ভাবনা-৩০
হাটে-বাজারে যেতে-যেতে মানুষের চেহারাগুলো দেখা হয়। কারও হাসিমুখ তেমন দেখি না। আগে দেখা-সাক্ষাতে শত পেরেশানির মাঝেও মানুষের মুখে থাকতো কিছুটা হলেও স্বস্তি। ১০ টাকার জিনিস না হয় ১২/১৩ টাকায় কিনতো। কিন্তু এখন? আমাদের গ্রামাঞ্চলে মাস কয়েক আগেও ছিলো ডিমের ডজন ৭৫/৭৬ টাকা। সেই ডিম এখন ডজন ১৪৫/১৫০ টাকা। ডিমের কথা বললাম এ জন্য, ডিম কিন্তু বিপদের পদ। নিদেনপক্ষে ডাল বা টমেটোর ঝোলের সাথে ঐ এক পদেই সারা যেতো অন্তত একবেলা আহার। খবরে দেখলাম, ঢাকায় গরুর কেজি গোশততে পড়েছে ৯০০ টাকা; ব্রয়লার পড়েছে ৩০০ টাকা আর ছাগলের গোশত কেজি প্রতি ১১০০ টাকা। এসব এখন মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে, গরীর তো দূর কি বাত। এখন বাজারে গিয়ে জিনিসের দাম জানতে হয় না, হাট-বাজারের মানুষের চেহারাতেই যেনো লটকানো আছে দ্রব্যমূল্যের চিত্র। আমি ভাবছি অন্যকথা। আচ্ছা, যারা সরকারী দল করে তাদের জন্য কি গোপন কোন হাট আছে? নইলে তাদের মুখে এতো অস্বস্তি দেখি না যে! তারা তো দিব্যি স্বাভাবিক চলছে, হাসছে, বসছে। তাই যদি না হবে, ওরাও তো দামের কষাঘাতে লুটে পড়তো। মন বলে, আছে তেমন এক গোপন বাজার, যেখানে কেজি প্রতি সয়াবিন ৫০/৬০ টাকা, গরুর গোশত কেজিতে ৩০০/৪০০ টাকা, ডিমের জোড়া ১৫ টাকা, ১০০/১৫০ টাকায় মিলে ভাল মাছ, আরও কতো কি! পকেটে আসছে খনির টাকা। তা না হলে, ওরা এমন হাসিমুখে চলছে কেমন করে? কোন অষুধ খেয়ে দুর্মূল্যের বাজারে দণ্ড সোজা করে চলতে পারছে? আমরা তো পারি না। যদি থাকতো এমন বাজার, অন্তত দেখার সাধ মেটাতে পারতাম। আহ, কি স্বপ্নের বাজার! আজ মুরগীর দোকানী কাঁদো-কাঁদো হয়ে বলছে, কর্জ করে আর ক’দিন চালাতে পারবো, জানি না। মাছ তো নয়, যেনো এক-একটি সোনার পাত। ‘মৎস্য জাদুঘর’ বলে যদি কিছু থাকতো, সে হতো নিশ্চয় হালের মাছের বাজার। দেখেই পরানে ঘা লাগে। পকেটে হাত দিতে মনে হয় কলজেতে লাগছে। ভাবতে হয়, বাজার থেকে কি বাড়িতে যাবো, না কি হাসপাতালে? গৃহিণী বাজারের ফর্দ ছোট করতে-করতে এমন করেছে যেনো পাঞ্জাবির বদলে ব্লাউজ সেলাই করতে এসেছি। এক কাজ করলে কেমন হয়? ক’টা টাকা খরচ করে যদি লাউড স্পীকার দিয়ে বলি: ভায়েরা আমার! কেউ যদি জানেন সরকারী ভাইদের গোপন বাজারের সন্ধান, আমার মোবাইলে দয়া করে মিসকল দিন। আমিই ফোন করে জেনে নেবো। কেমন হবে? পুলিশ বা র্যাব এসে ধরে নিয়ে যাবে? প্রধানমন্ত্রী বড়ো সত্য কথা বলেছিলেন: দুর্ভিক্ষ আসবে। আহ! আসতে আর হবে না, এসেই তো গেলো! বাজারের ফর্দ আর থলেটা দেখলেই ভাবি ৯৯৯-এ ফোন করি। কেউ কি এসে উদ্ধার করবে না? নামাজের পরে কবর জিয়ারত করতে গেলে ঈর্ষা হয়: আহ এঁরা কতোই না সুখী! মরে গিয়ে কমপক্ষে বাজারের গজব থেকে রক্ষা তো পেলো! আল্লাহ পানাহ। জানতে চান, মরতে রাজি আছি কি না? ভাই, বাজারের চাকায় পিষ্ট হয়ে মরার চেয়ে অন্য কোন তরীকায় মরলে ক্ষতি কি? মরতে তো একদিন হবেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন