রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

পাঠ্যক্রমে মগজধোলাই

ভাবনা-১০

অবশেষে সরকার নতুন পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত বিতর্কিত ও সমালোচিত ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দু’টি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া ঘোষণাটি অবশ্যই সময়োপযোগী ও বাহ্যত ধন্যবাদযোগ্য। একটি জাতির অন্যতম প্রাণ হলো তার শিক্ষার উপাদান ও চরিত্র। এটা নির্ভর করে ঐ জাতির বিশ্বাস ও সংস্কৃতির অবয়বের উপর। জাতি ভিন্নভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে হতে পারে; এক-গোষ্ঠী কেন্দ্রিক হতে পারে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সাথে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সহাবস্থানেও হতে পারে। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ একটি ভূখণ্ড যেখানে ৯১.৪ শতাংশ মুসলিম ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বসবাস করে। সঙ্গতকারণে, শিক্ষার চিত্র তৈরি হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস ও সংস্কৃতির আনুপাতিক উপস্থিতির উপর। এখন কেউ যদি তা না করে গরিষ্ঠ-লঘিষ্ঠ সবার উপর সমান হারে বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা চাপিয়ে দিতে চায়--সে কি গ্রহণযোগ্য হবে? এতে তৈরি হবে অস্থিরতা, অসন্তোষ ও অভ্যন্তরীণ অবিশ্বাস যা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হবার পথকে রুদ্ধ করবে। বিতর্কিত বই দু’টি সেদিক থেকে সম্পূর্ণ অন্যায্য। বইয়ের মলাট, ভেতরের উপাদান, উপস্থাপনার ঢং--সবকিছুতে জাতিকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নজরে পড়ে। তাই জাতির সচেতন অংশ প্রতিবাদ করে। আমরা এখনও সন্দিহান যে, সরকার কি আসলে তার অভ্যন্তরীণ নীতিকে পরিমার্জিত করার পথ নিচ্ছে না কি আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসমর্থন হারানোকে এড়িয়ে যেতে উক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলেই বৃক্ষের পরিচয় হবে। ভেতরের কথা আমরা জানি না কিন্তু আকাশের মেঘ ও হাওয়া বুঝে অনুমান করা যায়: বই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পেছনে সরকার-প্রধানের হস্তক্ষেপ থাকতে পারে। ব্যাপার যাই হোক, আপাতত এটাকে সরকারের জনগণের অনুভূতি বুঝতে পারার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা যায়। সন্দেহ নেই, সরকারের ভেতর একটি ক্ষুদ্র ও শক্তিশালী অংশ বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষকরণ বা সেক্যুলারাইজেশন করতে দীর্ঘদিন থেকে সচেষ্ট রয়েছে। এর ফলে বর্তমান সরকারকে জনসাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিশ্বাস ও সংস্কৃতিপ্রশ্নে বিরূপ দৃষ্টিতে দেখে। মানুষ এ ধরণের চেষ্টাকে ধর্মহীনকরণের চেষ্টা বলে সন্দেহের চোখেও দেখে। বিষয়টি যদি সরকার ভালোয়-ভালোয় বুঝতে পারে তাতেই মঙ্গল। আমরা আশা করবো, সরকার তার ভেতরকার অপশক্তিকে বিদূরিত করে নিজেদের সততার প্রমাণ দেবে। আরেকটা কথা এখানে বল হয়। মানুষের অনুভূতি বিবেচনায় সরকার যে সচেতন পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা যদি অতীতে প্রদর্শিত হতো তবে ইতিহাসটাও ভিন্ন হতো। ২০১২ সালে কুখ্যাত ব্লগার রাজিব গং যখন চরম ইসরামবিদ্বেষী হয়ে লেখাজোখা শুরু করে সরকার কিন্তু সে সময় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোভাব বুঝতে পারেনি। ফলে, রাজিবকে সরকারের পক্ষ থেকে “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ” বলে সম্মানিত করা ও তার বাসায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সান্ত্বনা দেয়ার ঘটনায় মুসলিম সমাজ নিজেকে আহত ও অসম্মানিত মনে করে। সেদিন যদি আজকের বই প্রত্যাহারের মতো সচেতনভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অনুভূতিকে অপমান করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো, তবে শাপলার মতো মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা হতো না।  আশা করি ভবিষ্যতে সরকার সচেতন হবে।

১২.০২.২৩      

কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...