ভাবনা-৫
অধুনা বাংলাদেশের নতুন পাঠ্যক্রমে সংযোজিত বিতর্কিত বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা উঠেছে ঢের। সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে কথা উঠছে প্রচুর। সমাজের একেবারে নিম্নস্তরের চায়ের দোকানের টকশো থেকে প্রচারমাধ্যমের টকশো পর্যন্ত কোথাও বাদ নেই। ইতিহাসের নিরিখে, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে সংযোজিত বিষয় নিয়ে বিতর্ক আর সরকারের সমালোচনা আসমান ছুঁবে মনে হয়। আপাতত ইতিহাসের পাঠ সরিয়ে রেখে বিতর্কিত ‘বিবর্তনবাদ’ নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। প্রথমত দেখা যাচ্ছে, লেখা বা সম্পাদনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের ভূমিকা এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া রহস্যজনক। মনে হচ্ছে, কোথাও আড়ালে কোন খেলা হচ্ছে। সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বললেন: যাদেরকে বই তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা সরকারের সুপারিশকে পাত্তা দেননি; সঙ্গতকারণে এমন পরিবেশনা। সম্পাদকেরা ক্ষমা না চেয়ে গাবাঁচানো দুঃখ জানিয়ে কাজ সেরেছেন। এখনও সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে সঙ্গীন বিবেচনা করে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিবর্তনবাদ ডারউইনের অত্যন্ত বিতর্কিত ও অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক একটি উদ্ভাবন। বিজ্ঞানের সাথে এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এ তত্ত্বের মূলকথা হলো, পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ বানরেরই পরবর্তী প্রজন্ম; বর্তমানের মানুষ আদিযুগের কোন মানব বা মানবগোষ্ঠীর পরপ্রজন্ম নয়। এ নিয়ে অনেক গোলমাল হয়েছে অতীতে। যাক, সেদিকে না গিয়ে প্রশ্ন করা যায়, হঠাৎ করে আমাদের সন্তানদের পাঠ্যবইয়ে এ বিবর্তনবাদ ঢোকানো হলো কেন? এর কারণ, গোটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই একটি বিবর্তনবাদের মধ্য দিয়ে একটি বিতর্কিত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। বলাবাহল্য, বাংলাদশের মানুষের নব্বই শতাংশ বিশ্বাসগতভাবে মুসলমান। সঙ্গতকারণে তাঁরা বিশ্বাস করে: মানুষ পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম আ.-র পর্যায়ক্রমিক সন্তান। পবিত্র কুরআন এ বিষয়ে বিশদ বিবরণ দিয়েছে। শুধু মুসলিম বলে নয়, দুনিয়ার হিন্দু, খৃষ্টান, ইহুদী কেউ বলে না: মানুষ বানর বা অন্য কোন পশুর পরপ্রজন্ম। যা বলছিলাম, পাঠ্যবইয়ে বিবর্তনবাদ ঢুকিয়ে বাংলাদেশের উপর একটি রাষ্ট্রীয় বিবর্তনের ধারা প্রয়োগের চেষ্টা হচ্ছে। চেষ্টাটা নতুন নয়, স্বাধীনতার পর থেকে যখন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে তথাকথিত সেক্যুলার বা ধর্মহীন করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয় তখন থেকে। যেখানে নব্বই শতাংশ মানুষ একটি বিশেষ বিশ্বাসনির্ভর দর্শনকে বহন করে সেখানে সে জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রভাব অধিকতর দৃশ্যমান হবে--সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু একটি নেতিবাচকমহল যারা নিজেদেরকে সেক্যুলার বলে দাবি করে, নিরলস চেষ্টায় ব্যাপৃত যেন সেই সংখ্যাগরিষ্ঠের আবহকে ধীরে চলমান একটি বিবর্তনবাদের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন করে শিশু-তরুণ-যুবক প্রজন্মকে এমন এক স্তরে নিয়ে আসা যায়, যেখানে ওদের বিশ্বাস হবে সংশয়পূর্ণ ও বিতর্কিত। তখন তারা নিজেদের মানব-সন্তানের পরিচয় হারিয়ে পশু-সন্তানের পরিচয়ে বড় হবে এবং ধীরেধীরে বিশ্বাসহীন একটি গোষ্ঠীতে পরিবর্তিত হয়ে পশুর মতো আচরণে অভ্যস্ত হতে চাইবে। এটা সেই গন্তব্য যাকে সেক্যুলারাইজেশন বা ধর্মরিপেক্ষকরণ নামে এখন প্রচার চালানো হচ্ছে। একটি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন থেকে এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, তদবির করছে। ভূলবশত বা অসাবধানতাবশত পাঠ্যসূচীতে বিবর্তনবাদ ঢুকে গেছে--এমন সরলীকরণের কোন সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, ছিদ্র ছোট থাকতে বন্ধ করতে না পারলে সেখান দিয়ে এসসময় হাতি প্রবেশ করবে। শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড বলে স্বীকৃত। এখন সে শিক্ষাকে যদি একটি বিশেষমহলের লালসা পূরণের হাতিয়ার করে দেয়া হয় তা হবে জাতি ও মুসলমানদের জন্য বড় বিপদের কারণ।
০৬.০২.২৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন