রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

উগ্রপন্থার দিকবিদিক

ভাবনা-৪

‘উগ্রপন্থা’ বলে একটি কথা আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। এর উল্টোশব্দ বা বিপরীত শব্দ বলে বুঝি--উদারপন্থা। হতে পারে। কিন্তু উদারপন্থা উগ্রপন্থার উল্টোশব্দ হতে পারে, প্রতিষেধক নয়। প্রতিষেধক হলো: মধ্যপন্থা। কথাটি বলছিলাম, আমাদের সমস্যা বোঝাতে। তবে উগ্রপন্থা আর চরমপন্থার মধ্যে আমার কাছে ভিন্নতা আছে মনে হয়। উগ্রপন্থার মাঝে যেমন সবসময় উগ্রতা থাকে তেমনি চরমপন্থার মধ্যে চরম বা চূড়ান্ত হবার পরিণতি বিদ্যমান থাকে। সেদিক থেকে উগ্রপন্থার মধ্যে উগ্রতা বা বাড়াবাড়ি থাকা স্বাভাবিক যা কোনভাবেই গ্রাহ্য নয়। চরমপন্থা তেমন নয়। মানুষ যখন তার কাম্য কোন গন্তব্য অর্জনের জন্য একের পর এক প্রতিকূল পরিস্থিতি মুকাবিলা করতে থাকে শেষচেষ্টা হিসাবে চরমপন্থাকে গ্রহণ করে থাকে। তাই ব্যাখ্যানির্বিশেষে কারও কাছে চরমপন্থা ইতিবাচক, কারও কাছে নেতিবাচক। রোগ থেকে বাঁচার চেষ্টায় একের পর এক অষুধে কাজ না হলে যেতে হয় অপারেশান বা অস্ত্রোপচারে। এটা অবশ্যই চরমপন্থা কিন্তু উগ্রপন্থা নয়। এখানে বাড়াবাড়ি নেই। তেমনি একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উগ্রপন্থা নয়, চরমপন্থা। তাই মুক্তিযুদ্ধকে একটি চরমপন্থী আন্দোলন বললে ভুল হবার কথা নয়। অবশ্য বৃটিশ-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তৎকালীন বাংলায় অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তরের মতো যেসব ‘চরমপন্থী’ দলের কথা উল্লেখ আছে সেগুলোর চরিত্র সর্বাংশে চরম ছিলো না; সাম্প্রদায়িক, হিন্দুত্বনির্ভর ও উগ্রবাদীও ছিলো। আজকে যেমন ভারতের আরএসএস, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ইত্যাদি উগ্রপন্থাকে অনুসরণ করে। ইংরেজিতে কিন্তু চরমপন্থা আর উগ্রপন্থা--উভয়কে Extremism বলে ডাকা হয়। এটা কোনভাবেই সমীচীন নয়। উগ্রপন্থা আর বাড়াবাড়ি অভিন্ন, চরমপন্থার চরিত্র ব্যাখ্যনির্ভর। আমাদের মাঝেও ক্ষেত্রবিশেষে উগ্রপন্থা দেখা দেয় যা আমাদের সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কখনও হিতকর প্রমাণিত হয়নি। বরঞ্চ ক্ষতি করেছে অপূরণীয়। এর মূল কারণ হলো: আমাদের চিন্তার ক্ষুদ্রতা এবং উগ্রতা, চরমপন্থা ও কালের ভিত্তিতে কর্তব্যের আহ্বানকে উপলব্ধি করার ব্যর্থতা। পরিবেশকে সঙ্গী না করে আমরা যে ব্যাখ্যা দাঁড় করাই সেটাকে মুশাওয়ারা বা উদার পরামর্শের ভিত্তিতে সজ্জিত না করে একদর্শী পথ চললে উগ্রপন্থার খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।  আগেই বলেছি, উগ্রপন্থার প্রতিষেধক মধ্যপন্থা যাকে কুরআনের ভাষায় বলা হয়--“সিরাতুল মুস্তাকীম” অর্থাৎ, অকঠিন, অজটিল ও সহজ-সরল পথ। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এই সহজ-সরল পথকেই চিনতে আমাদের জটিলতা অত্যধিক যা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। সঙ্গতকারণে, আমাদের বিপদ সবসময় সীমার উপরে দৃশ্যমান হয়। আমাদের রাষ্ট্রচরিত্র, রাজনীতি, ধর্মচর্চা সর্বক্ষেত্র আজ উগ্রপন্থার ভয়াল থাবার মুখোমুখী। এর একমাত্র প্রতিষেধক অবশ্যই মধ্যপন্থা এবং মধ্যপন্থা।

০৫.০২.২০২৩

কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...