ভাবনা-২১
ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিন অর্থাৎ, ২৮
তারিখ, পত্রিকার পাতায় খবর বেরুলো সাবেক নির্বাচন কমিশনার মরহুম মাহবুব তালুকদার তাঁর
‘নির্বাচননামা: নির্বাচন কমিশনে আমার দিনগুলো’ বইয়ে লিখেছেন: বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনীতির
স্থপতি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি—সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। আমি তাকে অরাজনৈতিক ব্যক্তি
বললেও মূলত তিনি পর্দার অন্তরাল থেকে দলীয় রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে দাবার চাল
দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির আসনে থেকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যে
ঘটনাটি ঘটান, তার নাম সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত
রায়। এই রায়ের ফলে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক
সরকার ব্যবস্থা বাদ দেয়া হয়। তিনি আরও লিখেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বিচার বিভাগ। গণতান্ত্রিক
দেশে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে অনেক যৌক্তিকতা প্রদর্শন করা
যেতে পারে। কিন্তু এই ব্যবস্থার স্থলাভিষিক্ত করার জন্য যে নতুন আইনি কাঠামোর
প্রয়োজন ছিল, বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে তা অনুপস্থিত।
তিনি অবশ্য বলেছেন যে, এ রায়ের পর আরও দুই টার্ম জাতীয়
নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। কিন্তু এর কোনো বাধ্যবাধকতা
ছিল না। ফলে নতুন ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রেসক্রিপশন দিয়ে
পক্ষান্তরে তিনি রাজনৈতিক বিপর্যয় টেনে আনেন। বিষয়টিতে একটি সাংবিধানিক কমিটির
সদস্য হিসাবে জনাব মাহবুব তালুকদার যেভাবে মন্তব্য করেছেন, সেভাবে অন্য কেউ বলেছেন
কিনা জানি না। তাঁর লেখাতে বিচারবিভাগ ও একজন প্রধান বিচারপতির নৈতিক অবক্ষয়জনিত অবস্থানের
যেমন চিত্র ধরা পড়েছে, তেমনি ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণও উদ্ধৃত হয়েছে। কিয়ামাতের
কঠিন দিনে সাত শ্রেণীর মানুষকে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়াদানের কথা পবিত্র হাদীস শরীফে
বলা হয়েছে। এঁদের মধ্যে প্রথমজন হলেন, হাদীসের ভাষায়, ‘আল ইমামুল আদিল’ অর্থাৎ, ন্যায়পরায়ন
বাদশা, নেতা, বিচারক প্রমুখ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন ইমামুল আদিলকে এক নম্বরে উল্লেখ
করা হলো? ভাষ্যকারেরা বলছেন: একজন ন্যায়পরায়ন বাদশা বা বিচারক কেবল ব্যক্তিত্ব বলেই
নয়, সমাজের নীতি-নৈতিকতা, স্বস্তি-শান্তি রক্ষার প্রধান নির্বাহী। তাঁদের কথা এবং কাজ
সমাজকে যেমন রক্ষা করবে, তেমনি ধ্বংসও করবে। ছায়া লাভকারী বাকি ছয় শ্রেণীর মানুষ আপন-আপন
গুণাবলীতে ভাস্বর থেকে যোগ্য বিবেচিত হবেন বটে কিন্তু ইমামুল আদিলের মতো সমাজে ব্যাপকভাবে
প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। এর কারণ, ক্ষমতা ও প্রভাব। মরহুম মাহবুব তালুকদারের
কথায় হাদীসের কথাটি মনে পড়ে গেলো। নিঃসন্দেহে সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক সে দৃষ্টিকোণে
আল্লাহর কাছে তো বটেই, জাতি ও সমাজের কাছেও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে পুরো জাতি ও দেশকে
বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, রায় ঘোষণা করে রাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ
অর্থ অনুদান হিসাবে গ্রহণ করে বিশ্বের কাছে আমাদেরকে শরমিন্দাও করে রেখেছেন।
০১.০৩.২৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন