ভাবনা-২৬
ইলেকশন এলেই ‘যোগ্য’ বা ‘কোয়ালিফাইড’
প্রার্থী নির্বাচনের একটা বাজারি কথার প্রচলন ঘটে যত্রতত্র। অমুক মিয়ার চরিত্র ফুলের
মত পবিত্র; যোগ্য প্রার্থী অমুক ভাই, মা-বোনদের বলে যাই ইত্যাদি শুনতে-শুনতে কান ঝালাপালা
হয়ে যায়। কোথাও যে গিয়ে দু’দণ্ড কানকে বিশ্রাম দেবো—সে
সাধ্য কি আর আছে? মাইক নিয়ে বেটারা যেনো আমাকেই খুঁজছে। ঘরে-বাজারে কোথাও ঠাঁই নেই।
মাঝেমাঝে মনে হয় খোদাওন্দ যেনো আমাদের মতো অযোগ্যদেরকে এসব যোগ্যপ্রার্থীর প্রহার থেকে
রক্ষা করেন। পাড়ার মানুষ বলছে, এখন দেখি সকাল আটটা বাজতেই প্রার্থী দুয়ারে হাজির আর
ভোটের আগে বিকাল দেড়টার সময়ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দেখা পাইনি। যাক, তবুও যোগ্যপ্রার্থী
নিয়ে দু’কথা বলতে হচ্ছে। সরকার বাহাদুর থেকে শুরু করে নিচতলার সবাই বলছেন, যোগ্যপ্রার্থীকে
ভোট দিতে। কিন্তু কে যোগ্য? যোগ্যতার মাপকাঠিই বা কি? যোগ্য কি কোন বিশেষ জায়গায় বসবাস
করে? গেলোবারে ক’জন প্রার্থীকে দেখে মনে হয়েছিলো, এরা কি আগে চিড়িয়াখানায় ছিলো? সবাই
সরকারীদলের। একজন দীর্ঘদিনের গরুবেপারী; টাকার অভাব নেই। সে ভেবেছে, টাকা ছিটালেই কিল্লা
ফতেহ! কথাটা যে একদম বেঠিক, তা বলছি না। যেখানে এক কাপ চায়ে ভোট কেনা যায়, সেখানে টাকার
কারিশমা তো অস্বীকারের জো নেই। তবে সব সময় টাকায় সবকিছু হয় না। সেই গরুবেপারী এবারও
যোগ্য(!) প্রার্থী। গত পরাজয়ের পর এবার শুনছি, ৩ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে নেমেছেন তিনি।
স্বপ্ন, উনি মেয়র হবেন। লেখাপড়া যতোটুকু জানি, আন্ডার লেবেল। কথাবার্তায় মনে হয়, আগের
দশ বারের নির্বাচিত মেয়র। বড়ো কথা হলো, যোগ্যপ্রার্থী কিন্তু উপজেলা শাসকদলের বর্ষিয়ান
সদস্য। ফলে, তাকে যে আসল কীর্তিতে কিছু বলবো, সে সাধ্য কার? কারণ, সরকারীদল। অবশ্য
দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তিনি স্বতন্ত্র। যিনি শিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত—তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন সত্য, কিন্তু
এতো টাকা নেই যে বিলাতে পারবেন। তাঁকে বলেছি, দয়া করে প্রতীক নিয়ে আসবেন না, এলাকার
একজন মানুষ হিসাবে আসুন। আর ভার সইতে পারছি না। এখন দেখি সেই গরুবেপারীর সাথেও বেশ
মানুষ; ছাত্র লীগের ছেলেরাও আছে। ঘটনা কি! টাকা..আর টাকা। মানুষকে আমি দোষ দেই না,
কারণ, এই দুর্মূল্যের বাজারে প্রার্থী শিক্ষিত আর ভদ্র হলে কি মানুষের পেট ভরবে? তার
চেয়ে অশিক্ষিত গরুবেপারী শ-দু’শ টাকা গুঁজে দেয়, ও দিয়ে আলু-ডাল তো জোটে। এই হলো খেটে
খাওয়া মানুষের অখণ্ডণীয় যুক্তি। একবারে নিরস কি? এখানে অবশ্য শিক্ষিত ও মার্জিত প্রার্থী
নিয়ে বিরক্তিও আছে। গেলোবার যিনি মেয়র হয়েছিলেন তাঁর প্রতীক ছিলো, ধানের শীষ। নির্বাচন
জিতে দু’এক দিনের মধ্যে ঢুকে গেলেন সরকারী দলে। সেই থেকে মানুষ তাঁর গায়ে তকমা দিলো—বিশ্বাসঘাতক, মির্যাফর আরও কতো
কি। এখন বলে, শিক্ষিত দিয়ে কি লাভ হলো, অশিক্ষিতই ভালো। ক্ষতিটা কিন্তু কেবল ধানের
শীষের হয়নি, নৌকারও হয়েছে। এই হলো আমাদের সমাজের পচনের একদিক। সুতরাং, যোগ্য বলে যখন
নির্দিষ্ট কোন রূপরেখা বাকি নেই, সেখানে অযোগ্যরাই যোগ্য। সরকার ও প্রশাসন ওদের সমীহ
করে। কারণ, টাকা আর চ্যানেল। রাজনৈতিক দলগুলো যদি শিক্ষিত, সৎ ও মার্জিত প্রার্থী দিতে
আপোষহীন হতো তবে আমাদের অনেক উপকার হতো। এখন তো মাস্তানীও এক যোগ্যতা। আল্লাহর রসূল
সা. বলে গেছেন: যখন দেখবে অযোগ্যরা পদে আসীন, তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করো। এখন হয়েছে
এমন হাল। কোথাও রক্ষা নেই, আইন-আদালত থেকে গ্রাম্য পরিষদ পর্যন্ত সব রোগে রোগাক্রান্ত।
চোর-বাটপারদের সালাম করতে হয়। নচেৎ, উচিৎশিক্ষা অনিবার্য।
০৮.০৩.২৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন