ভাবনা-১৭
বাজারের থলে নিয়ে কি আগে বাজারে যাবো না কি হাসপাতালে? মজা করে বলছি না। সত্যি-সত্যি বলছি! আমরা থাকি মফস্বলে। শহুরে কথা বলতে পারবো না। বাজারের বর্তমান হালাবস্থা এখন আর বোঝাতে হয় না। শীতের পানি যে কতো ঠাণ্ডা নামলেই বোঝা যায়; যন্ত্র লাগে না। তেমনি বাজারের যে কি অবস্থা থলে নিয়ে গেলে বোঝা যায়; খবরের কাগজ দেখতে হয় না। বলছিলাম, হাসপাতালে আগে যাবো কি না। কারণ জানতে চান? বলছি। অপারেশনে গিয়েছেন কখনও? না গেলেও অন্যজনের অপারেশনের খোঁজ-খবর তো রেখেছেন নিশ্চয়। ডাক্তার যখন ঠিক করেন অপারেশন করতে হবে, রোগীও যখন মনস্থির করেন: ব্যবচ্ছেদে যাবেন, তার আগে ডাক্তার রোগীর রক্তচাপ, ডায়াবেটিস আছে কিনা, থাকলে কি পরিমাণ ইত্যাদি-ইত্যাদি দেখে থাকেন। এর কারণ হলো, অপারেশন টেবিলে যেন কোন সমস্যা না হয়। ব্যাপারটি কেবল এখানে নয়। আপনি দেশের বাইরে যাবেন তো আপনার কাগজপত্র সব ঠিক আছে কিনা বিমানবন্দরে যাচাই করে দেখা হয় যেন পরে অসুবিধা না হয়। এই দুর্মূল্যে বাজারে ঢুকছি, ভাবছি, যাবো কোথায়? মাছের বাজারে, গোস্তের দোকানে, মুরগীর ওখানে, নাকি তরকারী হাটে? যাবার আগে ভয়ে কাঁপে পা, বুক, শরীর যেন ডিবি অফিসে বা র্যাপ-পুলিশ অফিসে ঢুকছি। এমনিতে কসাইদের নামেই চেনা যায়। তার ওপর দাম! তরকারীর নুন দেখতে আমাদের রমণীদের একটা অভ্যাস আছে। সেই ঢং-এ গোস্তের দাম জিজ্ঞেস করি। জবাব যদি আসে ৮০০/৯০০ টাকা? গত হাটে যা দেখেছি এখন দেখছি ৫০ টাকা বেড়ে হয় ৭০০ না হয় ৭৫০ টাকা। পকেট ধাক্কা দিয়ে বললো: কেটে পড়, পারলে হিমালয়ে যা! মাছের বাজারে জিন্দা মাছের দাম আকাশছোঁয়া! মূর্দার দামও কম নয়, ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত খোঁজে। সাগরের হলে তো কথাই নেই, তার উপর রঙবেরঙের মেকআপ। দেশি মাছ ৯০০/১০০০ টাকা চায়। কমদরা মাছের মধ্যে ৮০/১০০ টাকার তেলাপিয়া এখন ১৮০/২০০ টাকায়। তার উপর সাইজ বা আকার নিয়ে আছে ওঠানামা। গরীবের খাদ্য বলে পরিচিত ব্রয়লার আর ডিমের প্রমোশন হয়েছে ঢের। ১২০ টাকার ব্রয়লার এখন দু’শ পেরিয়েছে, ঘেন্নায় আামাদের দিকে তাকায়ও না। ডিম ডজন প্রতি ১৪০/৪৫ টাকা। তরকারির বাজারে তো ১০ টাকার কাঁচা মরিচও দিতে চায় না তরকারিওয়ালা। তবুও মোটামুটি শব্জিটাকে কাছের আত্মীয় মনে হয় যদিও সর্বনিম্ন ৪০/৫০ টাকা। সিলিন্ডার গ্যাসের দাম আগে যেখানে ছিলো ১০৫০ টাকা তো এখন বেড়ে ১৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকা। চালের দোকানে গেলে মন চায় খুদের দাম জিজ্ঞেস করি। মুদির দোকানে গিয়ে শুনি কালকের দাম আর বেঁচে নেই। নতুন আর মুশকিল দামে বিকাচ্ছে পণ্য। রমযান মাস আর ক’দিন পরেই। এখনই ছোলার দাম এক নিঃশ্বাসে শ’ টাকা। খেসারী ৮৫-৯০। ঘরে এসে দেখি নতুন মূল্যে বিদ্যুৎবিল দুয়ারে দাঁড়িয়ে সুসংবাদ দিচ্ছে। কি করবো বলুন! আমরা তো আর রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বাজারের টাকা উসুল করতে পারি না! মানুষ এ নিয়ে হরহামেশা মা-বোন তুলে সরকারের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। কিন্তু সরকারদলীয়রা চুপ। কিরে বাপ, তোরা কি বাজার করিস না! তোদের কি পেট নেই? না কি তোদের আলাদা করে রেশন দিচ্ছে সরকার? চুপ থাকিস কেন? এই কি তোদের জনস্বার্থ? নিশ্চিত করে বলতে পারবো, বাজারে ঢোকার আগে আমার রক্তচাপ আর বেরুনোর পরে রক্তচাপে অনেক তফাৎ। সেটা হাঁটার কারণে নয়, দামের কারণে। তাই ভাবছি, রাজারে যাবার আগে হাসপাতালে যাবো; রক্তচাপ, ডায়াবেটিস—এসব চেক করে দেখতে হবে। নচেৎ মাথা ঘুরে পড়লে ঘর তো খবর-ই পাবে না। তাই চলুন, আগে ডাক্তারের কাছে যাই, পরে বাজারে। এর চেয়ে নিরাপদ উপায় আর কি?
২২.০২.২৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন