বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩

জিনিসের দাম বেশি: বললে কি ডিজিটালে মামলা খাব?

ভাবনা-৩৬

কিছু বলতে ডর লাগে। বুঝেন-ই তো, যদি বলার অপরাধে মামলা খাই? বাজারে গেলে কারও সাথে কিছু বলতে ডর লাগে। কে আবার কোন কথাকে কোথায় নিয়ে যায়, বলা তো যায় না! পত্রিকায় দেখি, অমুক গ্রেফতার ডিজিটাল আইনে। দোষটা কি? কি যেনো লিখেছে কে জানে? ওর আর রক্ষা নেই। তাই কিছু বলতে গেলে অদৃশ্য এক জালি যেনো চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়। মনে হয়, কারাগারে আছি। সঙ্গতকারণে, কিছু বলতে গিয়ে মুখ হটে আসে। এই যে লিখছি, বুকে অজানা ভয়; সংকোচ। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় যখন ভাবি: আমি স্বাধীন। আমার কথা, মতামত আমি বলতে পারবো নির্দ্বিধায়। এমন কল্পনা করতে মাঝেমাঝে কণ্ঠ শুকিয়ে যেতে চায়। পরিবার মানা করে কিছু লিখতে, বলতে অজানা বিপদের আশঙ্কায়। যারা সরকারের বলে জানি ওরা আপন হলেও, সংকোচ করি। মেপে-মেপে বলতে হয়। কোনটা যে সরকারের পক্ষে আর বিপক্ষে, বোঝা দায়। আবার কোন দোষ না করেও ভুগতে হয়। ফোন করে বলবে: আমি অমুক সংস্থা থেকে বলছি। আপনি কি করেন? ইত্যাদি। ডর লাগিয়ে দেয়া আর কি। সবসময় নিরাপত্তাহীনতা লাগে। সাদাপোষাকে কেউ এলো না তো! কলিং বেল বাজলে সবাই আঁতকে উঠি। দৌড়ে গিয়ে আগে খাপ দিয়ে দেখি। এসে যদি বলে: থানায় যেতে হবে। রক্তচাপের জন্য অষুধ খাই না; খাই টেনশন না হতে। রমজান এলো, কাল থেকে। গেলো বছরের মতো এ  বছর আর হয়ে উঠছে না। বুঝতে পারছেন না! মধ্যবিত্ত হয়ে জন্মেছি, সে কি কম দোষের? কথায় বলে না, অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। আগে মানুষজন সরকারকে দু’কথা বলে মন হালকা করার মওকা পেতো। এখন তাও খোলা নেই। বেপারীরা বলে, কিনছি বেশি দামে, কম দামে বেচবো কেমন করে? আমরা তো ছোট বেপারী। বড়োদের কেউ কিছু করে না। পরিষদ আছে, জনপ্রতিনিধি আছেকারও কাছে সান্ত্বনা নেই। ওরাও বা কি করবে? আমাদের না বলার আছে, না সওয়ার আছে। মাছের বাজার, গোশতের বাজারসে তো হিমালয় দেখা। কাপড় বলে ধুয়ে দাও আর পকেট বলে সয়ে নাও। গেলো বছর যা এনেছি দশ টাকায় সে এখন প্রমোশনে ত্রিশ টাকায়। বাক আমাদের তবুও স্বাধীন। বলতেই হবে। সেটা না বললে কি অমানুষ আর অকৃতজ্ঞ হবো না? ভাবছি, বাজারে যে দাম বেশিসে কথা বললে কি ডিজিটাল আইনে মামলা খাবো? বুঝতে পারছি না। দুরুদুরু বুকে লিখলাম দু’কলম।
২৩.০৩.২৩          

বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩

হাফেজ্জী হুযুর রহ. ও মূলধারার ইসলামী রাজনীতি

ভাবনা-৩৫

প্রচলিত ইসলামী রাজনীতি এবং মূলধারার ইসলামী রাজনীতি নিয়ে পার্থক্যের দর্শন আমি অনুভব করি বেশ আগে থেকেই এর মূল কারণ, ৮০র দশকের প্রারম্ভে আমীরে শরীয়াত হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ.-র নেতৃত্বে গঠিতবাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন’-এর সাথে আমার সম্পৃক্ততা হযরতের জীবদ্দশায় বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুযোগ হয়নি কারণ, দুটো ভিন্নভিন্ন বিষয়ের অস্তিত্ব প্রকাশের আগে পার্থক্যের ধারণা করা অসম্ভব  যেমন, রাত বা দিন অস্তিত্ব লাভ করার পূর্বে রাত-দিনের ভিন্নতা নির্ণয় করা সম্ভব নয় এক-ই যুক্তিতে হযরত হাফেজ্জী হযুরের রাজনীতি বা অন্দোলনপরবর্তী ইসলামী রাজনীতির আকৃতি ও চরিত্র দর্শিত না হলে প্রচলিত ইসলামী রাজনীতি ও মূলধারার ইসলামী রাজনীতির পার্থক্য নির্ণয়ের ধারণার উম্মেষ হতো না যাঁরা সে-সময়ে খেলাফত আন্দোলনের চরিত্র ও আচরণ প্রত্যক্ষ করেননি, তাঁদের পক্ষে উক্ত তর্কের মর্ম উপলব্ধি করা দুষ্কর হবে ১৯৮১ সালের ১১ই নভেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত হাফেজ্জী হুযুরের রাজনীতিক প্রক্রিয়াগুলোকে পর্যবেক্ষণ করলে একজন সচেতন মানুষের যে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে, তা ইসলামী রাজনীতির মূলধারা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে হাফেজ্জী হুযুরের রাজনীতিক গতি-প্রকৃতিকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়: এক. আন্দোলন, দুই. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

হুযুরেরখেলাফত আন্দোলননামেই ছিলো ঐতিহাসিক এক সম্বন্ধ ও তাৎপর্য সচেতন পাঠকমাত্রেই জানেন, ইসলামের খেলাফত-ব্যবস্থা মুসলিম শাসন-ইতিহাসের সর্বোৎকৃষ্ঠ স্বর্ণযুগ সেই আবেগবাহিত এক আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯১৯ সালে ভারতে, তুরষ্কে উসমানীয় খেলাফত বহাল রাখার দাবিতে এ আন্দোলন চলে ১৯২৪ পর্যন্ত এরপর এক-ই নামে নতুন এক আন্দোলন গড়ে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশে হাফেজ্জী হুযুরের নেতৃত্বে স্বভাবতই, হাফেজ্জী হুযুরের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও উপমহাদেশবিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে এমন আন্দোলনে দেশব্যাপী কৌতুহল ও আগ্রহের সৃষ্টি হয়  এ আন্দোলন যে দ্বিমতে আক্রান্ত হয়নি তা নয় সবকিছুকে অতিক্রম করে খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ইতিহাসে এক মাইলফলক হিসাবে তার নাম লেখাতে পেরেছেসেটা যেমন সমসাময়িক কালে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির উদাহরণ হিসাবে মানুষকে আকর্ষণ করে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মধ্যপন্থায় অবস্থান করে আত্মশুদ্ধিনির্ভর ও গঠনমূলক সংস্কারের পথ দেখায় বলাবাহুল্য, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে আলিম-সমাজের রাজনীতিক তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে বহুদলীয় রাজনীতি অনুমোদিত হলে ইসলামী রাজনীতির দ্বার উম্মোচিত হয় সেই ধারাবাহিকতায় মঞ্চে আসে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন তবে প্রকৃত বিচারে হাফেজ্জী হুযুরের জীবদ্দশায় খেলাফত আন্দোলন কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগুলোই মূলত বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির এক ব্যতিক্রমধর্মী অধ্যায় ১৯৮১-তে আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও মূলত হাফেজ্জী হুযুর রাষ্ট্রসংস্কারের চিন্তা করেন আরও আগে থেকে এর প্রমাণ মেলে ১৯৭৮ সালে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে বৈঠকে তিনি সংবিধানেবিসমিল্লাহির রহমানির রহীমযুক্ত করাসহ বিভিন্ন সংস্কারের জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের কিছু কর্তব্যের কথা তুলে ধরেন ঐ বছরের ২৯শে মে তাঁর মৌখিক বক্তব্যগুলো তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বরাবরে একটি একটি খোলা চিঠি হস্তান্তর করেন বাংলাদেশের কোন ইসলামী নেতার জন্য এ ছিলো ইতিহাসের প্রথম নযীর তাছাড়া, মন্ত্রী, প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের কাছে হাফেজ্জী হুযুরের দাওয়াতী চিঠি দিয়ে খেলাফত আন্দোলনের কর্মসূচীর প্রতি সমর্থন চাওয়া হতো হযরতের জীবনের শেষ পর্যন্ত এ ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত ছিলো সরকারী-বেসরকারী উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছেও পৌঁছানো হতো লিখিত দাওয়াত দেশব্যাপী দলের কর্মসূচীতে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা, থানা ও মাদরাসা সফর করে আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা ছিলো বিরামহীন ফলে, পুরো দেশে খেলাফত আন্দোলন নিয়ে অভূতপূর্ব উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় তৃণমূল থেকে উপরতলা অবধি সর্বক্ষেত্রে খেলাফত আন্দোলন ছিলো আলোচনার বিষয়

হাফেজ্জী হুযুরের আন্দোলনের বিস্ময়কর এক দিক ছিলোতাওবার রাজনীতি উপমহাদেশের রাজনীতিতে: সে ধর্মীয় হোক বা ধর্মনিরপেক্ষ, এ ছিলো ব্যতিক্রম এবং অভিনব আমার আজও মনে পড়ছে, তাওবার রাজনীতি প্রশাসন, পুলিশ এমন কি সমাজের সর্বস্তরে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেঢাকা স্টেডিয়ামের লাগোয়া বাইতুল মুকাররমের দক্ষিণ ফটকে দ্বিতীয় তাওবা দিবসের (আনু:১৯৮৩) ইতিহাজ্জ্বোল মহাসমাবেশের কথা বিস্মৃত হবার নয়তখন এরশাদের আমল সেদিন মঞ্চের সামনাসামনি ছিলাম আমি হাফেজ্জী হুযুর যখন তাওবার মুনাজাতে হাত তুললেন, দুনিয়া যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলো সে এক হৃদয়বিদারী দৃশ্য! আলিম-উলামা, ছাত্র-জনতা, পুলিশের গগণবিদারী রোনাজারিতে ভেঙ্গে গেলো সব শৃঙ্খল মনে হচ্ছিলো, আসমানের ফরিশতারাও বুঝি নেমে এলো জমিনেসিলেটের প্রখ্যাত আলিম মাওলানা আব্দুল গাফফার সাহেব রহ. মতভিন্নতার কারণে ক্ষমা চেয়ে হযরতের দুপা জড়িয়ে যে ক্রন্দনবিজড়িত দৃশ্যের অবতারণা করেছিলেন, তা কখনও বিস্মৃত হবার নয়সর্বত্র হযরতের আহ্বান ছিলো: আমরা গুনাহগার; সকল অরাজকতা আমাদের গুনাহ কারণতাই, আসুন সকলে তাওবা করিহযরতের স্লোগান ছিলো: এক হও নেক হও; দুনিয়ার মুমিন এক হও নেক হওআত্মশুদ্ধির সাথেসাথে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের যে রাজনীতি বা আন্দোলনের দৃষ্টান্ত হযরত হাফেজ্জী হুযুর সৃষ্টি করেন, তা এককথায় অভূতপূর্বযতোদূর মনে পড়ে, তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং এরশাদের সাথে সাক্ষাতে বলেছিলেন, আপনারা ক্ষমতায় থাকুনআমি ক্ষমতা কেড়ে নিতে আসিনিকিন্তু আল্লাহর জমীনে আল্লাহর হুকুম কায়েম করুন

 

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হযরতের হাফেজ্জী হুযুরের অংশগ্রহণ ছিলো আরেক ইতিহাসবাংলাদেশের কোন ইসলামী নেতার এমন পদক্ষেপ আর দেখা যায়নিপ্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাতের পর ১৯৮১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনতাঁর প্রতীক ছিলো, বট গাছ নির্বাচনে তিনি তৃতীয় স্থান লাভ করেন বটে কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অর্জিত ভোটের সংখ্যাধিক্যে হযরত হাফেজ্জী হুযুর আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেনতিনি উক্ত নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেনএরপর আসে ১৯৮৬ সালএবারও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারী হিসাবমতে ১৫ লক্ষ ১০ হাজার ৫৬ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেনশতকরা হিসাবে তাঁর ভোটের হার ছিলো .৬৯ শতাংশতবে জনশ্রুতি ছিলো, আসলে হাফেজ্জী হুযুর সর্বাধিক ভোট অর্জন করেন কিন্তু কারচুপি করে তাঁকে দ্বিতীয় স্থান দেখানো হয়দু’-দুটো  প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় কেউকেউ এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হুযুরকে দিয়ে দেশ চালানোর সক্ষমতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলেনএখানে বিষয়টি পরিস্কার হওয়া প্রয়োজনহযরতের রাজনীতির আগাগোড়া পর্যবেক্ষণে কখনও মনে হয়নি তিনি নিছক ক্ষমতামুখী রাজনীতি করেছেনতার রাজনীতি ছিলো মূলত ইসলামের নির্দেশিত পথে ব্যক্তি, সমাজ রাষ্ট্রসংস্কারদল গঠন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণে তিনি যা চেয়েছিলেন, তা হলো: . আলিম-সমাজকে কেবল মাদরাসাকেন্দ্রিক না রেখে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে জাতীয় উন্নয়নে শরীক করা, . জাতীয়ভাবে আলিম-উলামার প্রভাব সৃষ্টি এবং দেশের নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখা এবং . দেশে নির্ভেজাল ইসলামী রাজনীতি ও নেতৃত্ব সৃষ্টিযেহেতু দেশে তৎকালীন সময়ে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থা চালু ছিলো, তাই কোন প্রকার অরাজকতা সৃষ্টি না করে উক্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যতোদূর সম্ভব সংস্কার-আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জনসাধারণকে ইসলামের নির্দেশআমর বিল মারূফ নাহী আনিল মুনকার”(সৎকাজের আদেশ অসৎকাজের নিষেধ)- সাথে পরিচিত করে তোলা ছিলো হাফেজ্জী হুযুরের রাজনীতিক কৌশল বিষয়গুলোকে উপলব্ধি করতে না পারলে হাফেজ্জী হযুরের রাজনীতির মূল্যায়ন সমূহকঠিন হবেরাজনৈতিক দল গঠন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে তিনি ঘরমুখো আলিম-সমাজকে যেভাবে সচেতন উজ্জীবিত করে গেছেন, তার প্রভাব আজও বহমান

এভাবেই দেশে কিছু সময়ের জন্য হলেও মূলধারার ইসলামী রাজনীতি দৃশ্যপটে হাজির হয় হযরত হাফেজ্জী হুযুরের নেতৃত্বেমূলত হুযুরের রাজনীতিক পদ্ধতিই মূলধারাইসলামী রাজনীতিএটা কেউ অস্বীকার করতে পারেন নাপ্রশ্ন করতে পারেন, মূলধারার রাজনীতির মাপকাঠি কি? আমাদের জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে মূলধারার রাজনীতির মাপকাঠি হলো, পঞ্চদশ শতকে শেখ আহমদ সিরহিন্দী মুজাদ্দিদ আলফে সানী রহ. বাদশাহ আকবরের দ্বীনে ইলাহীর মুকাবিলায় যে রাজনীতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেনইতিহাসের অকাট্য গ্রন্থগুলো দেখুন, দেখবেন মুজাদ্দিদ আলফে সানীর গৃহীত পদ্ধতিই অনুসরণ করেছিলেন হযরত হাফেজ্জী হুযুর রহ.মুজাদ্দিদ সাহেব যেভাবে সরাসরি বাদশাহকে দাওয়াত দেন, তাঁর আমীর ওমারাকে চিঠি দিয়ে ইসলামের মূলধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানান, হযরত হাফেজ্জী হুযুরও সেভাবে দাওয়াত পৌছে দেনমুজাদ্দিদ সাহেব মূলত রাসূলুল্লাহ সা.- অনুসৃত পথেই তাঁর কর্মসূচী এগিয়ে নেনআমার মনে হয়, আজও মার-মার, কাট-কাটধর্মী নেতিবাচক রাজনীতির পরিবর্তে হাফেজ্জী হুযুরের অনুসৃত মূলধারার রাজনীতি আমাদেরকে পথ দেখাবেআন্দোলনের পাশাপাশি আমাদেরকে এও বুঝতে হবে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাইরের শত্রুকে নিমন্ত্রণ করে এবং আমাদের শক্তিকে নেতিবাচক পথে ক্ষয় করে দুর্বল করে দেয়সঙ্গতকারণে, বলতে হয়, হযরত হাফেজ্জী হুযুর রহ. যে মূলধারার ইসলামী রাজনীতির উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন, সেটাকে সঠিক মূল্যয়ন করা প্রয়োজনঅন্যথায়, বিপদ আমাদের পদেপদে সঙ্গী হবে।

২২.০৩.২৩

সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩

ধর্মনিরপেক্ষতা গণতন্ত্র ও আমরা

ভাবনা-৩৪

গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বিশ্বে এখন বহুল পরিচিত ও প্রচলিত একটি পরিভাষা বা মতবাদ মুসলিমদের সচেতন অংশ বিলক্ষণ জানেন, কুরআনের আয়াতের অর্থ, উদ্দেশ্য ও ভাব বুঝতে প্রেক্ষাপট জানা জরুরী যাশানে নুযূলহিসাবে পরিচিত বিনা শানে নুযূলে অর্থ ও উদ্দেশ্য জানা সম্ভব নয় তেমনি প্রচলিত পরিভাষা বা মতবাদের উদ্দেশ্য বুঝতে সেগুলোরও শানে নুযূল জানা অপরিহার্য এতে করে মূল সমস্যা, সমস্যার সমাধানকল্পে প্রদর্শিত প্রতিক্রিয়া এবং প্রভাব জানা সহজ হয় আমাদের এখানে কথায়-কথায় গণতন্ত্র বা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা যারা বলেন, সম্ভবত তারা জানেন না অথবা পড়ে দেখেননি গণতন্ত্র বা ধর্মনিরপেক্ষতার সৃষ্টিকারণযাকে বলছি, শানে নুযূল এর ওপর একেকজনের একেক সংজ্ঞা কেউ বলেছেন, অমুক এটা বলেছেন, তমুক ওটা বলেছেন ইত্যাদি ইতিহাসূত্রে জানা যায়, মধ্যযুগে পাশ্চাত্যে রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় খ্রীষ্টান চার্চের কর্তৃত্বপরায়নতার সাথে রাজার দ্বন্দ্ব এবং এর  বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সরূপ গড়ে ওঠে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা বিশেষত প্রাচীন গ্রীস এ ধারণার জন্মক্ষেত্র বলে পরিচিত সে-সময় ইতালীর দার্শনিক নিকোলো মেকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) মধ্যযুগীয় খ্রীষ্টীয় প্রভাব থেকে জাগতিক জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে ধর্মের উর্ধ্বে স্থান দিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্রের ধারণা প্রদান করেন বিগত একশো বছর ধরে রোমান ধর্মগুরু ও পোপদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তা থেকেই মূলত মার্টিন লুথারের (১৪৮৩-১৫৪৬) প্রোটেস্টান্ট ক্যাথলিক সংস্কার আন্দোলন গড়ে ওঠে এগুলো ছিলো তৎকালীন খ্রীষ্টান-সমাজের নিজস্ব সমস্যা এর মূলে ছিলো, চার্চের কর্তৃত্বপরায়নতা থেকে সাধারণ প্রশাসনকে রক্ষা এবং খ্রীষ্টধর্মকে সংস্কার করার আকাঙ্খা এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক নির্মল কুমার সেন বলছেন, পোপ শাসিত রোমান ক্যাথলিক ধর্মপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধর্ম সংস্কার অন্দোলনের সূচনা হয় জার্মানীতে মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে সামন্ততন্ত্রের অবসানকল্পে এটাই ছিলো বুর্জোয়াদের প্রথম সংগ্রাম লুথার ছিলেন জার্মানীর উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মশাস্ত্রের অধ্যাপক আবাল্য খ্রীষ্টান ধর্মের প্রতি অনুরাগী লুথারের কাছে পোপের কার্যকলাপ শাস্ত্রবিরোধী বলে মনে হয়েছিল পাপ মোছনের জন্য পোপের অনুচরদের ক্ষমাপত্র বিক্রয়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে পোপ এবং ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে লুথারের বিদ্রোহের সূচনা”(রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস পৃ:৬০, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৮৬, পশ্চিবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, কলিকাতা) এভাবেই রাষ্ট্র পরিচালনায় চার্চের কর্তৃত্ব নির্মূলে আন্দোলন চূড়ান্তরূপ পরিগ্রহ করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রচিন্তার সূচনা  হয় এ পথ ধরে আসে প্রচলিত গণতন্ত্রের ধারণা গণতন্ত্রের মূল প্রবক্তাদের মধ্যে যাকে প্রধান ভাবা হয়, ‍তিনিভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) তিনি বিশ্বাস করতেন, ধর্ম যার-যার ব্যক্তিগত; শাসনে এর কোন অধিকার থাকতে পারে না গণতন্ত্রের আরও দুজন প্রবক্তা হলেন: মোন্টেসক্যু (Montesqiue) ও রুশো (Rousseau) এ তিন দার্শনিকই ছিলেন ফরাসী পাকিস্তান শরীয়া আদালতের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক ও প্রখ্যাত ফকীহ মুফতী তাকী উসমানী ভেলতেয়ারের দর্শন নিয়ে লিখছেন,ভলতেয়ারের মতাদর্শের আরেকটি কথা, যেটা সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে, তা হচ্ছে এই যে, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত একটি বিষয় এবং এমন কোন অথরিটি নেই, যা কাউকে অপরের ধর্ম সম্পর্কে সঠিক বা ভুল সাব্যস্ত করার প্রবক্তা করে তুলতে পারে। বরং এটা মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার মানুষ ইচ্ছা করলে মূর্তিপুজা করতে পারে; ইচ্ছা করলে কোন ঐশী-ধর্ম গ্রহণ করতে পারে; ইচ্ছা করলে ইহুদী বা খ্রীষ্টান হতে পারে। এটা নিছক তার নিজের বিষয় এখানে চার্চেরও হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই; সরকার তথা রাষ্ট্রেরও হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই হকুমতের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই” (ইসলাম ও রাজনীতি পৃ: ১০১, ১ম প্রকাশ ২০১৫, মাকতাবাতুল হেরা ঢাকা) অপর দার্শনিক রুশো সামাজিক সন্ধির (১৭৬২) ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, স্বাধীন এবং মুক্ত মানুষের পারস্পরিক চুক্তিই রাষ্ট্রনৈতিক সংগঠনের ভিত্তি তাঁর এ মতবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লব সংঘটিত হয় এই তত্ত্বকে সম্বল করে ১৮৬৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূলবাণী বলে খ্যাতজনগণের সরকার, জনগণের কর্তৃক এবং জনগণের জন্যপ্রচার করেন এভাবেই আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বে কথিত গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসি (এখানে Demos থেকে এসেছে জনগণ এবং Kratos থেকে এসেছে ক্ষমতা বা শাসন) প্রচলিত রয়েছে সবকিছু পর্যালোচনা করে বলা যায়, সেক্যুলারিজম ও গণতন্ত্র এক অপরের পরিপূরকও রক্ষক  তাহলে বোঝা গেলো, যেসব সমস্যার কারণে পাশ্চাত্যে ধর্মনিরপেক্ষতা আর গণতন্ত্র এসেছে, সেসব একান্তই তাদের সমস্যা, অন্যদের নয়। কিন্তু আজ অষুধ খেতে হচ্ছে পৃথিবীর তাবৎ বাসিন্দার। আমরা যখন বলি, বিদেশী হস্তক্ষেপ কাম্য নয়, প্রশ্ন করি: ধর্মনিরপেক্ষতা আর কথিত গণতন্ত্র তো বাইরের সমস্যাজনিত ফল, আমরা কেন প্রয়োগ করছি? বিদেশী হস্তক্ষেপ তো এগুলোর মধ্য দিয়ে আসছে। যারা ওগুলোর জন্ম দিয়েছে, প্রচার চালাচ্ছে, তারা তো বাইবেলে হাত রেখে শপথ নেয়। তখন কি সাম্প্রদায়িকতা হয় না? সেখানেও তো সংখ্যালঘু আছে। তাহলে আমরা কেন কুরআন ছুঁয়ে বা সামনে রেখে বা আল্লাহর নামে শপথ নিতে পারি না? আসলে মানসিকভাবে আমরা আজও ওদের গোলাম। স্বাধীনভাবে কথা বলার বা কাজ করার অধিকার তো আমাদের শাসক ও রাজনৈতিকেরা আগেই বিলিয়ে বসে আছেন। য়ূরোপে এখন খ্রীষ্টধর্মীয় রাজনৈতিক দল শক্তিশালী হয়েছে। ওখানে মৌলবাদী বলা হয় না কেন? ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতায়, ওদেরকে সাম্প্রদায়িক বলা হয় না কেন? দোষ কি শুধু আমাদের ইসলামী রাজনীতি নিয়ে? এখানে ইসলাম নিয়ে কথা বললে স্বাধীনতাবিরোধী হয়। তাহলে ভোটের আগে টুপি মাথায় দিয়ে মুমিন সাজার কসরত কেন? এগুলো কি ধাপ্পাবাজি নয়? আমাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে আমাদের ধর্মীয় ও জাতীয় মূল্যবোধ দিয়ে। বিদেশী দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে নয়।

২০.০৩.২৩ 

শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩

নজরুল: সাহিত্যকে যিনি দিয়েছেন প্রাণ

ভাবনা-৩৩

বিদ্রোহী কবি; জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কলমের দ্রোহ যেনো পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়। নজরুলের জন্ম না হলে, বাংলা সাহিত্য কোন দিন যৌবন খুঁজে পেতো না। বৃদ্ধের মতো ন্যুব্জ হয়ে চলা বাংলা সাহিত্যকে নজরুল যে অমৃতরস পানে যৌবনত্ব দিয়ে গেছেনসে কাজ অন্য কেউ করে যেতে পারেননি। আমি সাহিত্যিক নই, সাহিত্যের খানিক খুশবু শুঁকেছি মাত্র। তাই নজরুল নিয়ে কথা বলার অধিকার কতোটুকু আছেসে প্রশ্নবানে আমাকে জর্জরিত করার মওকা সবার থাকলো। বাল্যে নজরুলের ছড়া-কবিতা পড়েছি বাল্যশিক্ষার দিনে। তখন নজরুলের পাশাপাশি কায়কোবাদ, গোলাম মোস্তফা, কাজী কাদের নেওয়াজ, কবি বন্দে আলী মিয়া, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি জসিম উদ্দিন, বেগম সুফিয়া কামাল, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমূখের কবিতা পড়েছি। এখনকার মতো মাজাভাঙ্গা কবিদের কবিতা পড়তে হয়নি কপালগুণে। কবি নজরুল ইসলাম অমূল্য যে তিন রত্ন দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে ঋণী করে গেছেন সেগুলো এক. সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, দুই. বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের কথা, তিন. বিদেশী বিশেষত আরবী-ফারসী শব্দের উদার ব্যবহার। সত্যি কথা বলতে কি, নজরুল বাংলা সাহিত্যে এক প্রবল ভূমিকম্প, যার আঘাতে অসমতল বন-জঙ্গল মাটিতে মিশে গিযে জন্ম নেয় সবুজ প্রকৃতি। নেমে আসে দমকা হাওয়া। রসহীন নিছক প্রেম-কাহিনীর বেড়াজালে আবদ্ধ বাংলা সাহিত্যকে তিনি দিলেন নতুন অভাবনীয় এক অমৃতরসযৌবনের ঝঞ্ঝা; চির উন্নত শিরের উদাত্ত আহ্বান আর বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের কথাযা আগে ভাবাও যেতো না। নজরুল শুধু যে সাহিত্যকে দিয়েছেন, তা নয়। নজরুল মানুষকে দিয়েছেন আত্মাধিকারের জন্য নিবেদিত হবার শিক্ষা; বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন জ্বালানোর দীক্ষা। “তুমি রবে তেতলার ‘পরে আমি রবো নিচে, তবুও তোমারে দেবতা বলিব সে ভরসা আজ মিছে।”এমন হুংকার সাহিত্যের দহলিজ থেকে কে দিয়েছে শুনি? “বল বীর বল উন্নত মম শির!” বলে যে বজ্রনিনাদ নজরুলকণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে আজও হৃদয়ের দেয়ালে-দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়, তাই তো আমাদের বাংলা-সাহিত্যের অদমনীয় অহংকার। তাঁর ছন্দমালা, শব্দচয়নসব কিছুতে নতুন অভ্যুদয় জ্বলেপুড়ে ছাই করে দিয়েছে গতানুগতিক সাহিত্যপ্রথাকে। নজরুল শিখিয়েছেন মুসলিম সাহিত্যসত্ত্বার মধ্য দিয়ে কেমন করে ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিতে হয়। ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি তার উৎকৃষ্টতম উদাহরণ। বলা চলে, বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাহিত্যসত্ত্বার যে অবহেলিত হাল বিরাজমান ছিলো, সেখানে নজরুল এনেছেন প্রলয়ঙ্কর ইনকিলাব। যে বাংলা সাহিত্যকে একদিন সংস্কৃতপন্থীরা অবজ্ঞা করে দূরে সরিযে রেখেছিলো, সেই বাংলা সাহিত্য নজরুলের সংস্পর্শে পেলো নতুন জীবন। এক কথায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যকে রেখে গেছেন এমন এক উচ্চতায়, যা কখনও এড়িয়ে যাবে না। আল্লাহ কবিকে মাগফিরাত দান করুন।

১৭.০৩.২৩            

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩

আমরা কেন সেক্যুলার হবো?

ভাবনা-৩২

একশ্রেণীর কথিত বুদ্ধিজীবি ক্রমাগত বলে আসছেন, বাংলাদেশ নাকি ধর্মনিরপেক্ষ। তাদের কথায় দেশ যদি ধর্মনিরপেক্ষ হয়, মানুষগুলো কি হবে? এ প্রশ্নের উত্তর কি তারা দিতে পেরেছেন? ওনারা বলেন, সংবিধানে লেখা আছে। ঠিক আছে, লেখায় যদি সব হয়, তবে কেন ওনারা কথায়-কথায় তুলনা দেন: গোয়ালার গরু গোয়ালে নেই, খাতায় আছে?  প্রশ্ন করতে পারি, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কি? এর চরিত্রই বা কি? তখন ওনারা বলে উঠেন: ধর্মনিরপেক্ষতার এই মানে, সেই অর্থ ইত্যাদি। বাংলাদেশের এক স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অন্যতম উপদেষ্টা প্রয়াত আকবর আলি খান লিখেছেন, “বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ইংলিশ-বাংলা অভিধান অনুসারে ইংরেজি সেক্যুলারিজম শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো ‘নৈতিকতা ও শিক্ষা ধর্মকেন্দ্রিক হওয়া উচিৎ নয়, এই মতবাদ; ইহজাগতিকতা; ইহবাদ। ’গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের বারো অনুচ্ছেদে সেক্যুলারিজমের অনুবাদ করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। কোন অনুবাদ সঠিক? দুটোই ঠিক। ইংরেজি সেক্যুলারিজম শব্দটির দুটো অভিধা রয়েছে। সেক্যুলারিজম শব্দটি একটি জীবনদর্শন, আবার এটি একটি শাসনতান্ত্রিক মতবাদও বটে।”(অবাক বাংলাদেশ বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি পৃ: ৮৯, দ্বিতীয় সংস্করণ: ২০১৭, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা।)  তিনি আরও লিখছেন, “তবে শাসনতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষতা ইহবাদের চেয়েও পুরোনো মতবাদ। রোমান ক্যাথলিক গির্জার বিরুদ্ধে শাসকদের ক্ষমতার লড়াইয়ে এই মতবাদ বিকশিত হয়। আপাতদৃষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজন এ জন্য যাতে এক ধর্ম অন্য ধর্মের ওপর প্রধান্য লাভ না করে। কিন্তু ইউরোপে সবাই ছিলো খ্রিষ্টান। ঝগড়াটা এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের ছিলো না; ঝগড়া ছিলো খ্রিষ্টানদের বিভিন্ন উপদল বা সিলসিলার মধ্যে। ঝগড়া শুধু শাসনতান্ত্রিক ছিলো না; লড়াইটি ছিলো মূলত বৈষয়িক।ক্যাথলিক গির্জা ছিলো বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক। ধর্মনিরপেক্ষতার মতবাদ গড়ে ওঠে রাষ্ট্র কর্তৃক গির্জার সম্পত্তি দখল নিয়ে।”(সূত্র: ঐ) এবার বলুন, মূল সমস্যা কোথায়?  এক ঘরে ঝগড়া হলো, তাই সব ঘরে সালিস করতে হবে কোন যুক্তিতে? ঝগড়া হলো খ্রিষ্টান রাজ্যে; বিষয় হলো সম্পত্তির দখল অথচ সে ঝগড়ার বাগড়া দেয়া হচ্ছে অন্যঘরেএ আবার কোন হিসাব? ইতিহাসে দেখা যায়, চতুর্দশ শতাব্দীতে পোপ-শাসিত রোমান ক্যাথলিক ধর্ম-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জার্মান উইটেনবাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মশাস্ত্রের অধ্যাপক মার্টিন লুথারের (১৪৮৩-১৫৪৬) সংস্কার-আন্দোলন ছিলো মূলত গীর্জার আধিপত্যরোধের আন্দোলন। এখান থেকেই য়ুরোপে রাষ্ট্র এবং গীর্জার পৃথকীকরণের ধারণা আসে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধর্মহীন করার দাবি ওঠে। ফলে জন্ম নেয় নিখাদ ইহজাগতিক ধারণাধর্মনিরপেক্ষতা, যা একান্তই য়ুরোপের। আকবর আলী খানের লেখা থেকে বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার মূলরস কিন্তু ইহজাগতিকতা। এখানে বিচার হবে সামগ্রিক দৃষ্টিতে অর্থাৎ ইহলৌকিক ও পারলৌকিক চিন্তায় নয়, আংশিক ইহজাগতিকতার ভিত্তিতে। জনাব খানের কথায় আরও স্পষ্ট যে, সেক্যুলারিজম একটি জীবনদর্শন। অর্থাৎ, য়ুরোপের সমস্যাহেতু যে ধর্মনিরপেক্ষতা জীবনদর্শন হিসাবে বিবেচিত হবে, সেটা অন্যস্থানেও; অন্যধর্মাঞ্চলেও  প্রযুক্ত হবে। এখানেই আমাদের মূল আপত্তি। য়ুরোপ ধর্মনিরপেক্ষতাকে জীবনদর্শন মেনে যদি রাষ্ট্রনীতি গড়তে পারে তাহলে আমরা কেন ইসলামকে জীবনদর্শন মেনে রাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করতে পারবো না? এখানে আপত্তি তাদের, যারা ইসলামকে পূর্নাঙ্গ জীবনবিধান হিসাবে মানতে নারাজ। এ-ছাড়া, সেক্যুলারিজম মানে যদি এই হয়, কোন ধর্মকে অন্য ধর্মের উপর প্রাধান্য দিতে অস্বীকার করা, তবে তাও কোন মুসলিম জনগোষ্ঠী বিশ্বাসগতভাবে মানতে পারে না। কারণ, পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে

 (سورة فتح)هو الذي أرسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا

(তিনিই তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ যথেষ্ট।)

সুতরাং একজন মুসলমান একান্ত বিশ্বাসগতভাবে যেমন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দর্শনকে জীবনদর্শন হিসাবে মানতে পারেন না তেমনি অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলামকে শ্রেষ্ঠ ও সত্য বিশ্বাস করতে বাধ্য। এর অন্যথা হলে, সে ইহজাগতিকতার ‍যুক্তিতে হোক বা অন্য কোন অজুহাতে হোক তার ঈমান বহাল থাকবে না। কারণ, কুরআনের স্পষ্ট সিদ্ধান্তের বাইরে যাবার কোন সুযোগ মুসলমানের জন্য রাখা হয়নি। সেদিক থেকে রাষ্ট্রনীতি বা জীবনদর্শন হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে হ্যা, অমুসলিমদের অধিকার রক্ষা ও প্রদানে ইসলাম যে নির্দেশনা দিয়েছে তাও মুসলিম সমাজ মানতে বাধ্য। সঙ্গতকারণে, বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশ যেখানে ৯১ শতাংশ মুসলিম বাস করে, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে আমরা সেক্যুলার হতে পারি না বা তাকে জীবনদর্শন ও রাষ্ট্রনীতি হিসাবে গ্রহণও করতে পারি না।

১৬.০৩.২৩ 

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩

নির্বাচনপূর্ব মেঘেমেঘে খেলা

ভাবনা-৩১

ভোর হল গোল হল! জনগণ ওঠরে!!

না পারতেই লিখছি। ভেবেছিলাম অন্যকিছু লিখবো। কিন্তু পারলাম কৈ? কালকের পৌর-ভোট নিয়ে বসছি আবার। চর্বিত চর্বণ যেনো না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে কলাইন লিখছি। গতকাল প্রচারণা শেষ হয়ে গেছে রাত নামার পর। গেলো দশ-বারো দিনের অনর্গল জ্বালাময়ী, শিখাময়ী, সঙ্গীতময়ী, টানাময়ী নানা বাহারের প্রচারণা শেষে আজ পৌর এলাকা শান্ত। মনে হচ্ছে, মাইকওয়ালা যেমন ঘুমোচ্ছে, আমার কান দুটোও তেমন গা এলিয়ে দিয়েছে। পোস্টারে-পোস্টারে ছেয়ে গেছে সব। শুধু আমাদের গায়ে-গতর ছাড়া কোথাও রক্ষা পায়নি। আইনত মানা হলেও বাইরের নেতারা কালো গ্লাসের দামী গাড়িতে করে এসে কিছু একটা করে চলে যাচ্ছেন। আইনের ফাঁক আর নেতাদের লম্বা-হাত বলে কথা আছে না! বাজারে আসতে-যেতে জানতে চাইলাম: কেমন চলছে? কারও মুখে স্বস্তি নেই। মনে হলো না, ভোটকেন্দ্রে মানুষ খুব একটা যাবে। সবার একটাই কথা, ভোট যাকেই দিন, প্রশাসন নিয়ে যাবে। ইভিএম তো আছেই, সব গিলে খাবে। আপনার টিপ যে কোন দিকে যাবে, সে কি কেউ জানে? কেউ বলছে, অমুক প্রার্থী শিক্ষিত-মার্জিত; হলে কি হবে, মার্কা তো ওটাই। আবার কেউ বলছে, শিক্ষাটিক্কা চেয়ে কি লাভ? শিক্ষিতরাই তো এক মার্কার ভোট নিয়ে অন্য মার্কায় ঢুকে যায়। তার চেয়ে কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিতরাই তো ভালো। কেউ বলছে, ভোট তো রাতেই হয়ে যাবে, সেন্টারে গিয়ে কি লাভ? এমন আরও কতো কথা! গতকাল হাটের দিনে দেখলাম, কম মূল্যে তেল-চাল কিনতে ঠাটা রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে নিম্নবিত্তের মহিলারা। পাশে আছে, পুরুষদের লাইন। আম-দোকান থেকে কেনার সাধ্য যে নেই! এসব ভোটের বুকে ছায়া ফেলছে। আগে প্রতীক ছিলো না, তাই দলের রাজনীতিও ছিলো না। এখন তো দল আছে, দল বা প্রতীকের বালাইও আছে। কিন্তু বিএনপি না থাকাকে বড়ো করে দেখছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাঁদের সাফ কথা: বিরোধীদল নেই, মজাও নেই। মানুষের এমন মনোভাব অকস্মাৎ নয়। তবুও সরকার করেই ছাড়বে। আমরা আর কোথায় যাবো? খবর নিয়ে জানলাম, শিক্ষিত প্রার্থীর চেয়ে অশিক্ষিত প্রার্থীর পাল্লা ভারী। কারণ তিক্ততা। শিক্ষিতের কাছে ওরা গেলোবার যে দাগা খেয়েছে, সে কি ভোলা যায়? মেয়র হলো ধানের শীষের মার্কা নিয়ে, মাত্র কদিনের মাথায় হয়ে গেলেন নৌকার মাঝি। পুরো পাঁচ বছর মানুষ গাল ভরে গাল দিয়ে গেছে। এখন উনি অসুস্থ। দোয়া করার জন্য বিদেশ থেকে মানুষ আনা ছাড়া উপায় নেই। কেউ খবরও নিতে চায় না। কথায় বলে না, নীতিহীনে মিত্র নাহি। যাদের গাঁটে পয়সা আছে, তারা কিন্তু নোট ছাড়তে পারেন আজকে। শুনছি, তর সইতে না পেরে কেউকেউ ইতোমধ্যে ছেড়েও দিয়েছেন। রাতের অবস্থা কেমন হয় জানি না। শেষরাতে আরও কতো যে নাজিল হয় খোদা মালুম। এক মেয়র প্রার্থী নাকি ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন: এবার না হলে তিনি স্ট্রোক করবেন। সঙ্গতকারণে ডরে আছি। সম্ভাব্য আত্মমার্ডার হলে গায়েবী মামলায় কে কে শ্রীঘরে যাবেন জানে উপরওয়ালা! অতএব, খুব সম্ভবত, বিনিদ্র-রজনী কাটাতে আমরা প্রস্তুত হচ্ছি, অন্তত জাতির মহাপ্রয়োজনে।

১৫.০৩.২৩    


সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩

দুর্ভিক্ষ কি এসেই পড়লো?

ভাবনা-৩০

হাটে-বাজারে যেতে-যেতে মানুষের চেহারাগুলো দেখা হয়। কারও হাসিমুখ তেমন দেখি না। আগে দেখা-সাক্ষাতে শত পেরেশানির মাঝেও মানুষের মুখে থাকতো কিছুটা হলেও স্বস্তি। ১০ টাকার জিনিস না হয় ১২/১৩ টাকায় কিনতো। কিন্তু এখন? আমাদের গ্রামাঞ্চলে মাস কয়েক আগেও ছিলো ডিমের ডজন ৭৫/৭৬ টাকা। সেই ডিম এখন ডজন ১৪৫/১৫০ টাকা। ডিমের কথা বললাম এ জন্য, ডিম কিন্তু বিপদের পদ। নিদেনপক্ষে ডাল বা টমেটোর ঝোলের সাথে ঐ এক পদেই সারা যেতো অন্তত একবেলা আহার। খবরে দেখলাম, ঢাকায় গরুর কেজি গোশততে পড়েছে ৯০০ টাকা; ব্রয়লার পড়েছে ৩০০ টাকা আর ছাগলের গোশত কেজি প্রতি ১১০০ টাকা। এসব এখন মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে, গরীর তো দূর কি বাত। এখন বাজারে গিয়ে জিনিসের দাম জানতে হয় না, হাট-বাজারের মানুষের চেহারাতেই যেনো লটকানো আছে দ্রব্যমূল্যের চিত্র। আমি ভাবছি অন্যকথা। আচ্ছা, যারা সরকারী দল করে তাদের জন্য কি গোপন কোন হাট আছে? নইলে তাদের মুখে এতো অস্বস্তি দেখি না যে! তারা তো দিব্যি স্বাভাবিক চলছে, হাসছে, বসছে। তাই যদি না হবে, ওরাও তো দামের কষাঘাতে লুটে পড়তো। মন বলে, আছে তেমন এক গোপন বাজার, যেখানে কেজি প্রতি সয়াবিন ৫০/৬০ টাকা, গরুর গোশত কেজিতে ৩০০/৪০০ টাকা, ডিমের জোড়া ১৫ টাকা, ১০০/১৫০ টাকায় মিলে ভাল মাছ, আরও কতো কি! পকেটে আসছে খনির টাকা। তা না হলে, ওরা এমন হাসিমুখে চলছে কেমন করে? কোন অষুধ খেয়ে দুর্মূল্যের বাজারে দণ্ড সোজা করে চলতে পারছে?  আমরা তো পারি না। যদি থাকতো এমন বাজার, অন্তত দেখার সাধ মেটাতে পারতাম। আহ, কি স্বপ্নের বাজার! আজ মুরগীর দোকানী কাঁদো-কাঁদো হয়ে বলছে, কর্জ করে আর ক’দিন চালাতে পারবো, জানি না। মাছ তো নয়, যেনো এক-একটি সোনার পাত। ‘মৎস্য জাদুঘর’ বলে যদি কিছু থাকতো, সে হতো নিশ্চয় হালের মাছের বাজার। দেখেই পরানে ঘা লাগে। পকেটে হাত দিতে মনে হয় কলজেতে লাগছে। ভাবতে হয়, বাজার থেকে কি বাড়িতে যাবো, না কি হাসপাতালে? গৃহিণী বাজারের ফর্দ ছোট করতে-করতে এমন করেছে যেনো পাঞ্জাবির বদলে ব্লাউজ সেলাই করতে এসেছি। এক কাজ করলে কেমন হয়? ক’টা টাকা খরচ করে যদি লাউড স্পীকার দিয়ে বলি: ভায়েরা আমার! কেউ যদি জানেন সরকারী ভাইদের গোপন বাজারের সন্ধান, আমার মোবাইলে দয়া করে মিসকল দিন। আমিই ফোন করে জেনে নেবো। কেমন হবে? পুলিশ বা র‌্যাব এসে ধরে নিয়ে যাবে? প্রধানমন্ত্রী বড়ো সত্য কথা বলেছিলেন: দুর্ভিক্ষ আসবে। আহ! আসতে আর হবে না, এসেই তো গেলো! বাজারের ফর্দ আর থলেটা দেখলেই ভাবি ৯৯৯-এ ফোন করি। কেউ কি এসে উদ্ধার করবে না? নামাজের পরে কবর জিয়ারত করতে গেলে ঈর্ষা হয়: আহ এঁরা কতোই না সুখী! মরে গিয়ে কমপক্ষে বাজারের গজব থেকে রক্ষা তো পেলো! আল্লাহ পানাহ। জানতে চান, মরতে রাজি আছি কি না? ভাই, বাজারের চাকায় পিষ্ট হয়ে মরার চেয়ে অন্য কোন তরীকায় মরলে ক্ষতি কি? মরতে তো একদিন হবেই।      

১৩.০৩.২৩ 

রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩

সৌদি-ইরান-চীন সম্পর্ক: চিন্তিত মার্কিন-ইসরাঈল

ভাবনা-২৯

 

বিশ্বরাজনীতির জটিল খেলা আরও জটিলতর হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। মার্কিন-ইসরাঈল অক্ষশক্তির আপ্রাণচেষ্টা সত্ত্বেও স্রোতের বিপরীতে আচমকা ঘটনা ঘটলো একটি। ঘটনায় ভূমিকম্প না হলেও রাজনীতিকম্প হয়েছে বেশ শক্তিশালী। ইতোমধ্যে অনেকে জেনে গেছেন, আন্তর্জাতিক প্রচার-মাধ্যমে চীনের মধ্যস্থতায় চিরবৈরী সৌদি আরব ও ইরান পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আপাত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। বিশ্বমিডিয়ায় খবরটি বেশ সাড়া ও নাড়া ফেলেছে বলা যায়। ট্রাম্পের জামানায় আরব আমিরাত, সুদান ও ওমানের মতো দেশগুলোকে ইসরাঈলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ফাঁদে ফেলায় আমেরিকা কিছুটা এগিয়ে গেলেও বাইডেনের জামানায় সে প্রচেষ্টাকে একেবারে নাকানি-চুবানি খাওয়ানো হয়েছে। ট্রাম্প কিন্তু তার আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে আরব আমিরাতের সাথে ইসরাঈলের চুক্তিও করিয়ে নিয়েছিলেন। কাতার বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোন আরব দেশে ইহুদীরা দলেদলে এসে ফুটবলীয় উল্লাসে মেতে ওঠে। এগুলো সব আমেরিকার চেষ্টায় আরবদের সাথে ইহুদীদের গা লাগানোর কুশিশ। মার্কিন চেষ্টা শতভাগ সফল হয়েছে বলবো না, কিন্তু ময়লায় ফেলতে না পারলেও গায়ে ময়লা লাগাতে পেরেছে বলা যায়। মনে হচ্ছিলো, সে ঝাপটা এমবিএস’র উসিলায় সৌদিয়াকেও কিছুটা কাত করে ফেলবে। প্রসঙ্গত বলা যায়, ২০২০ সালে কুনওয়ার খুলদূনে শহীদ নামে একজন পাকিস্তানী সাংবাদিক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একটি সাক্ষাৎকারের সূত্রে রিপোর্ট করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি ভ্রাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশও পাকিস্তানকে ইসরাঈলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকে চাপ দিয়েছে। প্রতিবেদকের বর্ণনায়, সে দেশটি সৌদি আরব। ২০১৭ সালে একজন ইসরাঈলী কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ-মাধ্যম জানায়, এমবিএস’র যুবরাজ হিসাবে শপথ নেয়ার দিন নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি ইসরাঈলী জঙ্গীবিমান সৌদি আকাশে টহল দেয়। অবশ্য রিপোর্টটি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ কোন উচ্চবাচ্য করেনি। বর্তমানে ইহুদী রাষ্ট্রটির বিমান চলাচলের জন্য সৌদি আকাশ উম্মুক্ত করে দেয়া আছে। এখানে আরেকটি কথা: ট্রাম্প থেকে বাইডেনে উত্তরণের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক মানবাধিকারপ্রশ্নে অমসৃণ হয়ে যায়। কারণ, ট্রাম্প যেভাবে এমবিএসকে খালি চেক দিচ্ছিলেন, বাইডেন-প্রশাসন সেভাবে দিতে নারাজ। বিশেষত জামাল খাশোগ্জী হত্যাকাণ্ডে এমবিএসের জড়িত থাকা নিয়ে যে খবর প্রচার হয়, সেটাতে সৌদি আরব বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নাখোশ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ইয়েমেনের যুদ্ধ নিয়েও বাইডেন-প্রশাসনের ভূমিকায় সৌদি আরব খুশি ছিলো না। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্র ইসরাঈলও ইরানপ্রশ্নে সৌদি আরবের সাথে দহরম-মহরম সম্পর্ক গড়তে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। ভূ-রাজনীতি দিয়েও মধ্যপ্রাচ্য বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, লেবানন প্রভৃতি অঞ্চলে ইরানের উপস্থিতি মার্কিন-ইসরাঈলের জন্য সুখকর নয়। এর মধ্যে রাশিয়ার য়ুক্রেন আক্রমণে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি আন্তর্জাতিক মনযোগ বিভক্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিকে অত্যন্ত চতুরতার সাথে কাজে লাগায় চীন। চীন সৌদি আরবকে বোঝাতে সক্ষম হয়, মার্কিননির্ভরতা থেকে বেরিয়ে ইরানের সাথে সম্পর্ক সহজ করার মধ্যে সৌদি আরবের শক্তির ভারসাম্যতা অক্ষুণ্ন থাকবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রনির্ভর পররাষ্ট্র নীতিতে সৌদি আরব স্বস্তি বোধ করতে পারে না। সৌদি আরব চীনের যুক্তি বুঝতে পারে। তাই চীনের মধ্যস্থতায় ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মধ্যে সৌদি আরব নিজেদের স্বার্থকে বুঝতে দেরি করেনি। সৌদি আরব আশা করছে, এর মধ্য দিয়ে ইয়েমেনেও সে ঝামেলামুক্ত হতে পারবে এবং চীন সেখানেও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকার চেষ্টা করবে। এখানে চীনের স্বার্থ বিলকুল স্পষ্ট। প্রথমত, বহুদিন থেকে চীন বিশ্বপরাশক্তি হিসাবে জানান দিতে বদ্ধপরিকর হয়ে আছে। দরকারটা কেবল সুযোগের। চীনের সমঝোতায় সৌদি-ইরান সম্পর্ক যদি স্বাভাবিকের দিকে যেতে শুরু করে সে হবে এক বিরাট অর্জন। তখন চীনের বৈশ্বিক ও বাণিজ্যিক দুয়ার বিস্তৃত হবে, সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়ত, চীনের নজর পড়বে ইয়েমেনযুদ্ধ ও য়ুক্রেনযুদ্ধের দিকে। কপাল ভালো থাকলে, দু’টোই পেলে তো পোয়াবারো, নচেৎ একটিতেও চীনের সোনায় সোহাগা হবে। তখন চীনের পরাশক্তি হিসাবে দাঁড়াতে কারও সুপারিশ লাগবে না। সিরিয়ার দিকে চীন তাকাবে কি না, বলা যায় না। কারণ, বিশ্বরাজনীতি নিয়ে তার উচ্চাবিলাষে কোন সন্দেহ নেই। আমার মনে হয়, যে চীন দীর্ঘদিন ধরে নিজের খেয়ে নিজের ভাবনায় মত্ত থাকার নীতিতে অবিচল ছিলো, এখন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ও সুযোগে মধ্যপ্রাচ্যেও ঢুকে যেতে পারে। কারণ, সিরিয়ার অন্যতম খেলোয়ার রাশিয়া ও ইরান চীনের মিত্র। তাই যদি হয়, বুঝতে হবে আগামীর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি যা এখনও মার্কিন ও ইসরাঈলনির্ভর, নতুন রঙে উপস্থিত হতে পারে যেখানে ইসরাঈল তার স্বার্থ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবে। প্রভাব কমতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও য়ুরোপীয় দেশগুলোর। চীন অবশ্যই চাইবে, ‍যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেরকে দুর্বল করে মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে। সেখানে সাথে পাবে ইরান, রাশিয়া ও তুরষ্ককে। এতে সৌদি আরবের মতো কিছু আরব দেশ চীনকে সমর্থন করতে পারে। এখানেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশ এবং ইসরাঈলের ভয়। চীনের মধ্যস্থতা নিয়ে কূটনৈতিক স্বাগত জানালেও ভেতরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাঈল যে মোটেও স্বস্তিতে নেই, তা বলাই বাহুল্য।

১২.০৩.২৩           

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩

শরীয়া-শাসন এবং মুসলিম দেশগুলোর মনোভাব

ভাবনা-২৮

অনলাইন ঘাঁটতে গিয়ে ২০১৩ সালের একটি রিপোর্ট দেখে বেশ কৌতুহল জাগলো। মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণাসংস্থা Pew Research Center ঐ বছরের ৩০শে এপ্রিল The World’s Muslims: Religion, Politics and Society নামে একটি জরিপভিত্তিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর নির্বাচিতসংখ্যক মানুষের মতামতের ভিত্তিতে তারা রিপোর্টটি তৈরি করে। যতোদূর মনে পড়ে, আমাদের দেশের কোন মিডিয়া খবরটি প্রকাশ করেনি। সময় দেখে বোঝা যায়, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মর্মান্তিক ঘটনার ২৫ দিন পরে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়। একটি মার্কিনভিত্তিক গবেষণা-প্রতিষ্ঠান থেকে এমন খবর প্রকাশে রীতিমতো অবাক হতে হয় বৈ কি। পুরো রিপোর্টটি পড়ে, তাদের প্রদর্শিত অনেক রেখাচিত্র বা গ্রাফ দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি: রিপোর্টটি তৈরিতে অনেক খড়খুটো পোড়াতে হয়েছে। এ ধরনের অনুসন্ধান চাট্টিখানি কথা নয়। প্রকাশিত রিপোর্টে মহাদেশ, উপমহাদেশ ও দেশভিত্তিক জরিপ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে মুসলিমবিশ্বের কতোখানি মানুষ দেশে ইসলামী শরীয়ার বাস্তবায়ন চায়। আমার মতো অনেকেই জরিপটি দেখে অবাক হতে পারেন। জরিপে সামিল আছে, দক্ষিণ-পূর্বয়ুরোপের ৪টি দেশ (রাশিয়া,কসভো,বসনিয়া ও আলবেনিয়া), মধ্য-এশিয়ার ৫টি দেশ (কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কিয়ে, কাজাকস্তান ও আজারবাইজান), দক্ষিণ-পূর্বএশিয়ার ৩টি দেশ (মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া), দক্ষিণ এশিয়ার ৩টি দেশ (আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ), মধ্য পূর্ব-উত্তর আফ্রিকার ৭টি দেশ (ইরাক, ফিলিস্তীন, মরক্কো, মিসর, জর্ডান, তিউনিসিয়া ও লেবানন), এবং সাব-সাহারা আফ্রিকার ১৬টি দেশ (নাইজার, জিবোতী, কঙ্গো, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, মোজাম্বিক, কেনিয়া, মালি, ঘানা, সেনেগাল, ক্যামেরুন, লাইবেরিয়া, চাদ, গিনিয়া বিসাউ ও তানজানিয়া) নিয়ে মোট ৩৮টি দেশের তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। শতকরা কতো হারে কোন দেশের কতো মানুষ শরীয়া আইনের শাসন পরিচালনার পক্ষে মতামত দিয়েছেন তা রীতিমতো আশ্চর্যজনক। প্রদর্শিত গ্রাফচিত্রে প্রতিটি দেশের পাশে হার দেখানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে, আমাদের বাংলাদেশের ৮২ শতাংশ মানুষ দেশে শরীয়া আইন চায়। এখানে ক’টি কথা বলা দরকার। কেউ মনে করবেন না, একটি মার্কিন গবেষণা-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ধরনের জরিপ মুসলিমদের সন্তুষ্ট করতে প্রকাশ করা হয়েছে। এসবে দু’টো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তা হলো, ১. পাশ্চাত্য দেশগুলোর মুসলিমবিরোধী যেসব এজেন্ডা চালু আছে, সেগুলোর পর্যায়ক্রমিক ধাপ উত্তরণে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ গ্রহণের উপাত্ত সরবরাহ করা এবং দুই. সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিভিন্ন প্রভাব বিস্তার করে মুসলিম সেন্টিমেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করা। প্রধানত, এসব গবেষণাপত্রকে ভিত্তি করে ঘোষিত নতুন বিশ্বব্যবস্থা (New World Order) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসরাঈল ও পাশ্চাত্যের নিরাপত্তা বিধান করা। ২০১৩ সালের সালের পর থেকে বাংলাদেশে ক্রমবিরাজমান পরিস্থিতি থেকে আমরা জরিপের প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করতে পারি। বিষয়টির অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। বলাবাহুল্য, আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রায়নের যে প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাতে এ ধরনের জরিপের ফলাফল তাদের কাছে বেশ হতাশাব্যঞ্জক, সন্দেহ নেই। কারণ, আফগানিস্তানের আদলে অন্যান্য মুসলিম দেশে যদি কথিত গণতন্ত্রের পরিবর্তে ইসলামী ইমারাহ প্রতিষ্ঠায় জনগণ ঝুঁকে পড়ে, সেটা হবে পাশ্চাত্যের জন্য আত্মঘাতী। তাই তারা প্রচলিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হলেও কোন প্রকার ইসলামদর্শী সরকারকে ক্ষমতায় আসতে দিতে নারাজ। এখানে তাদের মূল অস্ত্রসেক্যুলারিজম। তারা অবশ্যই গণতন্ত্র চায়, এবং সেটা যেনো সেক্যুলার গণতন্ত্র হয়। আলজেরিয়া ও তুরষ্ক তার বড়ো প্রমাণ।  

১১.০৩.২৩     


বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩

লৈঙ্গিক সমতা না কি লৈঙ্গিক অধিকার?

ভাবনা-২৭

পৃথিবীকে, পৃথিবীর সমাজ-ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে একটি সংস্থাজাতিসঙ্ঘ, যার মূলনাম: United Nations ওদের ইতিহাস ঘাটতে যাচ্ছি না। পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে সংস্থাটি কিছু কর্মসূচী ঠিক করে দেয়। সাম্প্রতিককালের তেমন একটি কর্মসূচী হলো: লৈঙ্গিক বা লিঙ্গ সমতা, যা তারা নিবন্ধিত রাষ্ট্রগুলোতে বাস্তবায়ন করতে চায়। এটাকে তারা বলছে, Gender Equality। তাদের ভাষায়, জীবনের সর্বক্ষেত্রে Equal rights and opportunities for girls and boys অর্থাৎ, বালক-বালিকা বা পুরুষ-মহিলার সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা। যেহেতু জাতিসঙ্ঘ বলেছে, তাই নিবন্ধিত রাষ্ট্রগুলোও এ ধরনের স্লোগানকে আত্মস্থ করে ব্ক্তব্য রাখছে। তেমনি আমাদের বাংলাদেশও। বুঝে হোক, না বুঝে হোক সরকারের হর্তাকর্তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নসিহত করছেন, লিঙ্গ সমতা নাকি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই নাকি শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে। জানা থাকা দরকার, আমরা যাকে জাতিসঙ্ঘ (আসলে এটা জাতিসঙ্ঘ না হয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘ হওয়া উচিৎ) বলি, মূলত সেটি জাতি-ব্যবস্থার (UN System) একটি প্রতিষ্ঠান। যেমন আমরা মুসলিমরা ইসলাম-ব্যবস্থার একটি প্রতিষ্ঠান। এটাকে ইংরেজিতে Islam System বলে ডাকা যেতে পারে। জাতি-ব্যবস্থার অধীন জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যেসব নীতি ও কর্মসূচী তৈরি হয়সেসবই  UN Charter বা জাতিসঙ্ঘ সনদ বলে পরিচিত। এখান থেকে তৈরি হয় জাতিসঙ্ঘ কার্যপরিকল্পনা বা UN Work Plan যা দিয়ে পৃথিবীকে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। তেমনি একটি কার্যপরিকল্পনা হলো ‘লিঙ্গ বা লৈঙ্গিক সমতা’ অর্জন। প্রশ্ন হতে পারে, এখানে আমাদের সমস্যা আছে কি? থাকলে সেটা কোথায়? আমি বলবো, সমস্যা মৌলিক ও ন্যায্য। আমরা লিঙ্গ-সমতার কথা বলতে পারি না, আর এটা যুক্তিসঙ্গতও নয়। যুক্তিসঙ্গত হলো, লিঙ্গ-অধিকার। যাকে আমরা Gender Right বলবো। এর ভিত্তি হলো, জন্মগতভাবে মানুষ (পুরুষ ও মহিলা) যে স্বতন্ত্র প্রকৃতির অধিকারী, তার সামর্থ্য, প্রয়োজন ও আচরণ। আপনি চাইলেই একজন নারী ও পুরুষ সর্বক্ষেত্রে সমান সামর্থ্য, আচরণ ও প্রয়োজন প্রদর্শন করতে পারেন না। এটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ, হতে পারে না। কারণ, যদি আস্তিক হোন তবে আপনাকে মানতে হবে আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা যে ভিন্নতা দিয়ে নারী-পুরুষের দেহাবয়ব, প্রকৃতি ও আচরণ সৃষ্টি করেছেন সেটা বদলানো যায় না। এটা সম্ভবও নয়। তাই আমাদের বক্তব্য হলো, লিঙ্গ-সমতা নয়. লিঙ্গ-অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলাম এটাই বলে।  যেমন বিবাহক্ষেত্রে ‘মাহর’ (মোহর) নারীর অধিকার ও প্রাপ্য, পুরুষের নয়। এখন কি আপনি বলবেন, পুরুষেরও মাহর চাই যা নারীকে পরিশোধ করতে হবে? কই, জাতিসঙ্ঘ-সনদে তো মহিলাদের মাহর আদায়ের কথা বলা হয় না। কেন? ওরা বলছে, সম্পদে সমান সুযোগ দিতে হবে। ঠিক আছে, আমাদের মুসলিম আইনে একজন বিবাহিত নারী বাবার কাছ থেকে যেমন সম্পদ পায়, তেমনি স্বামীর কাছ থেকেও পায়। কই, পুরুষ কি নারীর পৈতৃক সম্পত্তির কোন অংশ পায়? জাতিসঙ্ঘ সনদ কেন বলে না, পরুষও নারীর সম্পত্তি থেকে অংশ পাবে? লিঙ্গ-সমতাই যদি চাওয়া হয় সে-কথা বলে না কেন? আসলে সমস্যা, সর্বক্ষেত্রে অসমতা নয়, ন্যায্য অধিকারহীনতা বা অধিকার বঞ্চনা। জাতিসঙ্ঘ সনদের কথা মানতে গেলে আঘাত আসবে আমাদের চিরাচরিত পারিবারিক ব্যবস্থা ও বন্ধনের ওপর। এ সনদ বাস্তবায়ন করতে গেলে শুরু হবে সীমাহীন অরাজকতা, নিশ্চিতভাবে বিপদে পড়বে কন্যাসন্তানেরা। সম্পত্তির কারণে এরা পুরুষ অংশীদারের নিরবিচ্ছিন্ন সহিংসতার শিকারে পরিণত হবে। তখন কি সরকার সামাল দিতে পারবে? এমনিতেই তো সরকার অনেক কিছুই সামাল দিতে পারছে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ আলিম-উলামা প্রভাবিত। বাইরে থেকে আসা কোন সনদ বাস্তবায়নের আগে অন্যান্যদের সাথে বিজ্ঞ ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময় করলে জাতি অনাকাঙ্খিত অনেক কিছু থেকে রক্ষা পাবে। আমরা সকল প্রকার বৈষম্যের বিরোধিতা করি এবং সর্বক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকারকে সমর্থন করি। কুরআন-সুন্নাহর বাইরে গিয়ে এসবের বাস্তবায়ন সীমাহীন অরাজকতা সৃষ্টি করবে।

০৯.০৩.২৩

 

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০২৩

যোগ্যপ্রার্থীদের অত্যাচার

ভাবনা-২৬

ইলেকশন এলেই ‘যোগ্য’ বা ‘কোয়ালিফাইড’ প্রার্থী নির্বাচনের একটা বাজারি কথার প্রচলন ঘটে যত্রতত্র। অমুক মিয়ার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র; যোগ্য প্রার্থী অমুক ভাই, মা-বোনদের বলে যাই ইত্যাদি শুনতে-শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কোথাও যে গিয়ে দু’দণ্ড কানকে বিশ্রাম দেবোসে সাধ্য কি আর আছে? মাইক নিয়ে বেটারা যেনো আমাকেই খুঁজছে। ঘরে-বাজারে কোথাও ঠাঁই নেই। মাঝেমাঝে মনে হয় খোদাওন্দ যেনো আমাদের মতো অযোগ্যদেরকে এসব যোগ্যপ্রার্থীর প্রহার থেকে রক্ষা করেন। পাড়ার মানুষ বলছে, এখন দেখি সকাল আটটা বাজতেই প্রার্থী দুয়ারে হাজির আর ভোটের আগে বিকাল দেড়টার সময়ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দেখা পাইনি। যাক, তবুও যোগ্যপ্রার্থী নিয়ে দু’কথা বলতে হচ্ছে। সরকার বাহাদুর থেকে শুরু করে নিচতলার সবাই বলছেন, যোগ্যপ্রার্থীকে ভোট দিতে। কিন্তু কে যোগ্য? যোগ্যতার মাপকাঠিই বা কি? যোগ্য কি কোন বিশেষ জায়গায় বসবাস করে? গেলোবারে ক’জন প্রার্থীকে দেখে মনে হয়েছিলো, এরা কি আগে চিড়িয়াখানায় ছিলো? সবাই সরকারীদলের। একজন দীর্ঘদিনের গরুবেপারী; টাকার অভাব নেই। সে ভেবেছে, টাকা ছিটালেই কিল্লা ফতেহ! কথাটা যে একদম বেঠিক, তা বলছি না। যেখানে এক কাপ চায়ে ভোট কেনা যায়, সেখানে টাকার কারিশমা তো অস্বীকারের জো নেই। তবে সব সময় টাকায় সবকিছু হয় না। সেই গরুবেপারী এবারও যোগ্য(!) প্রার্থী। গত পরাজয়ের পর এবার শুনছি, ৩ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে নেমেছেন তিনি। স্বপ্ন, উনি মেয়র হবেন। লেখাপড়া যতোটুকু জানি, আন্ডার লেবেল। কথাবার্তায় মনে হয়, আগের দশ বারের নির্বাচিত মেয়র। বড়ো কথা হলো, যোগ্যপ্রার্থী কিন্তু উপজেলা শাসকদলের বর্ষিয়ান সদস্য। ফলে, তাকে যে আসল কীর্তিতে কিছু বলবো, সে সাধ্য কার? কারণ, সরকারীদল। অবশ্য দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তিনি স্বতন্ত্র। যিনি শিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিততিনি মনোনয়ন পেয়েছেন সত্য, কিন্তু এতো টাকা নেই যে বিলাতে পারবেন। তাঁকে বলেছি, দয়া করে প্রতীক নিয়ে আসবেন না, এলাকার একজন মানুষ হিসাবে আসুন। আর ভার সইতে পারছি না। এখন দেখি সেই গরুবেপারীর সাথেও বেশ মানুষ; ছাত্র লীগের ছেলেরাও আছে। ঘটনা কি! টাকা..আর টাকা। মানুষকে আমি দোষ দেই না, কারণ, এই দুর্মূল্যের বাজারে প্রার্থী শিক্ষিত আর ভদ্র হলে কি মানুষের পেট ভরবে? তার চেয়ে অশিক্ষিত গরুবেপারী শ-দু’শ টাকা গুঁজে দেয়, ও দিয়ে আলু-ডাল তো জোটে। এই হলো খেটে খাওয়া মানুষের অখণ্ডণীয় যুক্তি। একবারে নিরস কি? এখানে অবশ্য শিক্ষিত ও মার্জিত প্রার্থী নিয়ে বিরক্তিও আছে। গেলোবার যিনি মেয়র হয়েছিলেন তাঁর প্রতীক ছিলো, ধানের শীষ। নির্বাচন জিতে দু’এক দিনের মধ্যে ঢুকে গেলেন সরকারী দলে। সেই থেকে মানুষ তাঁর গায়ে তকমা দিলোবিশ্বাসঘাতক, মির্যাফর আরও কতো কি। এখন বলে, শিক্ষিত দিয়ে কি লাভ হলো, অশিক্ষিতই ভালো। ক্ষতিটা কিন্তু কেবল ধানের শীষের হয়নি, নৌকারও হয়েছে। এই হলো আমাদের সমাজের পচনের একদিক। সুতরাং, যোগ্য বলে যখন নির্দিষ্ট কোন রূপরেখা বাকি নেই, সেখানে অযোগ্যরাই যোগ্য। সরকার ও প্রশাসন ওদের সমীহ করে। কারণ, টাকা আর চ্যানেল। রাজনৈতিক দলগুলো যদি শিক্ষিত, সৎ ও মার্জিত প্রার্থী দিতে আপোষহীন হতো তবে আমাদের অনেক উপকার হতো। এখন তো মাস্তানীও এক যোগ্যতা। আল্লাহর রসূল সা. বলে গেছেন: যখন দেখবে অযোগ্যরা পদে আসীন, তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করো। এখন হয়েছে এমন হাল। কোথাও রক্ষা নেই, আইন-আদালত থেকে গ্রাম্য পরিষদ পর্যন্ত সব রোগে রোগাক্রান্ত। চোর-বাটপারদের সালাম করতে হয়। নচেৎ, উচিৎশিক্ষা অনিবার্য।

০৮.০৩.২৩

মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩

ইসলামপন্থীদের নৈর্বাচনিক কৌশল

ভাবনা-২৫

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথেসাথে দেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে অদৃশ্য টানাটানি চলছে। নৈর্বাচনিক ফলাফলে ইসলামী দলগুলোর আসনসংখ্যা উল্লেখ করার মতো না হলেও ভোট-ব্যাংক হিসাবে বা নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টিতে দেশের ইসলামী দলগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০১৩ সালের চার সিটি নির্বাচন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোটপ্রার্থীদের একচ্ছত্র জয়ের পেছনে কওমীদের ভূমিকা প্রচার-মাধ্যমে উঠে আসে। সে-সময় দৈনিক আমাদের সময় প্রধান খবরের শিরোনাম করে, “জোট-মহাজোট নয়, খেলেছে হেফাজত”।  ফলে, তাঁদের দুয়ারে ধর্ণা দেয়ার কাতারে শাসক-বিরোধী সবাই সামিল। দলগুলো মূলত কওমীভিত্তিক। তাই, কওমীরা বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছে, তা অবশ্যই জিজ্ঞাস্য। অতীতে যেভাবে নিজেদের পথ ঠিক করা হয়েছিলো, সেভাবে এখন সম্ভব কি সম্ভব নয়তা অবশ্যই ভাবার বিষয়। চরিত্রগতভাবে কওমীরা প্রচলিত ডানপন্থীদের নিকটবর্তী বলে পরিচিত। এর কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচিত আওয়ামী ঘরানা ও বামপন্থীদের সম্মিলনকে কওমীরা কখনও ভালো চোখে দেখেনি, এখনও দেখে না। কারণ, তাঁদের কাছে বামপন্থা মানে নাস্তিকতাচর্চা ও ইসলামবিদ্বেষ। এমন ধারণার শক্তিশালী কারণও আছে। সেদিক বিবেচনায় তাঁদের সাথে ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের ভিটাবাড়ি অধিকতর কাছের। আবার আদর্শিকভাবে কওমীরা জামাতপন্থী রাজনীতির ঘোর বিরোধী। পদ্ধতিগত কারণে চরমোনাই আন্দোলনের সাথেও কওমীদের দূরত্ব চোখে পড়ার মতো। এসব বিবেচনায় নিয়ে কওমীদের ভাবতে হবে, আগামী কৌশল কী হওয়া যুক্তিযুক্ত? এখানে কৌশলটা নির্ধারিত হওয়া দরকার আবেগ বা জোশের বশে নয়। দু’কারণে এটা নির্ধারিত হতে পারে। এক: কওমী স্বার্থ, দুই: রাষ্ট্রীয় স্বার্থ। কওমী স্বার্থ কি হবে, সেটা সবাই বসে ঠিক করতে পারেন বা অতীত অভিজ্ঞতা ও বর্তমান বাস্তবতার ভিত্তিতে নির্ণয় করা যেতে পারে। আমার মনে হয়, শাপলার ঘটনা-পরবর্তী প্রবাহ থেকে শুরু করে মুদিবিরোধী আন্দোলনের ফলাফলকে সামনে রেখে ইসলামী দলগুলোর কৌশল নির্ধারণ করা দরকার। কোথায় কি ভুল হয়েছে বা করার দরকার ছিলো, করা হয়নি বা বোঝা দরকার ছিলো, বোঝা হয়নি ইত্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করে কৌশল ঠিক করা দরকার। বুঝতে হবে, কওমীভিত্তিক ইসলামী দল কারও ইজারাপ্রাপ্ত সম্পদ নয়। তাঁদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আছে যদি তাঁদের নীতিগত অবস্থান সঠিক থাকে। সেদিক থেকে তাঁদের স্বার্থ যে কি, কেমন হবে তার চৌহদ্দীএসব সম্মিলিতভাবে চিহ্নিত করা অপরিহার্য। মনে হয়, বাস্তবতার ভিত্তিতে কোন দল বা জোটের আবেগাসৃত অনুসরণ না করে স্বার্থ ও কৌশলভিত্তিক পন্থাগ্রহণ সুফল বয়ে আনবে। ক্ষমতায় কে আসবে, সে সম্ভাবনায় গা না ভাসিয়ে যেই আসুক তার কাছ থেকে স্বার্থ আদায়ের কৌশল গ্রহণ করার পথ উম্মুক্ত রাখা অধিকতর ফলদায়ক হতে পারে। অন্ধ দুই চোখ চায়। কওমীভিত্তিক ইসলামী দলগুলো চাইবে তাঁদের স্বার্থ, নিছক ক্ষমতাভোগ নয়। অতীতে দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে যেসব পথ অনুসরণ করা গেছে, সেগুলো কতোটুকু শুদ্ধ ও দূরদর্শী ছিলোতা এখনই পর্যালোচনা করা জরুরী। যদিও কওমীভিত্তিক ইসলামী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ কোন জোট নেই, তা সত্ত্বেও দৃষ্টিভঙ্গীগত ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা গেলে জাতির লাভ হবে। সেখান থেকে অন্তত স্বার্থ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পাওয়া যাবে। বলা যায়, তাঁরা ভিন্নভিন্ন দল হওয়া সত্ত্বেও একটি সম্মিলিত ইশতিহার উপস্থাপন করতে পারেন যা তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গীগত ঐক্যকে প্রচার করবে। এটাও কম কিসের? শাপলার মহাসমাবেশের প্রাক্কালে হেফাজত ১৩ দফা দাবি দিয়ে একটিও আদায় করতে সক্ষম হয়নি। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। খুঁজতে হবে কওমীভিত্তিক ইসলামী দলগুলো আদৌ ইসলামের মূলধারার রাজনীতি করছেন কি নাসে প্রশ্নের উত্তর। মনে রাখতে হবে, দাবিতেই ফল নয়। এখন তো সুদী ব্যাংকও সাইনবোর্ড  ঝুলিয়ে ইসলামী দাবি করে। তাই বলে কি ওরা সুদমুক্ত? সবচেয়ে বড়ো দুর্ভাগ্য হলো, ইসলামী দলগুলোর সম্মিলিত কোন পরিষদ নেই যেখান থেকে অন্তত অধিকাংশ মতের ভিত্তিতে ফিকহী সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে। যার ফলে দেখা যায়, দলীয় ফোরাম থেকেই সিদ্ধান্ত আসে, যা মতান্তরে দুর্বল হয়। খোদ কওমী মাদরাসাগুলোর মধ্যে এমন ব্যবস্থা চালু নেই। স্বীকৃতির সময় এ দুর্বলতা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। কওমীভিত্তিক ইসলামী দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা কওমী স্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের সমন্বয় করে কোন পথ অবলম্বন করবেন। সেটা যেন অবশ্যই বিশেষ কোন দল বা জোটের অনুগ্রহপ্রার্থী না হয়ে স্বকীয় হয়।

০৭.০৩.২৩

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...