শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩

নজরুল: সাহিত্যকে যিনি দিয়েছেন প্রাণ

ভাবনা-৩৩

বিদ্রোহী কবি; জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কলমের দ্রোহ যেনো পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়। নজরুলের জন্ম না হলে, বাংলা সাহিত্য কোন দিন যৌবন খুঁজে পেতো না। বৃদ্ধের মতো ন্যুব্জ হয়ে চলা বাংলা সাহিত্যকে নজরুল যে অমৃতরস পানে যৌবনত্ব দিয়ে গেছেনসে কাজ অন্য কেউ করে যেতে পারেননি। আমি সাহিত্যিক নই, সাহিত্যের খানিক খুশবু শুঁকেছি মাত্র। তাই নজরুল নিয়ে কথা বলার অধিকার কতোটুকু আছেসে প্রশ্নবানে আমাকে জর্জরিত করার মওকা সবার থাকলো। বাল্যে নজরুলের ছড়া-কবিতা পড়েছি বাল্যশিক্ষার দিনে। তখন নজরুলের পাশাপাশি কায়কোবাদ, গোলাম মোস্তফা, কাজী কাদের নেওয়াজ, কবি বন্দে আলী মিয়া, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি জসিম উদ্দিন, বেগম সুফিয়া কামাল, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমূখের কবিতা পড়েছি। এখনকার মতো মাজাভাঙ্গা কবিদের কবিতা পড়তে হয়নি কপালগুণে। কবি নজরুল ইসলাম অমূল্য যে তিন রত্ন দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে ঋণী করে গেছেন সেগুলো এক. সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, দুই. বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের কথা, তিন. বিদেশী বিশেষত আরবী-ফারসী শব্দের উদার ব্যবহার। সত্যি কথা বলতে কি, নজরুল বাংলা সাহিত্যে এক প্রবল ভূমিকম্প, যার আঘাতে অসমতল বন-জঙ্গল মাটিতে মিশে গিযে জন্ম নেয় সবুজ প্রকৃতি। নেমে আসে দমকা হাওয়া। রসহীন নিছক প্রেম-কাহিনীর বেড়াজালে আবদ্ধ বাংলা সাহিত্যকে তিনি দিলেন নতুন অভাবনীয় এক অমৃতরসযৌবনের ঝঞ্ঝা; চির উন্নত শিরের উদাত্ত আহ্বান আর বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের কথাযা আগে ভাবাও যেতো না। নজরুল শুধু যে সাহিত্যকে দিয়েছেন, তা নয়। নজরুল মানুষকে দিয়েছেন আত্মাধিকারের জন্য নিবেদিত হবার শিক্ষা; বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন জ্বালানোর দীক্ষা। “তুমি রবে তেতলার ‘পরে আমি রবো নিচে, তবুও তোমারে দেবতা বলিব সে ভরসা আজ মিছে।”এমন হুংকার সাহিত্যের দহলিজ থেকে কে দিয়েছে শুনি? “বল বীর বল উন্নত মম শির!” বলে যে বজ্রনিনাদ নজরুলকণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে আজও হৃদয়ের দেয়ালে-দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়, তাই তো আমাদের বাংলা-সাহিত্যের অদমনীয় অহংকার। তাঁর ছন্দমালা, শব্দচয়নসব কিছুতে নতুন অভ্যুদয় জ্বলেপুড়ে ছাই করে দিয়েছে গতানুগতিক সাহিত্যপ্রথাকে। নজরুল শিখিয়েছেন মুসলিম সাহিত্যসত্ত্বার মধ্য দিয়ে কেমন করে ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিতে হয়। ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি তার উৎকৃষ্টতম উদাহরণ। বলা চলে, বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাহিত্যসত্ত্বার যে অবহেলিত হাল বিরাজমান ছিলো, সেখানে নজরুল এনেছেন প্রলয়ঙ্কর ইনকিলাব। যে বাংলা সাহিত্যকে একদিন সংস্কৃতপন্থীরা অবজ্ঞা করে দূরে সরিযে রেখেছিলো, সেই বাংলা সাহিত্য নজরুলের সংস্পর্শে পেলো নতুন জীবন। এক কথায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যকে রেখে গেছেন এমন এক উচ্চতায়, যা কখনও এড়িয়ে যাবে না। আল্লাহ কবিকে মাগফিরাত দান করুন।

১৭.০৩.২৩            

কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...