু আরও বড় হবেন, ছোট হবেন নাচেরাগের আলো ধার দিলে কি আলো কমে? আত্মকেন্দ্রিকতা কিন্তু এক ধরনের সংকীর্ণতা, উদারতার ঘোরতর শত্রু

নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বড়দের বড় ভূমিকা রাখতে হয়তা না হলে, নিচ থেকে নেতৃত্ব গড়ার পথ সংকীর্ণ হয়ে যায়দারুল উলূম দেওবন্দের ৫৮ বছরের পরিচালক হাকীমুল ইসলাম কারী তয়্যিব সাহেব রহ.’ কথা কারও অজানা থাকার কথা নয়আজও দারুল উলূমের দেয়ালে-দেয়ালে তাঁর অবদান প্রস্ফুটিত হয়ে আছেতাঁর বিভিন্ন ওয়াযের সংকলনখুতবাতে হাকীমুল ইসলামসাত খণ্ডে সমাপ্ত, বাজারে পাওয়া যায়সেখানে এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, বড়দের বদান্যতায় কেমন করে তিনি গড়ে উঠলেনতাঁর কথায়: তিনি ছিলেন আজাদীর বীর সিপাহসালার শাইখুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী রহ.’ ছাত্রকারী সাহেব যখন দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করলেন, নিজেকে আলিম ভাবার ধৃষ্টতা দেখাতে পারেননিখুব লজ্জাশীল ছিলেনকিন্তু হযরত শাইখুল হিন্দ মানিক চিনতে ভুল করেননি কারী সাহেব রহ. বলছেন: হযরত শাইখুল হিন্দ যখন কোন প্রোগ্রামে যেতেন, অবশ্যই তাকে ডেকে নিতেন এবং মঞ্চে পাশে বসিয়ে রাখতেন হযরত শাইখুল হিন্দ বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে দশ মিনিট সময় রেখে দিয়ে বলতেন, এখন আযীয কারী তয়্যিব সাহেব বয়ান করবেন একদিন হলো কি, ঝড়ে কারী সাহেবের কাপড় এমন ভিজে গেলো, গায়ে রাখাটাই দুষ্কর হয়ে পড়লো প্রোগামে গিয়ে কারী তয়্যিব সাহেব কাপড় বদলে একটি কম্বল গায়ে জড়িয়ে শাইখুল হিন্দের পাশে বসে রইলেন যথারীতি হযরত শাইখুল হিন্দ দশ মিনিট আগে বয়ান শেষ করে বলে দিলেন, আমার পাশে এক নওজোয়ান দরবেশকে আজ নিয়ে এসেছি বাকি দশ মিনিট তিনিই বয়ান করবেন হাকীমুল ইসলাম কারী তয়্যিব সাহেব রহ. বলেছেন: হযরত শাইখুল হিন্দ এভাবে গড়ে না তুললে তিনি মঞ্চে কখনোই সাবলীল হতে পারতেন না  এভাবেই আমাদের বড়রা তাঁদের অনুজদের গড়ে তুলেছেন এখানে আত্মকেন্দ্রিকতার লেশমাত্র ছিলো না; ছিলো না বলেই দারুল উলূম নামের জ্ঞানের কারখানা থেকে জ্ঞানীরা, সংস্কারকরা, খতীবরা, মুজাহিদরা গড়ে উঠেছেন একে-একে

নেতৃত্ব বলতে আসলে কি বোঝায়? সোজা কথায় আমি যদি বলি, নেতৃত্ব মানে এমন এক দায়িত্ব যা একটি জাতি বা গোষ্ঠীর মন-মেজাজ বুঝে তাঁদের কল্যাণ সাধনে নির্ধারিত পথ পদ্ধতিতে অগ্রসর হওয়া এবং জাতি বা গোষ্ঠীকে আদর্শিকভাবে সংগঠিত করা রাখাআধুনিক দৃষ্টিতে ইসলামের পরিকাঠামোয় নেতৃত্ব বলতে বলা হচ্ছে:

قیادت کا بنیادی مقصد انسانوں کی درست رہنمائی اور ان کے مسائل کا آسان حل فراہم کرنا ہوتا ہے-باشعور، باصلاحیت اور دیانت دار قیادت نہ صرف انسانی مسائل کے حل میں ہمیشہ مستعد و سرگرم رہتی ہے بلکہ معاشرے کی خوشحالی، امن اور ترقی میں بھی کلیدی کردار ادا کرتی ہے-قیادت متعین مقاصد کے حصول کے لئے عوام کو بلاجبر و اکراہ ایک طے شدہ سمت پر گامزن کرنے کانام ہے-تاثیر و کردار کے مجموعہ کوقیادت کہتے ہیں-کسی بھی اسلامی ریاست کیلئے ایک صالح قومی قیادت و لیڈر شپ لازمی و ابدی امر ہے جو اپنے دائرہ اختیار اور ریاست کی حدود میں حدود اللہ اور حدود العباد کاپوری طرح سے نفاذ ممکن  بناتی ہے -  اگر دنیا میں صالح قیادت کے قیام کااصول اور فرد کے باہمی تعلق کی حدود و قیود واضح کردی جائیں تو انسان کے لئے یہ ممکن ہے کہ وہ معاشرتی، معاشی، مذہبی ظلم و جبر سے نجات پالے”  

(প্রফেসর ড. গোলাম রসূল, পাকিস্তা)

(নেতৃত্বের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো, অধীনস্থদেরকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা এবং তাদের সমস্যার সহজ সমাধান প্রদান করা সচেতন, মেধাবী এবং সৎ নেতৃত্ব শুধুমাত্র মানুষের সমস্যা সমাধানে সর্বদা পরিশ্রমী ও সক্রিয়ই নয়, বরঞ্চ সমাজের সমৃদ্ধি, শান্তি ও উন্নয়নেও মূল ভূমিকা পালন করে। নেতৃত্ব নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানুষকে একটি নির্ধারিত পথে অগ্রসর হতে উৎসাহিত করার ক্ষমতার নাম প্রভাব ও ভূমিকার সম্মিলনেই নেতৃত্ব যে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য একটি সৎ জাতীয় নেতৃত্ব অপরিহার্য ও চিরন্তন বিষয়, যা আপন ক্ষমতার সীমার মধ্যে থেকে আল্লাহর আদেশ এবং বান্দার অধিকারের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব করে যদি পৃথিবীতে ন্যায়পরায়ন নেতৃত্বের মূলনীতি এবং নাগরিকের পরস্পরিক সম্পর্কের সীমা বুঝিয়ে দেয়া যায়, তবে মানুষের পক্ষে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অন্যভাবে বলা হচ্ছে:

In Islam, the concept of leadership must act only to implement Allah’s laws on earth as the essence and primary responsibility of leaders. Leadership in Islam, as a trust (Amanah), and a sacred position that can solve the problems of humanity and guide them to the eternal betterment of here and hereafter. Although developments of several leadership models are just to solve the problem. On the other hand, leadership in Islam must think about humanity and the satisfaction of Allah the Almighty. The results of the field study indicate that there is a significant relationship between the spiritual values of leadership with Rabbani’s leadership practices. The results suggest that organizational direction requires divine or spiritual-based leadership. (www.intechopen.com) (ইসলামে নেতৃত্বের ধারণাটি অবশ্যই প্রাথমিক দায়িত্ব হিসাবে পৃথিবীতে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে। ইসলামে নেতৃত্ব একটি বিশ্বাস (আমানাহ) এবং একটি পবিত্র অবস্থান যা মানবতার সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং তাদের ইহকাল ও পরকালের অনন্ত উন্নতির দিকে পরিচালিত করবে। যদিও বর্তমানে নেতৃত্বের বিভিন্ন প্রকারের সংস্করণ আছে, শুধুমাত্র সমস্যা সমাধানের জন্য। অন্যদিকে, ইসলামে নেতৃত্বকে অবশ্যই মানবতা এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা ভাবতে হবে। মাঠ পর্যায়ের ফলাফল নির্দেশ করে যে, আল্লাহওয়ালাদের নেতৃত্বের অনুশীলনের সাথে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। ফলাফলগুলো নির্দেশ করে, প্রাতিষ্ঠানিক দিকনির্দেশনার জন্য আসমানী বা আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব প্রয়োজন।)

এখন এ নেতৃত্বের গুণাবলী শিষ্যদের মাঝে প্রবিষ্ট করা কাদের কাজ? স্বীকার করি, যে কেউ এসব গুণের অধিকারী হতে পারেন না যতোক্ষণ না তার মধ্যে নিজ থেকে জ্বলে ওঠার বাসনা জাগ্রত হয় আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দরসে এমন ছাত্র পাওয়া যাবে যারা পরশ পেলে জ্বলে উঠবে প্রয়োজন শুধু এদেরকে চিনতে পারা এবং লালন করা এ কাজ অবশ্যই বয়ঃজ্যেষ্ঠদের, শিক্ষকেদের  কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় না সহজেআমরা কেবল গতানুগতিক দরসের কিতাবী পড়াকে মুখ্য করে থাকিএতে আমাদের অবিকশিত প্রতিভাগুলি আর বিকাশের সুযোগ না পেয়ে ভিনপথে চলে যায়দুর্ভাগ্যের ইতিহাস কিন্তু আমাদের খুব বেশি অতীতের নয়তাই যদি হতো, আমাদের পর্বসূরী নক্ষত্রগুলোকে আমরা দেখতে পেতাম নাযেমন ধরুন, আমীরে শরীয়ত হাফেজ্জী হুযুর রহ.’ কথাহাকীমুল উম্মাহ হযরত আশরাফ আলী থানভী রহ.’ পরশ না পেলে আমরা কি পেতাম আমীরে শরীয়তকে? ধরুন, চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার হাজী ইউনুস সাহেব রহ.’ কথামাওলানা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী রহ. এবং মুফতী আজীজুল হক রহ.’ পরশ না পেলে আমরা কোথায় পেতাম শাইখুল আরব ওয়াল আযমকে? মুফতী আজীজুল হক রহ.’ পরশ না পেলে কোথায় পেতাম আমরা  হযরত আলী আহমদ বোয়ালভী রহ. হযরত ইসহাক আল গাযী রহ.কে? মাওলানা জমীরুদ্দীন সাহেব রহ.’ পরশ না পেলে কোথায় পেতাম আমরা মুফতী আজীজুল হক রহ. ও  মাওলানা হারুন বাবুনগরী রহ.কে?  মুফতী আজীজুল হক রহ.’র সাহচর্য  বিনে কোথায় পাওয়া যেতো সুলতান আহমদ নানুপুরী রহ.কে? এমন করে আরও অনেক নাম নেয়া যায়এরপর কেমন করে যেন সব এলামেলোর দিকে চলে গেলোআমাদের নক্ষত্রগুলো আর আকাশে দেখা গেলো নানতুন নক্ষত্রও মিলিয়ে যেতে লাগলোপাঠক, যাঁদের কথা বলে এলাম, তাঁরা যে কেবল ধর্মীয় নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন, তা নয়তাঁরা বিভিন্ন ক্রান্তিকালে জাতিকেও দিশা দিয়েছেন তাঁদের অমূল্য বক্তব্য ও পরামর্শ দিয়ে ; নেতৃত্ব দিয়েছেন উদারভাবেইতিহাসে সেসব আজও জ্বলজ্বল করে

কওমী জগৎ আজ নেতৃত্ব-সঙ্কটে জর্জরিত কথা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না  পাঠক, এখানে এসেই নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যেতে চায়বারবার প্রশ্ন জাগে: কেন সঙ্কট? স্বীকার করতে হয়, আমাদের মূল জায়গাটা কিন্তু দারস বা শ্রেণীআমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা যদি ওখানে সচেতন হন, কারা কোন পথে যাবার যোগ্যতা রাখে, কিসে তার সহজাত প্রতিভা আছেসে বিবেচনায় লালন করেন, তবে একটি প্রজন্ম জন্ম নেবেআমাদের যা মেধা আছে, সে তুলনায় প্রতিভা অনেক কমফলে, মেধা আর প্রতিভার সমন্বয়ে নেতৃত্ব গড়ে ওঠার পথ সংকুচিত হয়ে গেছেদারস যদি যুগের প্রয়োজনকে সামনে রেখে দিনদিন সংস্কার হয়, সৈনিকরা ততো উন্নত হয়যুদ্ধের মাঠে যেমন অস্ত্রের ব্যবহার হয় তেমনি বৃদ্ধিবৃত্তিক মাঠে বক্তব্য, ‍যুক্তি-তর্ক, উপাস্থাপনার কৌশল, সমাসাময়িক ভূ-রাজনীতিক সংলাপ-কৌশল ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়বর্তমান যুগে পরিভাষার যুদ্ধ একটি বড় যুদ্ধপ্রতিপক্ষের ছুঁড়ে দেয়া নতুন পরিভাষার বিরুদ্ধে ব্যাখ্যামূলক পাল্টাযুক্তি দিয়ে নিজেদের সৃষ্ট পরিভাষা দিয়ে অপরপক্ষকে ঘায়েল করার সক্ষমতা থাকতে হবে সৈনিকদেরতবেই তারা বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে টিকে থাকবে  যুদ্ধ কি জিহাদের এক প্রকার নয়? এসব অর্জনের ভিত্তি হবে দারস জন্য দারসের দুটি শর্ত অবশ্যই প্রযোজ্য: . মুদাররিস বা শিক্ষকের সমসাময়িক তথ্য তত্ত্বমিশ্রিত দারস . দারসের প্রতি ছাত্রদের দায়বদ্ধতা আন্তরিকতা এখানে বড় ভূমিকা কিন্তু মুদাররিসের যেমন আরোগ্যের ক্ষেত্রে ডাক্তারের আর মুদাররিসের দেখানো পথে নিজেকে তৈরি করার দায়িত্ব ছাত্রের যেমন পথ্য খাওয়ার জিম্মাদারী রোগীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেরুলে ছাত্রের দায়িত্ব বড় হয়ে দাঁড়ায় দারসের ভিত্তিকে উচ্চশিক্ষা গবেষণার মাধ্যমে নিজের মধ্যে যোগ্যতা সৃষ্টির দায়িত্ব একান্তই ছাত্রের অন্যথা হলে, সেটাই হবে ছাত্রের বড় খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা এখানে যদি যথার্থ অর্থে কাজ করা যায়, তবে আমাদের আফসোস করতে হবে না

সবাই যে নেতৃত্বের যোগ্য হবেন তেমন নয় আল্লাহ তায়ালা একেকজনের মধ্যে একেক যোগ্য দিয়ে থাকেন কারও কম, কারও বেশি তবে বান্দার চেষ্টায় আল্লাহ ইচ্ছা হলে অসম্ভব কিছু নয়, নিরাশ হওয়ারও কারণ নেই কেবল আল্লাহ জন্য নিবেদিত হয়ে মাখলুকের সেবার নিয়ত থাকলে নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা ও তামান্না অবৈধ নয় হযরত সুলায়মান . যদি আল্লাহ নিয়ামাতের শোকরিয়া আদায়ের জন্য বাদশাহী চাইতে পারেন, আমরা কেন স্রষ্টার আনুগত্য মানবতার সেবার জন্য নেতৃত্বের যোগ্যতা চাইতে পারবো না? মনে রাখতে হবে, নেতৃত্ব যেহেতু এক গুরুভার যার জন্য কিয়ামাতের দিন আল্লাহ দরবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে, তার জন্য যোগ্যতাও তেমন উচ্চদরজার হতে হবে এর অনিবার্য মূলশর্ত: খোদাভীতি পার্থিব যোগ্যতার দিকে তাকালে যে কয়টি বিষয় প্রধানত বাঞ্ছনীয়, তা হলো: . বুনিয়াদী শরীফ বংশের সন্তান হওয়া, . সাহেবে নিসবাত বা ইসলাহী সিলসিলার অন্তর্ভুক্ত হওয়া, . শিক্ষাগত তথ্যগত উচ্চযোগ্যতা থাকা, . উদার মানসিকতার অধিকারী হওয়া, . সচ্চরিত্রবান হওয়া, . মানুষের সাথে মিশার মানসিকতা থাকা এবং . মাখলুকের প্রতি ভালবাসা জাগ্রত থাকা এসব যোগ্যতার অভাব হলে ব্যক্তি নেতৃত্বের অযোগ্য বলে বিবেচিত হন হযরত উমর রজি.’ সেই বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে: তুমি বাজারে যাওয়ার আগে বাজারের মাসআলা শিখে নাও, নচেৎ তুমি কাউকে ধোঁকা দেবে বা ধোঁকা খাবে নেতৃত্বের বেলায়ও তেমন যুক্তি একে শরীয়তের ভাষায় বলে: ইলমুল হা-ল্ আমাদের দেশে বলে: মন্ত্র না জেনে সাপের গর্তে হাত দিও না প্রসঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলে লেখার ইতি টানছি একবার এক ব্যক্তি হযরত থানভী রহ.’ দরবারে এসে বললো: হযরত আমি সিয়াসাত (রাজনীতি) করতে চাই অনুমতি দিন হযরত বললেন: না, তোমার জন্য রাজনীতি জায়েয হবে না লোকটি বললো, হযরত কী আশ্চর্য! আপনি কি দেখছেন না, হযরত মাদানী সিয়াসাত করছেন, নেতৃত্বও দিচ্ছেন! অথচ আমাকে বললেন: আমার জন্য রাজনীতি বৈধ হবে না তখন হাকীমুল উম্মাহ রহ. লোকটিকে যে অমূল্য কথাটি বললেন, তা কালান্তরে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। হযরত বললেন:

پہلے تو مدنی بن جا پھر سیاست کر!

২০.০৬.২০২৩ 

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

সঙ্কট-সমাধানে কওমীদের একটি মহাসমাবেশ ডাকা দরকার

ভাবনা-৪৮


ভেতরে ও  বাইরে বাংলাদেশ নিয়ে এক সঙ্কট চলছে এখন যেটুকু বোঝা যায়, সঙ্কটের এখন মধ্যাহ্ন চলছে প্রতিনিয়ত আসা খবর থেকে আন্দাজ করা যায়, সঙ্কট আরও বৃহত্তর সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে হতে পারে, সঙ্কটের পারদ উঠতে-উঠতে বিপদসীমার দিকে চলে যাবে সঙ্কটের পুরোটা রাজনৈতিক হলেও প্রভাব কিন্তু রাজনীতিকে ছাপিয়ে যাবে বলে মনে হয় ইয়েমেন, ইরাকের উদাহরণ ভুলে যাবার কারণ নেই প্রথম দিকটা রাজনৈতিক হলেও পরবর্তীতে সুদাসল আদায় করেছে বেকসুর জনসাধারণ আফগানিস্তানের বিষয়টি ভূ-রাজনৈতিক, তবুও ধকল গেছে সবার উপর দিয়ে যে প্রকৃতিতে বাংলাদেশ সঙ্কটের দিকে আপাতত এগুচ্ছে, মনে হচ্ছে, সামনে বিপদ ভারী আল্লাহ না করুন, তেমন কিছু হলে এমনিতেই জর্জরিত দেশের মানুষ নিরঙ্কুশ পতনের দিকে এগিয়ে যাবে আমার মনে হয়, স্বাধীন বাংলাদেশে এমন সঙ্কট এই প্রথম দেশের ভেতরে নির্বাচনবিমুখ বিভক্ত, আতঙ্কিত মানুষ, রাজনীতিক দীনতা আর বাইরেগণতান্ত্রিকপরিবেশ সৃষ্টিতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক চাপ অর্থনীতিকভাবে মানুষ এমনিতেই উচ্ছৃংখল দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে বিপর্যস্ত, আয়ের চেয়ে চাহিদা ভয়ানক গতিতে বেশি এবং কর্মহীনতা যত্রতত্রএমন পরিস্থিতিতে সঙ্কট ঘনীভূত হলে মানুষকে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর কাতারে দাঁড়াতে হবে ক্ষমতাশীনরা মানতে নারাজ বিরোধীদের কথা আর বিরোধীদের এক কথা: আগে পদত্যাগ, তারপরে কথা

দেশের সঙ্কটের সময় যখন কোন সমাধানে যাওয়া জটিল মনে হয়, তখনি কওমীদের এগিয়ে আসা উচিৎ যাঁরা ১. সরকারের সাথে সঙ্কট নিয়ে কথা বলবেন, . বিরোধীদলের সাথে কথা বলবেন, . একটি মহাসমাবেশ ডেকে দেশের স্বার্থে সঙ্কট সমাধানে একটি সম্মিলিত বিবৃতি ও প্রস্তাবনা পেশ করবেন এবং ৪. দেশব্যাপী একটি দোয়ার ব্যবস্থা করবেন এখানে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, কওমীরা কি সমাধান করতে পারবেন? পক্ষ-বিপক্ষ কি তাঁদের কথা শুনবে? দেখুন, সমাধান কিভাবে হবে বা আদৌ হবে কি নাএগুলো কেউ আগাম বলতে পারেন না ভবিষ্যৎ তো কেবল আল্লাহর হাতে তাই বলে কি চেষ্টাতে মানা আছে? মনে রাখতে হবে, কওমীরা এ দেশেরই নাগরিক, দেশ ও দশ নিয়ে তাঁদেরও দায়িত্ব আছে; দায়বদ্ধতা আছে তাঁরা মৌলিকভাবে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছেন, তাতে কারও আপত্তি নেই সাথেসাথে যখন দেশ ও দশ সঙ্কটে পড়বে, কওমীরা কি নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকতে পারবে? দেশ ও দশকে সঙ্কট থেকে উদ্ধারের চেষ্টা কি ধর্মীয় দায়িত্বের সাথে সাংঘর্ষিক? ধরে নিলাম, কওমীদের কথা ওরা রাখলো না তাতে কি? কওমীরা যে জাতীয় দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসলো, সে তো জাতীয় ইতিহাসে লেখা থাকবে কেউ কওমীদেরকে নির্বাসনে থাকা অসচেতন প্রজাতি বলে কটাক্ষ করার সাহস পাবে না প্রস্তাবগুলো দায়িত্বশীলগণ ভেবে দেখতে পারেন বলা তো যায় না, আল্লাহ কাকে দিয়ে কি কাজ করান

বলতে দ্বিধা নেই, জাতীয়ভাবে কওমীদের একঘরে থাকার অপবাদ দীর্ঘদিনের এখান থেকে মুক্তি মেলেনি বলে জাতীয়ভাবে তাঁদের মূল্যায়নও হয় না উর্ধতনমহল মনে করেন, এঁরা মোল্লা মানুষ, মসজিদ-মাদরাসা নিয়েই এঁদের জিন্দেগী জাতির জন্য তাঁরা কিইবা করতে পারেন? সে সক্ষমতা কি তাদের আছে? আমরা কওমীদেরকে প্রমাণ করতে হবে: আমাদের সে সক্ষমতা আছে এটা প্রমাণের মধ্যে লুকিয়ে আছে কওমীদের আত্মমর্যাদা ও বৃদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা কেবল দান-সদকা খাওয়া প্রজন্মের কটাক্ষমূলক তকমা লাগিয়ে বাস করা কি মর্যাদার? এমনও দেখেছি, ধনাঢ্যদের  কেউকেউ মাদরাসায় এ জন্য সন্তানদের পাঠান না যে, সেখানে গেলে অমর্যাদাকর রীতি গ্রহণ করতে হয় কেন এমন বলা? বলতে দ্বিধা নেই, এখানে আমাদেরও ঘাটতি আছে ইসলামে সাধাসিধা জীবনাচার আছে, তাই বলে কি অমর্যাদাকর জীবন যাপন করতে হবে? কওমীরা মূলত একটি দায়ীর জামায়াত এঁরা ইসলামের দিকে জাতিকে ডাকবেন; নির্দেশনা দেবেন সঙ্গতকারণে, আমাদের কোন আচরণে যদি মানুষ সাধারণে অস্বস্তি বোধ করে এবং দ্বীনের দিকে আসতে দ্বিাবোধ করে, তবে সে দায় আমাদের যেমন আপনি এমন এক লোকালয়ে গেলেন যেখানে সবাই পরিস্কার ও পরিপাটি কাপড় পরাকে পছন্দ করে কিন্তু আপনি গেলেন অপরিপাটি ও ঢিলেঢালা পোষাকে এতে সেখানকার বাসিন্দারা মানসিকভাবে এতোটাই বিগড়ে যাবেন, দায়ী হিসাবে আপনার কথায় মনযোগ দিতে চাইবে না ফল কি দাঁড়ালো? আপনার কারণে দ্বীনের মুখাপেক্ষী মানুষ দ্বীনের কথা শুনতে পারলো না এর দায় একান্তই দায়ীর মদীনার উদাহরণ দেখুন! প্রথম মুবাল্লিগ বা দায়ী হিসাবে মহানবী সা. মাদীনায় পাঠালেন হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের রজি:কে কিন্তু কে এই মুসআব ইবনে উমায়ের?  মুসআব ইবনে উমায়ের মক্কার সেই যুবক যে সবচেয়ে দামী আতরে ও পরিপাটি পোষাকে চলতেন তিনি ছিলেন অন্যান্য যুবকদের মডেল মদীনার অধিবাসীরাও ছিলো চাল-চলনে পরিপাটি, পরিচ্ছন্নতার প্রতীক সঙ্গতকারণে, মুসআব ইবনে উমায়ের রজি:র স্বভাবগত চালচলনের কারণে মদীনার বিত্তশালী, নেতৃত্বাস্থানীয় শ্রেণীর কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতে সহজ হয় তাঁর দাওয়াতে পরের বছর দশ হাজার মুসলিম মক্কায় আসেন রসুলুল্লাহ সা.’র কাছে ইসলাম গ্রহণ করতে যাঁদের মধ্যে মুয়ায ইবনে জাবাল রজি.’র মতো নক্ষত্রতুল্য সাহাবীও ছিলেন কওমীরাও যদি মাদরাসার পরিবেশ পরিপাটি-পরিচ্ছন্ন রাখেন তাতে কি সমস্যা হবে? স্বভাবতই ধনাঢ্যশ্রেণী চাইবে তাদের সন্তান কওমীতে পড়ুক কিন্তু মিসকীন-মিসকীন ভাব নিয়ে নয় পোষাকে-আষাকে পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি হওয়া তো দোষের নয় সেদিকটায় কওমীদের প্রচুর দুর্বলতা আছে তবে ইদানীং কিছু পরিবর্তন যে হচ্ছে না, তা নয়

যাক, বলছিলাম, দায়ী হিসাবে দাওয়াত গ্রহণকারীদের পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই সেদিক থেকে বলতে হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের স্বার্থে কওমীদের বলায় ও আচরণে শিক্ষিত ও পরিপাটি হওয়া বাঞ্ছনীয় সেদিকটায় নযর দিতে পারলে জাতি কওমীদের পদক্ষেপকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করতে চাইবে জাতি যখন কওমীদের আন্তরিকতাকে গ্রহণ করবে, জাতীয় পর্যায়ে কওমীদের অবদানের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে আজ দেশের এমন সঙ্কটের মুখে কওমী আলিম-উলামার কোন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসিত হবে কওমীদের মধ্য থেকে একটি প্রগতিশীল ও আধুনিক প্রজন্ম গড়ে উঠতে হবে যাঁরা সুন্নাহর মৌলিক অনুসরণকে সম্বল করে যুগের প্রয়োজনে আধুনিক ভাষা ও প্রযুক্তি রপ্ত করে জাতিকে এমন কিছু দেবে যা অন্যদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হবে না 

মহাসমাবেশ  যে কেবল সঙ্কটকালে করতে হবে, তা নয়। মাঝেমাঝেই সমাবেশ করে জাতিকে দ্বীনের পথে দা’ওয়াত দিতে হবে, নির্দেশনা দিতে হবে। দেশের আলিম-উলামার দায়িত্ব গতানুগতিক নেতানেত্রীর মতো নয়। তাঁদের দায়িত্ব ব্যাপক। তাই তাঁরা একদিকে যেমন দায়ী হিসাবে মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে ডাকবেন অন্যদিকে শাসক ও বিরোধীদলের দুর্বলতা ও ত্রুটি চিহ্নিত করে দেবেন। সমাবেশ সম্মিলিত ব্যনারে যেমন হতে পারে তেমনি হেফাজতে ইসলামের নামেও হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, সমাবেশের মেজাজ যেন রাজনৈতিক হয়ে না যায়; উচ্ছৃংখল-বক্তৃতা ও গোপন সওদাবাজি যেন উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে না পারে।

১৫.০৬.২০২৩  

মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩

মধ্যপ্রাচ্য-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং কওমীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা

ভাবনা-৪৭

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ একটি নব্য-স্বাধীন দেশের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্পর্ক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত, একটি মুসলিম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও উন্নয়নের বিকল্প ছিলো না সঙ্গতকারণে, ১৯৭৪ সালে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি সম্মেলনে তাজুদ্দীন আহমদ ও ভারতের তীব্র বিরোধিতা সত্বেও যোগদান করেন তাজুদ্দীন আহমদ ও ভারতের মত ছিলো: বাংলাদেশ যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শে গঠিত একটি রাষ্ট্র তাই তা ক্ষুণ্ন করে লাহোরে যাওয়া বাঞ্ছনীয় নয় কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান তাতে কর্ণপাত না করে বাস্তবতার খাতিরে লাহোরের মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সম্মেলনে যোগদান করেন বস্তুত, তাঁর সে সিদ্ধান্ত ছিলো অত্যন্ত দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উল্লেখ্য, ১৯৭২-এ প্রথম দেশে ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রথম জনসমাবেশে দেয়া ভাষণে ঘোষণা করেন: ‘আমি মুসলমান; আমার বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র’ (আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, পৃ: ৬০৫) তাঁর এ ঘোষণা বাংলাদেশকে একটি অনিবার্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম আবুল মনসুর আহমদ তাঁর লেখাআমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছরগ্রন্থে সে-কথা উল্লেখ করে গেছেন কিন্তু প্রশাসনের ভেতর লুকিয়ে থাকা উগ্রসেক্যুলার অপশক্তি ও বামধারার লোকজনের প্রভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে দেশে ইসলামী রাজনীতি ও আলিম-সমাজের তৎপরতার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়  মরহুম আবুল মনসুর আহমদ তাঁর গ্রন্থেরমুজিবহীন বাংলাদেশঅধ্যায়ে আরও লিখেন:

মুজিবের অনুপস্থিতিতে যে সব অশুভ ঘটনা ঘটিতে পারে বলিয়া আমার আন্দায ছিল, আসলে তার চেয়ে অনেক বেশী অশুভ ঘটনা ঘটিতে লাগিল সব ঘটিতে লাগিল চিন্তায় কাজে উভয়তঃইএটা শুরু হইল প্রবাসী সরকার দেশে ফিরিবার আগে হইতেইপ্রথম ঘটনাটা ঘটিল স্বাধীনতার প্রায় শুরুতেই-১৮ই ডিসেম্বরে দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদযাপনের জন্য দিল্লীর রামলীলা ময়দানে এক বিরাট জনসভা হইলসে সভায় ভারতের দেশরক্ষা মন্ত্রী জগজীবনরাম বক্তৃতায় বলিলেন: ‘এতদিন পাকিস্তানের গর্বের বিষয় ছিল, সে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রগত পরশু হইতে সে গৌরব বর্তাইয়াছে বাংলাদেশের উপরবাংলাদেশই এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রআকাশবাণীর খবর অনুসারে মি: রামের এই উক্তি সেই বিরাট জনসভায় বিপুলভাবে অভিনন্দিত হইয়াছিলকিন্তু বাংলাদেশের সদ্য-দীক্ষিত একজন অফিসার মি: রামের উক্তির তীব্র প্রতিবাদ করিয়া বলিলেন: ‘মি: রামের স্মরণ রাখা উচিৎ ছিল বাংলাদেশ একটি সেকিউলার রাষ্ট্র, মুসলিম রাষ্ট্র নয়আমি বুঝিলাম, এটা যদি বাংলাদেশ সরকারের সরকারী অভিমত হয়, তবে বিপদের কথা

মরহুম আহমদ আরও লিখেন:

প্রবাসী সরকার ঢাকায় ফিরার সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণিত হইল যে, এটা সরকারী অভিমতদেশে ফিরিয়াই তারা যা দেখাইলেন, তাতে রেডিও-টেলিভিশনে কোরান-তেলাওয়াত , ‘খোদা হাফেয’, ‘সালামালেকুমবন্ধ হইয়া গেলতার বদলেসুপ্রভাত’, ‘শুভ সন্ধ্যা’, ‘শুভরাত্রিইত্যাদি সম্বোধন প্রথা চালু হইল  

শুধু মরহুম আহমদই নন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক আওয়ামী লীগ সমর্থক , এল খতিব তাঁর লেখাকারা মুজিবের হত্যাকারী?’ (Who killed Mujib) গ্রন্থে ৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন:

দেশ স্বাধীন হবার পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা প্রতিদিন প্রচলিতইনশাল্লাহএবংআসসালামু আলাইকুমশব্দ দুটি শুনলেও রাগে ফেটে পড়তো (১ম প্রকাশ: ১৯৯২, শিখা প্রকাশনী, ঢাকা)

এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ ক্ষুদ্ধ হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলেতা না হলে, বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ বছরের শাসনতান্ত্রিক, সামাজিক উন্নয়নের ইতিহাস ভিন্ন হতোপাঠক আশা করি বুঝতে পারছেন, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে চিহ্নিত কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রে কওমী আলিম-সমাজ কিভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েনশুধু তাই নয়, বেশ কিছু আলিম ব্যক্তিত্বকে কারারুদ্ধ করা হয় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের দোহাই দিয়েএরপর ১৯৭৫ সালে পটপরিবর্তনের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরোত্তম বহুদলীয় রাজনীতির পথ খুলে দিলে কওমী আলিম-সমাজ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ; দুর্ভিক্ষগ্রস্থ ও বিপর্যস্ত অর্থনীতি; দারিদ্র্যে বিবর্ণ সমাজসব মিলিয়ে অসহনীয় পরিবেশ আলিম-সমাজ নিরুপায় হয়ে মাদরাসাগুলোকে গড়ে তোলার দিকে প্রাথমিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন যদিও কওমী মাদরাসা দেশীয় মুসলমানের সাহায্য-সহযোগিতায় চলে কিন্তু নব্য একটি দেশে বিপর্যস্ত অর্থনীতির কারণে দেশীয় চাঁদা, দান ইত্যাদি সংগ্রহে সীমাবদ্ধতা বাধা হয়ে দাঁড়া তাই তাঁরা অনন্যোপায় হয়ে শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শে দেশের বাইরে যেতে মনস্থ করলেন সে মোতাবেক ১৯৭৮ সালে সর্বপ্রথম (সংগৃহিত তথ্যানুসারে) বাংলাদেশের সুপরিচিত কওমী মাদরাসা চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার তৎকালীন পরিচালক সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ-ব্যক্তিত্ব শাহ মুহাম্মাদ ইউনুস সাহেব রহ. (যিনি আলিম-সমাজে হাজী সাহেব হুজুর নামে পরিচিত ছিলেন) আরব আমিরাত সফরে যান। এরপর চট্টগ্রামের জিরি মাদরাসার মুফতী নুরুল হক সাহেব রহ.  সৌদি আরব ও দুবাই সফর করেন (১৯৭৮)। এরপর নিকটবর্তী কোন সময়ে (আনুমানিক ১৯৭৯-১৯৮০) দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মাওলানা কাসেম সাহেব ফতেহপুরী রহ. আরব আমিরাত সফর করেন। আনুমানিক ১৯৮০-১৯৮১ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ফটিকছড়ির জামিয়া আরবিয়া নছিরুল ইসলাম (নাজিরহাট বড় মাদরাসা)-এর পরিচালক আল্লামা হাফিয শামছুদ্দীন সাহেব রহ. সৌদি আরব সফর করেন। এখানে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে: কওমী আলিম-সমাজ যখন মধ্যপ্রাচ্যে যান তাঁরা সেখানকার ধনাঢ্যব্যক্তিবর্গ বা সংস্থা থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে পূর্ব থেকে সৃষ্ট নেতিবাচক ধারণানির্ভর প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এখানকার কওমী-আলিমসমাজ সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে সকল-প্রকার নেতিবাচক ধারণার বিপরীতে ইতিবাচক ধারণা প্রদান করেন এবং তাদেরকে এ কথাটি বোঝাতে সক্ষম হন যে, বাংলাদেশ মোটেও হিন্দু-প্রভাবিত রাষ্ট্র নয়। এখানে হাজার-হাজার মাদরাসা, মসজিদ, মক্তব আছে। এখানে সাহায্যের প্রয়োজন আছে। এখানকার নব্বই শতাংশ মুসলমান। আরব-ভাইদের প্রতি এদেশের মুসলমানের আন্তরিক ভালোবাসা আছে। এখানে ধনী মুসলিমরাষ্ট্রগুলোর সাহায্যের প্রয়োজন আছে; এখানে মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে; এখানে দরিদ্র-মানুষের আধিক্য আছে; এখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে গভীর নলকূপ বসানোর প্রয়োজন আছে; এখানকার সরকারকে অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়া উচিৎ ইত্যাদি। প্রসঙ্গত বলতে হয়, সে-সময়কার পরিস্থিতিতে আরব-সমাজে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেয়ার বিষয়টা ছিলো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। এমন কি এখানকার বাস্তবতা প্রমাণে কওমী আলিম-সমাজ আরব-সাহায্যদাতা ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশ সফর করারও আমন্ত্রণ জানান। পরে দেখা যায়, কওমী-আলিমসমাজের প্রাণান্তকর চেষ্টায় আরব-সমাজের তৃণমূলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বিদূরিত হয়। এভাবে সময়ের ব্যবধানে তৃণমূলের উক্ত পরিবর্তন আরব-সমাজের উচ্চস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে কওমী আলিম-ব্যক্তিত্ববৃন্দের সাথে আরব-সমাজের উর্দ্ধতনমহলের বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাতের কারণে আরব-প্রশাসনেও বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণার উদয় হয়। এরই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে পবিত্র মক্কা ও মদীনার সম্মানিত ইমামগণ ও সৌদি আরবের জাতীয় স্পীকার চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ির জামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর পরিদর্শনে বাংলাদেশ সফর ('৯০-এর দশক) করেন যা সরকারের পক্ষেও আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ফলে, একদিকে যেমন দেশের দরিদ্র এলাকায় মানবিক সাহায্য আসতে শুরু করে পাশাপাশি কওমী আলিম-সমাজের এ ভিত্তিগত দা'ওয়াতের সুফল চলে যায় বাংলাদেশ সরকারের হাতে ('৭৬-৮১')তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংযোগ ও পাশাপাশি কওমী আলিম-সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের সংযোগএ দু'য়ের সংমিশ্রণে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। বাংলাদেশে আসতে শুরু করে বৈদেশিক সাহায্যের একটি বিশাল অংশ যা এখানকার পরিকাঠামো নির্মাণে অসামান্য অবদান রাখে। এর সাথে শুরু হলো মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমশক্তি রফতানীর ধারা। বলতে দ্বিধা নেই, এখনও কওমী আলিমসমাজের যে অংশ মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষত বিভিন্ন মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা সার্বক্ষণিকভাবে আরব-সমাজে দেশ ও জাতি সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট। আমরা অনেকেই জানি না, তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অসংখ্য শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে ঢুকতে সক্ষম হয়েছেন। প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্মলগ্নে কওমী-সন্তানদের এ অসামান্য অবদান ইতিহাস একদিন সঠিকভাবেই বিচার করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, ইতিহাসের এ অনস্বীকার্য বাস্তবতাকে এ জাতি মূল্যায়ন করতে কেবল ব্যর্থই থেকে যায়নি উপরন্তু জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সংগ্রামে অবিভক্ত জাতিসত্ত্বার স্বাদ ভোগ করতেও অক্ষম থেকে গেছে।

পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক আলিম-উলামাও জানেনা, মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কওমী আলিমদের কতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়ে গেছেসাধারণ শিক্ষিতরা মনে করেন, এঁরা মসজিদ-মাদরাসা নিয়েই থাকেন; দান-সদকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেনএঁদের জাতীয় অবদান- বা কি? সাধারণ মনে রাখে না: রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিমুক্ত আলিমশ্রেণী নিম্নমধ্যবিত্তের জীবন ধারণ করে রাষ্ট্রকে কিভাবে সাহায্য করেছে এবং করছেতাঁরা যখন মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে যান, বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে দেশের প্রতিনিধি হয়ে আরব বণিকশ্রেণীর কাছে বাংলাদেশের সমস্যার চিত্র বর্ণনা তুলে ধরেন নিঃস্বার্থভাবেমাদরাসা-পড়ুয়া হিসাবে আরবী জানা থাকার কারণে কওমীদের পক্ষে আরবী-এলিটদের বোঝানো অনেক সহজ, যা অন্যদের পক্ষে কঠিনঅথচ তাঁরা কোন সরকারী সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া দেশের জন্য নীরবে অবদান রেখে যাচ্ছেন, তা কি অস্বীকার করা যায়? তাঁদের কারণে, দরিদ্রশ্রেণী নগদ অবকাঠামোগত সাহায্য পায়; এখানে মসজিদ-মাদারাসা গড়ে ওঠে; এতিমখানা গড়ে ওঠে; বাড়ি-বাড়ি নলকূপ বসে ইত্যাদিকিন্তু রাষ্ট্র তাঁদের কোন মূল্যায়ন করা তো দূরের কথা, অবদানের স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয় নাউপরন্তু তাঁদের ভাগ্যে জোটে প্রতিক্রিয়াশীল, স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের শত্রু ইত্যকার তকমাকিন্তু যারা কাগজে-কলমে দেশ বেচে দেয়, তারা হয় দেশপ্রেমিক-টুকু ভাগশেষ নিয়ে দেশ কতোদিন চলবে, তা কেউ জানে না

১৩.০৬.২০২৩

 

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...