বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩

লৈঙ্গিক সমতা না কি লৈঙ্গিক অধিকার?

ভাবনা-২৭

পৃথিবীকে, পৃথিবীর সমাজ-ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে একটি সংস্থাজাতিসঙ্ঘ, যার মূলনাম: United Nations ওদের ইতিহাস ঘাটতে যাচ্ছি না। পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে সংস্থাটি কিছু কর্মসূচী ঠিক করে দেয়। সাম্প্রতিককালের তেমন একটি কর্মসূচী হলো: লৈঙ্গিক বা লিঙ্গ সমতা, যা তারা নিবন্ধিত রাষ্ট্রগুলোতে বাস্তবায়ন করতে চায়। এটাকে তারা বলছে, Gender Equality। তাদের ভাষায়, জীবনের সর্বক্ষেত্রে Equal rights and opportunities for girls and boys অর্থাৎ, বালক-বালিকা বা পুরুষ-মহিলার সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা। যেহেতু জাতিসঙ্ঘ বলেছে, তাই নিবন্ধিত রাষ্ট্রগুলোও এ ধরনের স্লোগানকে আত্মস্থ করে ব্ক্তব্য রাখছে। তেমনি আমাদের বাংলাদেশও। বুঝে হোক, না বুঝে হোক সরকারের হর্তাকর্তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নসিহত করছেন, লিঙ্গ সমতা নাকি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই নাকি শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে। জানা থাকা দরকার, আমরা যাকে জাতিসঙ্ঘ (আসলে এটা জাতিসঙ্ঘ না হয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘ হওয়া উচিৎ) বলি, মূলত সেটি জাতি-ব্যবস্থার (UN System) একটি প্রতিষ্ঠান। যেমন আমরা মুসলিমরা ইসলাম-ব্যবস্থার একটি প্রতিষ্ঠান। এটাকে ইংরেজিতে Islam System বলে ডাকা যেতে পারে। জাতি-ব্যবস্থার অধীন জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যেসব নীতি ও কর্মসূচী তৈরি হয়সেসবই  UN Charter বা জাতিসঙ্ঘ সনদ বলে পরিচিত। এখান থেকে তৈরি হয় জাতিসঙ্ঘ কার্যপরিকল্পনা বা UN Work Plan যা দিয়ে পৃথিবীকে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। তেমনি একটি কার্যপরিকল্পনা হলো ‘লিঙ্গ বা লৈঙ্গিক সমতা’ অর্জন। প্রশ্ন হতে পারে, এখানে আমাদের সমস্যা আছে কি? থাকলে সেটা কোথায়? আমি বলবো, সমস্যা মৌলিক ও ন্যায্য। আমরা লিঙ্গ-সমতার কথা বলতে পারি না, আর এটা যুক্তিসঙ্গতও নয়। যুক্তিসঙ্গত হলো, লিঙ্গ-অধিকার। যাকে আমরা Gender Right বলবো। এর ভিত্তি হলো, জন্মগতভাবে মানুষ (পুরুষ ও মহিলা) যে স্বতন্ত্র প্রকৃতির অধিকারী, তার সামর্থ্য, প্রয়োজন ও আচরণ। আপনি চাইলেই একজন নারী ও পুরুষ সর্বক্ষেত্রে সমান সামর্থ্য, আচরণ ও প্রয়োজন প্রদর্শন করতে পারেন না। এটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ, হতে পারে না। কারণ, যদি আস্তিক হোন তবে আপনাকে মানতে হবে আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা যে ভিন্নতা দিয়ে নারী-পুরুষের দেহাবয়ব, প্রকৃতি ও আচরণ সৃষ্টি করেছেন সেটা বদলানো যায় না। এটা সম্ভবও নয়। তাই আমাদের বক্তব্য হলো, লিঙ্গ-সমতা নয়. লিঙ্গ-অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলাম এটাই বলে।  যেমন বিবাহক্ষেত্রে ‘মাহর’ (মোহর) নারীর অধিকার ও প্রাপ্য, পুরুষের নয়। এখন কি আপনি বলবেন, পুরুষেরও মাহর চাই যা নারীকে পরিশোধ করতে হবে? কই, জাতিসঙ্ঘ-সনদে তো মহিলাদের মাহর আদায়ের কথা বলা হয় না। কেন? ওরা বলছে, সম্পদে সমান সুযোগ দিতে হবে। ঠিক আছে, আমাদের মুসলিম আইনে একজন বিবাহিত নারী বাবার কাছ থেকে যেমন সম্পদ পায়, তেমনি স্বামীর কাছ থেকেও পায়। কই, পুরুষ কি নারীর পৈতৃক সম্পত্তির কোন অংশ পায়? জাতিসঙ্ঘ সনদ কেন বলে না, পরুষও নারীর সম্পত্তি থেকে অংশ পাবে? লিঙ্গ-সমতাই যদি চাওয়া হয় সে-কথা বলে না কেন? আসলে সমস্যা, সর্বক্ষেত্রে অসমতা নয়, ন্যায্য অধিকারহীনতা বা অধিকার বঞ্চনা। জাতিসঙ্ঘ সনদের কথা মানতে গেলে আঘাত আসবে আমাদের চিরাচরিত পারিবারিক ব্যবস্থা ও বন্ধনের ওপর। এ সনদ বাস্তবায়ন করতে গেলে শুরু হবে সীমাহীন অরাজকতা, নিশ্চিতভাবে বিপদে পড়বে কন্যাসন্তানেরা। সম্পত্তির কারণে এরা পুরুষ অংশীদারের নিরবিচ্ছিন্ন সহিংসতার শিকারে পরিণত হবে। তখন কি সরকার সামাল দিতে পারবে? এমনিতেই তো সরকার অনেক কিছুই সামাল দিতে পারছে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ আলিম-উলামা প্রভাবিত। বাইরে থেকে আসা কোন সনদ বাস্তবায়নের আগে অন্যান্যদের সাথে বিজ্ঞ ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময় করলে জাতি অনাকাঙ্খিত অনেক কিছু থেকে রক্ষা পাবে। আমরা সকল প্রকার বৈষম্যের বিরোধিতা করি এবং সর্বক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকারকে সমর্থন করি। কুরআন-সুন্নাহর বাইরে গিয়ে এসবের বাস্তবায়ন সীমাহীন অরাজকতা সৃষ্টি করবে।

০৯.০৩.২৩

 

কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...