শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

স্মৃতি থেকে নেয়া

ভাবনা-৯

বাল্যকালে দেখেছি, ফজরের নামাযের পর বাড়ির প্রায় ঘর থেকে পুরুষের উচ্চকণ্ঠে কুরআন পড়ার ধ্বনি শোনা যেতো; মেয়েরা গুনগুনিয়ে পড়তো। ছোটরা চলে যেতো মক্তবে। সে এখন কেবলই স্মৃতি। তখন এতো সচ্ছলতা ছিলো না গ্রামে কিন্তু শান্তি ছিলো। বিশেষ করে পারিবারিক শান্তি; পারস্পারিক সৌহার্দ্য, বোঝাপড়ার মানসিকতা--এসব ছিলো। অশান্তি যে লেশমাত্র ছিলো না তা নয় কিন্তু সে নগণ্য। এখন খুঁজেও কুরআনের আওয়ায শুনতে পাওয়া যায়--এমন দু’একটি ঘর পাওয়া মুশকিল। শহরের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। এমন দেদার বাসাবাড়ি পাওয়া যাবে যেখানকার মুসলিম ছেলেমেয়েরা কুরআন পড়তে জানে না। আর এটাকে খুব দরকারি বলেও মনে করা হয় না। যে মূল্যে জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনে বাসায় শিক্ষক রাখা হয়, তার সামান্য অংশও কুরআন পড়ানোর হুযুরকে দেয়া হয় না। এর বড়ো কারণ হলো অভিভাবকের অসচেতনতা। ইসলামে মা-বাবার উপর সন্তানের সর্বপ্রথম অধিকার হলো, তার বাবা যেনো একজন সতী-সাধ্বী, ধর্মপরায়ন ও সচেতন মহিলাকে বিয়ে করেন। কারণ, মায়ের কোল থেকেই সন্তান শিক্ষা-গ্রহণ শুরু করে। তাহলে দেখুন, সন্তান জন্মাবার আগেই তার বাবার উপর অধিকার বর্তাচ্ছে। এ অধিকারের কারণেই প্রত্যেক মা-বাবাকে কিয়ামাতের কঠিন দিনে আপন সন্তানের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। পবিত্র হাদীসে এসেছে, অভিযুক্ত সন্তানেরা তাদের পথভ্রষ্টতার জন্য মা-বাবার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবে। তাই বলা হয়, সমাজ সংশোধনের পূর্বশর্ত পরিবার সংশোধন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেককে এবং তার পরিবারের সদস্যদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। কথাগুলো হয় আমরা শোনার সুযোগ পাইনি অথবা ভুলেই গেছি। এর ফলে আমরা আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও শান্তি হারিয়ে ফেলছি। ক’দিন আগে খবরে দেখলাম দেশে বিশেষ করে ঢাকায় বিবাহবিচ্ছেদের হার অনেক বেড়ে গেছে। কারণ বলা হয়েছে, মূলত পারিবারিক অশান্তি। কেন? আপনি দেখবেন, পারিবারিকভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চার অভাব হলে শান্তি থাকে না। আমি বলছি না যে, শতভাগ শান্তি থাকবে; কিছু তো অস্থিরতা থাকবে সময়ে-সময়ে কিন্তু তা সমাধানের পথও মিলবে। স্থায়ী অশান্তি হবে না আল্লাহর রহমতে। এই যে ধরুন সন্তানকে যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে উৎসাহিত করা হয়, শাসন করা হয়; ফজরের নামাযের পর কুরআন পড়তে উৎসাহিত করা হয়, পড়তে না জানলে শিখানোর ব্যবস্থা করা হয়--তাতে পরিবারে প্রশান্তি আসবে, বোঝাপড়া হবে। পুরুষেরা একটু উচ্চ আওয়াজে আর মেয়েরা নিচুস্বরে তিলাওয়াত করবে। অন্তত কুরআন দিয়ে দিনটা শুরু হোক। দেখবেন আপনার অশান্তি স্থায়ী হবে না ইনশা আল্লাহ। কোন পরিবারে এমন ব্যবস্থা নেয়া হলে দেখা যাবে তাদের গুনাহ’র পরিমান কমে যাচ্ছে, গুনাহনির্ভর কাজের দিকে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এতে গুনাহ হ্রাস পেলে অশান্তিও হ্রাস পাবে। কারণ অশান্তি গুনাহ বা পাপেরই পরিণতি। আসুন আমরা ঘরকে আবাদ করি, কুরআনের ধ্বনি ও নামায দিয়ে ধৌত করি।

১০.০২.২৩          


কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...