শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩

শরীয়া-শাসন এবং মুসলিম দেশগুলোর মনোভাব

ভাবনা-২৮

অনলাইন ঘাঁটতে গিয়ে ২০১৩ সালের একটি রিপোর্ট দেখে বেশ কৌতুহল জাগলো। মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণাসংস্থা Pew Research Center ঐ বছরের ৩০শে এপ্রিল The World’s Muslims: Religion, Politics and Society নামে একটি জরিপভিত্তিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর নির্বাচিতসংখ্যক মানুষের মতামতের ভিত্তিতে তারা রিপোর্টটি তৈরি করে। যতোদূর মনে পড়ে, আমাদের দেশের কোন মিডিয়া খবরটি প্রকাশ করেনি। সময় দেখে বোঝা যায়, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মর্মান্তিক ঘটনার ২৫ দিন পরে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়। একটি মার্কিনভিত্তিক গবেষণা-প্রতিষ্ঠান থেকে এমন খবর প্রকাশে রীতিমতো অবাক হতে হয় বৈ কি। পুরো রিপোর্টটি পড়ে, তাদের প্রদর্শিত অনেক রেখাচিত্র বা গ্রাফ দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি: রিপোর্টটি তৈরিতে অনেক খড়খুটো পোড়াতে হয়েছে। এ ধরনের অনুসন্ধান চাট্টিখানি কথা নয়। প্রকাশিত রিপোর্টে মহাদেশ, উপমহাদেশ ও দেশভিত্তিক জরিপ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে মুসলিমবিশ্বের কতোখানি মানুষ দেশে ইসলামী শরীয়ার বাস্তবায়ন চায়। আমার মতো অনেকেই জরিপটি দেখে অবাক হতে পারেন। জরিপে সামিল আছে, দক্ষিণ-পূর্বয়ুরোপের ৪টি দেশ (রাশিয়া,কসভো,বসনিয়া ও আলবেনিয়া), মধ্য-এশিয়ার ৫টি দেশ (কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কিয়ে, কাজাকস্তান ও আজারবাইজান), দক্ষিণ-পূর্বএশিয়ার ৩টি দেশ (মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া), দক্ষিণ এশিয়ার ৩টি দেশ (আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ), মধ্য পূর্ব-উত্তর আফ্রিকার ৭টি দেশ (ইরাক, ফিলিস্তীন, মরক্কো, মিসর, জর্ডান, তিউনিসিয়া ও লেবানন), এবং সাব-সাহারা আফ্রিকার ১৬টি দেশ (নাইজার, জিবোতী, কঙ্গো, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, মোজাম্বিক, কেনিয়া, মালি, ঘানা, সেনেগাল, ক্যামেরুন, লাইবেরিয়া, চাদ, গিনিয়া বিসাউ ও তানজানিয়া) নিয়ে মোট ৩৮টি দেশের তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। শতকরা কতো হারে কোন দেশের কতো মানুষ শরীয়া আইনের শাসন পরিচালনার পক্ষে মতামত দিয়েছেন তা রীতিমতো আশ্চর্যজনক। প্রদর্শিত গ্রাফচিত্রে প্রতিটি দেশের পাশে হার দেখানো হয়েছে। দেখানো হয়েছে, আমাদের বাংলাদেশের ৮২ শতাংশ মানুষ দেশে শরীয়া আইন চায়। এখানে ক’টি কথা বলা দরকার। কেউ মনে করবেন না, একটি মার্কিন গবেষণা-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ধরনের জরিপ মুসলিমদের সন্তুষ্ট করতে প্রকাশ করা হয়েছে। এসবে দু’টো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তা হলো, ১. পাশ্চাত্য দেশগুলোর মুসলিমবিরোধী যেসব এজেন্ডা চালু আছে, সেগুলোর পর্যায়ক্রমিক ধাপ উত্তরণে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ গ্রহণের উপাত্ত সরবরাহ করা এবং দুই. সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিভিন্ন প্রভাব বিস্তার করে মুসলিম সেন্টিমেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করা। প্রধানত, এসব গবেষণাপত্রকে ভিত্তি করে ঘোষিত নতুন বিশ্বব্যবস্থা (New World Order) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসরাঈল ও পাশ্চাত্যের নিরাপত্তা বিধান করা। ২০১৩ সালের সালের পর থেকে বাংলাদেশে ক্রমবিরাজমান পরিস্থিতি থেকে আমরা জরিপের প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করতে পারি। বিষয়টির অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। বলাবাহুল্য, আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রায়নের যে প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাতে এ ধরনের জরিপের ফলাফল তাদের কাছে বেশ হতাশাব্যঞ্জক, সন্দেহ নেই। কারণ, আফগানিস্তানের আদলে অন্যান্য মুসলিম দেশে যদি কথিত গণতন্ত্রের পরিবর্তে ইসলামী ইমারাহ প্রতিষ্ঠায় জনগণ ঝুঁকে পড়ে, সেটা হবে পাশ্চাত্যের জন্য আত্মঘাতী। তাই তারা প্রচলিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হলেও কোন প্রকার ইসলামদর্শী সরকারকে ক্ষমতায় আসতে দিতে নারাজ। এখানে তাদের মূল অস্ত্রসেক্যুলারিজম। তারা অবশ্যই গণতন্ত্র চায়, এবং সেটা যেনো সেক্যুলার গণতন্ত্র হয়। আলজেরিয়া ও তুরষ্ক তার বড়ো প্রমাণ।  

১১.০৩.২৩     


কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...