মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

আমেরিকার বিমার

ভাবনা-১১

সম্প্রতি প্রায় সবার অলক্ষে একটি ঘটনা ঘটে গেলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ঘটনার প্রধান চরিত্র মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধি ইলহান ওমর। ইনি ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রতিনিধি পরিষদ নির্বাচনে মিনেসোটা’র একটি আসন থেকে কংগ্রেস-সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম দু’জন মুসলিম মহিলা কংগ্রেস সদস্য হন। ইলহান ওমর তাঁদের একজন। ইলহান ওমরের পরিবার সোমালিয়া থেকে উদ্বাস্তু হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তাঁর জন্ম ১৯৮২ সালের ৪ঠা অক্টোবর। উল্লেখ্য, কংগ্রেস-সদস্য হিসাবে শুরু থেকেই ইলহান ওমরকে ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। কারণ, তিনি বিশ্বাসগতভাবে মুসলিম, গায়ের রঙে কালো এবং পোষাকে হিজাব পরিহিতা। ইসরাঈল এবং ইসরাঈলপন্থী লবি তাঁকে তাঁকে নিয়ে ছিলো সদা উদ্বিগ্ন। ওদের নিয়ে মন্তব্য করার কারণে তাঁকে এন্টি সেমিটিক বা ইহুদীবিরোধী বলে আক্রমণ করতো ডানপন্থী সমালোচকেরা। পরে অবশ্য ইলহান তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। একজন মুসলিম কংগ্রেস সদস্য হিসাবে তিনি ইতোমধ্যে নানা ধরনের হুমকির মুখেও পড়েছেন। টুইন টাওয়ার ধ্বংস নিয়ে ইলহান তাঁর এক বক্তব্যে বলেছিলেন: Some people did something অর্থাৎ, কিছু লোক কিছু একটা করেছে। ২০১৯ সালের ২৩শে মার্চ ইলহান কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স’র সভায় মন্তব্যটি করেন। ২০ মিনিটের ঐ ভাষণে তিনি ইসলামোফোবিয়া থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসবাদী হামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বলেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, টুইন টাওয়ার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের কী ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হয়। তাঁর কথায়, “এই হচ্ছে প্রকৃত সত্য। বহুদিন ধরে আমাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে একটা অস্বস্তি নিয়ে বসবাস করতে হয়েছে এবং সত্যি বলতে কি, আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এই দেশের প্রতিটি মুসলিমেরও তাই হওয়া উচিৎ। ইলহান ওমরের এই ব্ক্তব্য ‘১৯ সালের ৯ই এপ্রিল থেকে বিভিন্নমহলের মনোযোগ কাড়তে শুরু করে। টেক্সাসের এক রিপালিকান কংগ্রেস সদস্য ড্যান ক্রেনশ তার বক্তৃতাকে 'অবিশ্বাস্য' বলে বর্ণনা করেন। এরপর বিষয়টি লুফে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স নিউজসহ অন্যান্য রক্ষণশীল মিডিয়া, তারা এটা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান ইলহান ওমরকে 'অ্যান্টি আমেরিকান' বলেও বর্ণনা করেন। ইলহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ: তিনি টুইন টাওয়ার হামলাকে খাটো করে দেখছেন। এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে নিউ ইয়র্ক পোস্ট। তারা পত্রিকার প্রথম পাতায় নাইন ইলেভেনের হামলার একটি ছবি প্রকাশ করে ওপরে হেডলাইন দেয়: 'হিয়ার ইজ ইয়োর সামথিং।' নিউ ইয়র্ক পোস্টের এই শিরোণাম বিতর্কটিকে আরও তিক্ত করে তোলে। এভাবে সূক্ষ্ম সামপ্রদায়িক কারণে এবং ইহুদী লবির প্রভাবে ইলহান ওমরকে নাজেহাল করা শুরু হয়। এর চূড়ান্ত পরিণতি আসে সম্প্রতি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নবনির্বাচিত রিপাবলিকান সদস্যদের প্রভাবে ইলহান ওমরকে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে। এতে ইলহান ২১৮-২১১ ভোটে হেরে যান। এ ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে তাঁর মন্তব্যের উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য, ইলহান মিনেসোটা থেকে টানা তিনবারের জয়ী ডেমোক্র্যাট সদস্য। বাদ দেওয়ার আগে এক আবেগঘন বক্তব্যে ইলহান ওমর বলেন: কমিটিতে না থাকলেও আমার কণ্ঠ, আমার নেতৃত্বকে চাপা দিয়ে রাখা যাবে না। বলাবাহুল্য, আমেরিকায় ইহুদী লবীর দৌরাত্ম্য অত্যন্ত শক্তিশালী। উপরি হিসাবে আছে, বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। এ রোগ মার্কিন রাজনীতির সুউচ্চ মার্গে দণ্ডায়মান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রশাসন বলছে, তারা এটা নিয়ে কাজ করছে। তবু শত বাঁধা সত্ত্বেও মুসলিম মূল্যবোধ মাথায় নিয়ে ইলহান ওমররা যা করে যাচ্ছেন, তা কখনও ইতিহাস ভুলবে না। মনে করি, বিশ্বের তাবৎ মুসলিম ইলহান ওমরদের বীরত্বগাঁথাকে অনুসরণীয় করে রাখবে। 

১৪.০২.২৩         

কোন মন্তব্য নেই:

Featured Post

জামায়াতে ইসলামীর সাথে কওমীদের ঐক্য কি আদৌ সম্ভব ? ভাবনা-৫০ বাংলাদেশে ইসলাপন্থীদের ঐক্য নিয়ে আলোচনার হায়াত অনেক দীর্ঘ । এক সময় ঐক্যের শে...