বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

বিবিসি’র মুদি কোয়েশ্চান

ভাবনা-১২

বৃটেনভিত্তিক সংবাদ-সংস্থা বিবিসি সম্প্রতি তাদের টেলিভিশনে “BBC: The Modi question" নামে একটি তথ্যচিত্র প্রচার করেছে দুই কিস্তিতে। এর প্রথম কিস্তিতে দেখানো হয় মুদি আমলে ২০০২ সালে সংঘটিত গুজরাটের মুসলিম গণহত্যার ভয়ালচিত্র এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে দেখানো হয় ‍মুদির প্রধানমন্ত্রিত্ব থাকাকালে ভারতের মুসলিমদের হাল-হাকীকত। অনলাইন থেকে উভয় কিস্তি আমি দেখেছি। ভারতীয় গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সবাই বলেছেন, বিবিসির ঐ তথ্যচিত্রে যা কিছু দেখানো হয়েছে তাতে এমন কিছু ছিলো না, যা আগে প্রদর্শিত হয়নি। তাহলে বিতর্ক কেন? মুদি সরকারের ঐ তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধে এতো লাঠিসোটা কেন? প্রদর্শনে এতো সরকারি বাধা কেন? বিতর্কে কারণ: ১. মুদির ইমেজ-সঙ্কট ২. তথ্যচিত্র প্রচারের কাল ৩. গুজরাট গণহত্যাকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার এবং ৪. গুজরাটের ঘটনার কারণে মুদির প্রধানমন্ত্রিত্ব অর্জন। মুদিপন্থীরা ওসব বিষয়কে আমলে নিয়ে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনে জানপ্রাণ দিয়ে বাধা দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে বলে মনে হয়। তথ্যচিত্রটি যারা দেখেছেন, বিলক্ষণ বুঝবেন বিবিসি তাদের তথ্যচিত্রে একটি অজানা বিষয়কে সামনে এনেছে আর তা হলো, তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী জ্যাক স্ট্র গুজরাট-ঘটনা নিয়ে গোপন তদন্ত পরিচালনা করে সিদ্ধান্তে এসেছেন: এক, প্রচার-মাধ্যমে যা কিছু এসেছে বাস্তবচিত্র তার চেয়েও ঢের বেশি ভয়াবহ ছিলো এবং দুই, পুরো ঘটনার পেছনে মুখ্যমন্ত্রী মুদি সরাসরি দায়ী। এ ছিলো বিবিসি’র মূল উপসংহার। এখানে ভারতীয় গণমাধ্যমের একটি ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে হয়। সেদিনকার বাস্তবচিত্রকে যদি সামনে আনা হয়, বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, সে ছিলো মূলত একটি মুসলিম গণহত্যা। অথচ ভারতীয় গণমাধ্যম বরাবরই বলেে এসেছে-‘দাঙ্গা’। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, বাইরের বিশ্বকে এ মর্মে বিভ্রান্ত করা যে, এখানে একতর্ফা মারা হয়নি, উভয়ের মারামারি হয়েছে।  বিবিসি’র তথ্যচিত্র থেকে যে বিভৎস বিষয় উঠে এসেছে তা হলো, গুজরাটে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মুদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট দেয়ার কারণ গণহত্যা এবং সেটাকেই পুঁজি করে মুদি পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন। তাহলে ব্যাখ্যাটা কী দাঁড়ালো? ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এ কারণে মুদিকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে টিকিয়ে রেখেছিলেন যে, তিনি মুসলিমদের উচিৎ শিক্ষা দিতে পেরেছিলেন এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে সে সক্ষমতার কারণে। তাহলে বিজেপি কেন ভারতে বেশি ভোট পায়--সে প্রশ্ন কি একান্তই জিজ্ঞাস্য? বিবিসি আসলে ভারতের সাম্প্রতিক রাষ্ট্র-চরিত্র্র ও গণচরিত্রের একটি অপ্রকাশিত দিককে উম্মোচিত করেছে--যা আন্তর্জাতিক বিশ্বকে ভাবতে বাধ্য করবে। 
১৫.০২.২৩

কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...