ভাবনা-২৩
খবরে দেখলাম, প্রধান নির্বাচন কমিশনার
জনাব হাবিবুল আউয়াল বললেন: নির্বাচন নিয়ে কমিশন সংকটে আছেন। কারণ, তাঁর মতে আস্থার
জায়গাটা সন্তোষজনক নয়। তিনি তাঁর ব্ক্তব্যে জাতীয় পার্টির প্রধান জি এম কাদেরের প্রকাশিত
এক মন্তব্যের সূত্র ধরে বলেন, নির্বাচনে মানুষের আস্থার জায়গাটা শূণ্যের কোটায় নেমে
এসেছে—কথাটি ঠিক নয়, তবে
আংশিক সত্য। জনাব জি এম কাদেরের কথাটি সত্য কি মিথ্যা, পরিমাপ করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু
তৃণমূলে অর্থাৎ, গ্রামগঞ্জে মানুষের ভাবনা তালাশ করে যা পাওয়া যায়, কোন অবস্থাতেই সেটা
স্বস্তির বলা যায় না। প্রতিদিন আমি খেটে খাওয়া মানুষদের সাথে দু’একজন করে কথা বলছি।
তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারছি তাঁদের মনের কথা। তাঁদের কথা হলো, প্রথমত: বিএনপি নেই,
দ্বিতীয়ত: ভোটকেন্দ্রে যাওয়া না যাওয়া সমান। কারণ, তাঁদের দেয়া ভোট গন্তব্যে পৌঁছুবে
না। তৃতীয়ত: ইভিএম বা মেশিনের কারসাজি হবে, সে বিষয়ে তাঁরা শঙ্কিত। চতুর্থত: সরকারীভাবে
যাকে সিগন্যাল দেয়া হয়েছে, তিনিই হবেন; ভোট যাকেই দেয়া হোক না কেন। এ কথাগুলো এখন ঘুরে
ফিরছে মুখেমুখে। আজকে এক সরকারী দলের কর্মী এলাকা থেকে ফিরে এসে আমাকে হতাশার কথাই
জানালো। তার কথায়: মানুষ ভোটকেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় যাবে কি না সন্দেহ। তাঁর
হিসাবে চল্লিশ শতাংশের মতো যেতে পারে; কমও হতে পারে। কিন্তু দলনিরপেক্ষ সাধারণের কথা
শুনলে মনে হয় পরিসংখ্যান আরও নিচে চলে যাবে। বিশেষত ২০১৪ ও ২০১৮-র নির্বাচনের কথা মানুষ
ভুলতে পারছে না। আমাদের চট্টগ্রামে একটি প্রবাদ আছে: চুন খেয়ে যে গাল খসিয়েছে, সে দই
দেখলেও ডরায়। এখন মানুষের অবস্থাও হয়েছে সে রকম। আমার মনে হয়, ভোটকেন্দ্রের প্রতি ভোটারদের
আস্থা ফেরানো, নির্বাচন-ব্যবস্থাকে মানুষের বিশ্বাসে আনতে পারাটাও বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন
কমিশনের জন্য। তা’ছাড়া, মানুষ কোন দলীয় সরকারের
অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিশ্বাসই করতে নারাজ। এখানে যদি মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন না
হয়, নির্বাচন কমিশন যাই বলুক, ঘোড়া ডিমই পেড়ে যাবে। এমনিতে তৃণমূলে সরকারের প্রতি মানুষের
আস্থাহীনতা নজরে পড়ছে। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎবিল বৃদ্ধি—সবকিছুতে বেসামাল দেশ। সরকারীদলের
নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে সাধারণের ক্ষোভের কারণে কিছু বলতে পারছে না। এখন যদি গণভোট
নেয়া হয়, মনে হয়, নব্বই ভাগ ভোট পড়বে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের পক্ষে। সরকার বিষয়টি
যে বুঝতে পারছে না, তা নয়। মনে হয় যতো দেরি হবে, জটলা ও ঝুঁকি ততোই বাড়বে। ধাক্কা দেয়ার
আগেই যদি দু’চাকার মাঝখানে শুয়ে পড়া যায়, তাতে জান আর মান দু’টোই কি রক্ষা পাবে না?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন