ভাবনা-২
প্রচলিত ‘রাজনীতি’ আসলে কি? এক সময় রাজনীতি ছিলো দেশ আর মানুষ-সেবার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। দেশের স্বার্থ রক্ষায়, নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা তৃণমূল পর্যায়ে পৌছে দেয়ার সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিবর্গই রাজনীতি করতেন। তাঁরা রাজনীতি করতেন আত্মসাতের প্রত্যয়ে নয়, সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মহৎ নিয়তে। তাই তাঁরা ছিলেন বরাবরই সম্মানীত, বরণীয়; আজও আছেন। সেদিক থেকে বাংলার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ মজলুম জননেতা মরহুম মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। নিজের খাদ্য পাকাতে মাটির চুলোয় আগুন জ্বালাতে দেখা গেছে--এমন কেউ কি আছেন ভাসানী বিনে? খদ্দরের পান্জাবী, তালপাতার টুপি আর লুঙ্গী পরে অতিসাধারণ বেশভুষায় রাজনীতি আর আন্দোলনের মাঠে তিনি ছিলেন মহানায়ক। কেউ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। আজ ভাসানী যেমন নেই, ভাসানীর রাজনীতিও নেই। এখন রাজনীতি মানে ব্যবসা, প্রতারণা আর নিজের পকেটে মিলিয়ন-বিলিয়ন টাকার বন্দোবস্ত করা। এক সময় দেখতাম, সমাজের সৎ আর নির্ভীক মানুষগুলো পত্রিকা প্রকাশের স্বপ্ন দেখতেন সমাজসেবার মানসে। এখন দু’নম্বরী ব্যবসায়ীরা পত্রিকার মালিক। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে আর বিশেষগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় প্রকাশিত হয় পত্রিকাগুলো। অতীত সময়ে রাজনীতিক আর পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদকেরা সমাজে যে সম্মান পেতেন, এখন তা স্বপ্নের দেশে। আজ যত্রতত্র দেখা যায়, শোনা যায় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হবার বীভৎস চিত্র, বিদেশে বিশাল অর্থ পাচারের কুৎসিৎ সংবাদ। এ সম্পদ আর টাকার মালিক কে বা কারা? সবাই তা জানে। আসল মালিক যাঁরা, মানে জনগণ কখনও সে সম্পদ ভোগ করতে পারে না। জনমানুষ রাষ্ট্রশক্তির সহায়তা পায় না। তাই তাঁরা বঞ্চিত, নিপীড়িত। জনগণের ক’জন সন্তান দেশে লেখাপড়া করে জানেন? সবাই বিদেশের নামিদামি শিক্ষালয়ে। এরাই দেশে এসে নেতৃত্ব দেয়, বিশাল সম্পদের মালিক হয়। তাহলে সর্বসাধারণের জন্য জায়গা থাকলো আর কি? কেবল কেরানিগিরীর চেয়ার? মোট কথা, রাজনীতি এখন উর্বর ব্যবসা যার কোন জবাবদিহিতা নেই। কারণ, জবাবদিহিতা তো এখন অগ্রহণীয়। সরকারের মন্ত্রী যখন কর্মচারীদের বলতে পারেন: ঘুষ খান তো সহনীয় করে খান; তখন কি কিছু বোঝার বাকি থাকে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন