বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

স্থানীয় নির্বাচনের জমা-খরচ

ভাবনা-১৮

কোথায় যাবো বলুন, দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে কিন্তু দলীয়ভাবে। আগে হতো স্বতন্ত্র বা দলনিরপেক্ষ। এ সরকার এসে করে দিলো: সব স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা যাবে। আগে ছিলো বাঘ বনে, এখন এলো লোকালয়ে। দলনিরপেক্ষ স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী যাচাই করার অবাধ সুযোগ ছিলো মানুষের হাতে, এখন দলীয় ছায়ায় সে সুযোগও গেলো হাতছাড়া হয়ে। দলীয় রাজনীতির কলুষতায় কিছুটা হলেও আগে যে সুষম পরিবেশ ছিলো, এখন তা নেই। মারমার-কাটকাট জাতীয় অবস্থা স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে করে রাখলো পিষ্ট। এখন আমরা কী করবো? মানুষটা হয়তো ভালো, হলে কি হবে, তার প্রতীক তো তাকে আমার কাছে থেকে আলাদা করে রেখেছে যদি আমি ঐ দলীয় রাজনীতির সমর্থক না হই। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ বা বিবেচনার সুযোগ কম। বলতে পারেন, দলীয় প্রভাবে ক্ষতি কোথায়? শুনবেন সে কথা? দুনিয়ার অন্য কোথাও কেমন জানি না, এখানে দলীয় মানে জিঘাংসা, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি, খুনোখুনি আারও কতো কি! এক-ই সমাজে বসবাস করি, থাকি, খাই কিন্তু প্রতীক কাঁধে একে অপরকে ধরাশায়ী করতে নিত্য তৎপর। আগে তো স্কুলে রাজনীতি ছিলো না। এখন ছাত্রলীগের কমিটি হচ্ছে, ছোটছোট ছেলেরা যারা উত্তর-দক্ষিণ চেনে না; এখনও মানসকে কলুষ করতে শিখেনি, অভদ্র আচরণে অভ্যস্ত হতে পারেনিতারা দলীয় রাজনীতির স্বাদ পেয়ে বাবার সামনেও মাস্তানী করার সাহস পাচ্ছে, দলের উপরের মহল আশকারা দিচ্ছে। এসবের উদাহরণ কম নয়। পত্র-পত্রিকায় বেরুনো খবর কি কম? এসবে দল মনে করছে, এতে তৃণমূলে দলের প্রভাব বাড়বে; দখল বাড়বে। বিনিময়ে সমাজ যে ভেতর থেকে, একেবারে তলা থেকে ক্ষয়ে যাচ্ছেসে খবর কি আছে? মনে রাখতে হবে, যে যা করায় সেটার মুখোমুখী একসময় নিজেকেও হতে হয়। কেউ রক্ষা পাবে না। আজ যে দল ক্ষমতায় থেকে এসব করাচ্ছে, তারা কি সবসময় ক্ষমতায় থাকবে? তখত বদল হলে কাল যখন অন্যদলের ছেলেরা এসে উল্টাপাল্টা করবে, ভালো লাগবে? ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। বলছিলাম, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে। কালভদ্রে কিছু অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষ ভোট চাইতে আসে। আমার দুঃখ হয়। সমর্থন করতে ইচ্ছে করে ব্যক্তিত্বের দিকে চেয়ে। কিন্তু ঐ যে বললাম, দলীয় পরিচিতিতে মন যায় না। আগে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, আবার এসেছেনতারাও বলছে কাজ করবেন। কিন্তু বিশ্বাসের জায়গাটা কোথায়? গত নির্বাচনে শুনেছি, প্রার্থী দম্ভরেভভরেভভরে বলছেন, ভোট আপনারা যেখানেই দেন সেটা অমুক বাক্সে চলে আসবে। তাহলে আমরা ভোটকেন্দ্রে যাবো কেন?  ’১৪ আর ’১৮-তে তো দেখেছি। যদি বলি স্বতন্ত্রে যান, তারও কি উপায় আছে? এ ওর টাকাতে দাঁড়িয়েছে; ও তো ভোট কাটতে এসেছে ইত্যাদি। বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীনদের না দিলে এলাকায় উন্নয়ন হবে না। তবে আর ভোট দেয়া কেন? ঘরে বসে নিজের অবস্থার উন্নয়নে কাজ করলেই ভালো। চেয়ে-চেয়ে দেখলাম তুমি হয়ে গেলে, আমার করার কিছু ছিলো না।

২৩.০২.২৩   

কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...